ঢাকা,বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪

মহেশখালী-কুতুবদিয়ায় নির্বাচনী হাওয়া লেগেছে

আবদু ছালাম কাকলী: কক্সবাজার জেলার সাগর ও নদী ঘেরা ২টি উপজেলা নিয়ে গঠিত মহেশখালী-কুতুবদিয়া (কক্সবাজার) – ২ আসন নিয়ে আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জনগনের মাঝে চলছে বিভিন্ন জলপনা–কল্পনা। এমনকি রাজনৈতিক নেতাদের টেবিল থেকে শুরু করে চায়ের দোকান পর্যন্ত চলছে নির্বাচনী হাওয়া।

বিভিন্ন জনের মুখে শুনা যাচ্ছে আগামী নির্বাচনে আওয়ামীলীগের টিকেট নিয়ে আসছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আশেক উল্লাহ রফিক, কেন্দ্রীয় সাবেক ছাত্রলীগনেতা ওসমান গণি ওসমান, ড. আনছারুল করিমও বর্তমান জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা। বিএনপি থেকে টিকেট নিয়ে আসছেন সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ, জেলা বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম রশিদ মিয়ার সুযোগ্য পুত্র বধু শামিম মোস্তফা। জাতীয় পাটি থেকে টিকেট নিয়ে আসছেন মরহুম এডভোকেট মদুদ আহামদের সুযোগ্য পুত্র আলহাজ্ব মুহিবুল্লাহ।

আগামী ১১তম সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা বাংলাদেশে চলছে নির্বাচনী হাওয়া। এ হাওয়া এখন দেশের শহর থেকে গ্রাম-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে। হাওয়া লেগেছে রাজনৈতিক নেতাদের মুখ থেকে গ্রামের খেটে খাওয়া লোকজনের মুখেও। বর্তমানে বাংলাদেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী গত ২০১৭ সালের শুরু থেকে। তবে প্রাথমিক ভাবে কাজ শুরু করেছে ২০১৫ সাল থেকে। এই মাতারবাড়ীতে একটি প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে ১৪১৪ একর জমি। এছাড়া ঐ প্রকল্পে খাস জায়গা রয়েছে প্রায় ৫শত একর। এ প্রকল্পে ২ ইউনিটের মাধ্যমে ১২শত মেগোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে। অপরদিকে আরো ১২শত একর জমি অধিগ্রহণ করে চারদিকে কাটা তারের-বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। এ প্রকল্প থেকে ৭শত মেগোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ২টি প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হলে দেশের মধ্যে আর বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকবেনা বলে আশা করেন বিদ্যুৎও জ্বালানী মন্ত্রনালয়। এছাড়া ধলঘাটায় ইকোনোমিকজোন করার জন্য ভারত ঘোনাসহ আশে-পাশের প্রায় সাড়ে ৭শত একর জমি অধিগ্রহণের জন্য ৬ধারা নোটিশ ইতি মধ্যে সংশ্লিষ্ট এলো অফিস থেকে জারি করা হয়েছে। শুধু তা নয় ধলঘাটায় গ্যাস কোম্পানী ও গ্যাসের লাইন স্থাপনের জন্য জেটিসহ সড়ক নির্মাণের বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করেছে। অন্যদিকে মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্র বন্দও স্থাপনের জন্য আগামী মে মাসের ৭ তারিখ টেন্ডার আহবান করারও ইঙ্গিত দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সাফকথা মহেশখালী-কুতুবদিয়া ২ উপজেলার মধ্যে চলছে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড। জমি অধিগ্রহণ করায় মাতারবাড়ীর প্রায় ৭ হাজার লোক এখন বেকার হয়ে পড়েছে। কিন্তু বহিরাগত লোকজন এনে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে কাজ করায় স্থানীয় লোকজন ক্ষুদ্ব হয়ে বহুবার মানব বন্ধনসহ জেলা প্রসাশকের মাধ্যমে প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর স্বারক লিপি দিলেও এখনো স্থানীয়রা নিয়োগ পায়নি। এতে মাতারবাড়ী এবং ধলঘাটবাসী বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আশেক উল্লাহ রফিকের উপর ক্ষুদ্ব। শুধু তা নয় ১৪১৪ একর কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের এরিয়ার জমিনের মালিকরা এখনো ২০% লোক তাদের জমিনের টাকা পায়নি। অন্যদিকে উত্তর দিক থেকে অধিগ্রহণ করা ১২শত একর কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের এরিয়ার জমিনের মালিকরা ৮০% লোক তাদের জমিনের মূল্য পায়নি। ফলে বর্তমান সংসদ সদস্যের উপর মাতারবাড়ীও ধলঘাটাবাসী ক্ষুদ্ব ছাড়াও ক্ষোভ ঝাড়ছে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের উপর। এ ক্ষোভ এখন পুরো মাতারবাড়ী ছাড়াও কক্সবাজার শহরে পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে এসব নিরসন না হলে টুঙ্গি পাড়া নামে খ্যাত মাতারবাড়ীও ধলঘাটায় আওয়ামীলীগের সমর্থন জিরো পয়েন্টে রয়েছে। তবে এসব নিরসনের জন্য কেন্দ্রীয় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ওসমান গণি ওসমান সাধ্যমত চেষ্টা করলেও বর্তমান সংসদ সদস্য তা বিরোধীতা করায় উক্ত সমস্যা নিরসন হচ্ছে না। অপরদিকে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা ও ড. আনচারুল করিম লোকজনের সাথে পানি আর তেলের মত পার্থক্য থাকায় উক্ত ২ নেতার নাম রাজনৈতিক নেতাদের টেবিলে শুনা গেলেও মাঠে ময়দানে শুনা যাচ্ছেনা। মাঠে-ময়দানে বর্তমানে শুনা যাচ্ছে বর্তমান সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক ও কেন্দ্রীয় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ওসমান গনি ওসমানের। মাঠে ময়দানে নির্বাচন নিয়ে বিভিন্নজনের সাথে আলাপ করে জানা যায়, আলমগীর ফরিদ ২বার বিএনপি’র টিকেট নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় মহেশখালী-কুতুবদিয়ায় রাস্তা-ঘাটও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আমুল পরিবর্তন এনেছিল। ঐ সময় ধানের শীষের বিপ্লব ঘঠেছিল মহেশখালীও কুতুবদিয়ায়। কিন্তু আলমগীর ফরিদ ১/১১ সময় জেলে যাওয়ায় ২০ দলীয় জোট থেকে জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় নেতা এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদকে প্রার্থী দিলে বিএনপি’র সমর্থিত লোকজন ২০ দলীয় প্রার্থী হিসেবে হামিদুর রহমান আযাদকে বিপুল ভোটে বিজয় করেন। তিনি সংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর রাজনীতি মাঠ উত্তপ্ত থাকায় তেমন উন্নয়ন করতে পারেনি উক্ত সাংসদের নির্বাচনী এলাকায়। ফলে আগামী নির্বাচনে আলমগীর ফরিদকে প্রার্থী দিলে বিজয়ের সম্ভাবনা বেশী। কারণ হিসেবে জানা যায়, গত ১০ বছর যাবৎ বর্তমান কমিটিতে থাকা মহেশখালী-কুতুবদিয়ার বিএনপি’র নেতারা দলকে কোন ধরণের সাজাতে পারেনি। সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ বর্তমান কমিটি। মহেশখালীতে যা কিছু মিটিং, মিছিলও সমাবেশ হয়েছে তা ও আলমগীর ফরিদের নেতৃত্বে। মুদ্দা কথা ২০ দলীয় জোটে আলমগীর ফরিদের বিকল্প নেই। ভোটারদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, মহেশখালী-কুতুবদিয়ায় জাতীয় পাটি নির্বাচন করা হবে বোকামী। কারণ বর্তমানে ২ধারায় রাজনীতি চলছে পুরো বাংলাদেশে। এ হিসেবে জাতীয় পাটি থেকে প্রার্থী দিতে হলে জনগণের উপকার করেছে ও ভবিষ্যতে করবে এ ধরণের প্রার্থী দিলে জাতীয় পাটির নির্বাচনী হাওয়া লাগার সম্ভাবনা রয়েছে। এবার জনগণ অধিক আগ্রহে বসে রয়েছেন, কে আসছেন দলীয় টিকেট নিয়ে মহেশখালী-কুতুবদিয়ায়।

পাঠকের মতামত: