গোয়াতে ব্রিকস ও বিমস্টেক আউটরিচের প্রাক্কালে বাংলাদেশ জানিয়েছে, মিয়ানমারের মধ্যে দিয়ে সড়কপথে সংযোগ স্থাপন করে থাইল্যান্ড তথা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা সম্মেলনে তাদের একটি বড় লক্ষ্য হবে।
এই মুহুর্তে ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ডের মধ্যে দিয়ে যে ত্রিদেশীয় হাইওয়ের পরিকল্পনা চলছে, বিমস্টেকের মাধ্যমে বাংলাদেশকেও তাতে যুক্ত করার ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই আউটরিচে যোগ দিতে আগামিকাল গোয়ায় আসছেন – এবং বাংলাদেশের কূটনৈতিক সূত্রগুলো পরিষ্কার করে দিয়েছে আঞ্চলিক কানেক্টিভিটিকে আরও প্রসারিত করাই হবে গোয়াতে তাদের প্রধান লক্ষ্য।
বিমস্টেক কথাটার মধ্যেই আছে মাল্টি-সেক্টোরাল বা বহুমাত্রিক সহযোগিতার অঙ্গীকার – কিন্তু গোয়ার আউটরিচে তার মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে কানেক্টিভিটিকে।
এ বিষয়ে আরো পড়ুন : পাকিস্তানকে ফেলে বিমস্টেক কি সার্কের জায়গা নিচ্ছে?
ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলি বলছেন, দক্ষিণ এশিয়াতে তারা ভারত-নেপাল-ভুটানের সঙ্গে মিলে যে সংযোগ গড়ে তুলছেন – এবারে বিমস্টেকের মাধ্যমে সেটাকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে নিয়ে যাওয়ার সময় এসেছে।
সম্মেলনের আয়োজক দেশ ভারতও বলছে, বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের কানেক্টিভিটি অচিরেই একটা নতুন উচ্চতায় পৌঁছতে যাচ্ছে – এবং খুব শিগগিরি মিয়ানমারও এই যোগাযোগের বৃত্তে সংযুক্ত হবে।
দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক সচিব অমর সিনহার কথায়, “১৯৬৫র আগে ভারত ও পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে যতগুলো যোগাযোগের মাধ্যম ছিল তার সবগুলোই একে একে আবার চালু করা হচ্ছে। নদীপথগুলো ইতিমধ্যেই কাজ করছে, আগরতলা-আখাউড়া রেলপথও চালু হওয়ার অপেক্ষায়।
“এরই মধ্যে মিয়ানমার হয়ে কালাদান মাল্টিমোডাল ট্রানজিট রুটের কাজও ঝড়ের গতিতে এগোচ্ছে, বছরতিনেকের মধ্যে সেখানে মিজোরাম অবধি রাস্তাও তৈরি হয়ে যাবে। এই সব প্রকল্পের অর্থায়নে সময় লেগেছে, কিন্তু ২০১৮-১৯র মধ্যে এগুলো সবই কিন্তু বাস্তবায়িত হয়ে যাবে।” বলছেন মি. সিনহা।
বাংলাদেশ-মিয়ানমার কিংবা ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত বরাবর দক্ষিণ এশিয়া আর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে এতদিন যেন একটা অদৃশ্য বাধার প্রাচীর ছিল – যে কোনও আন্তর্জাতিক সড়ক তৈরির প্রস্তাব ওইখানে এসে আটকে যেত।
কিন্তু হাই কমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলি বলছেন, বিমস্টেক এখন সেই দেওয়ালটাকে ভাঙার চমৎকার সুযোগ এনে দিয়েছে।
তার এই বক্তব্যের রেশ ধরে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও বলছে – অবকাঠামোগত ও ডিজিটাল, দুধরনের কানেক্টিভিটি তৈরির জন্যই তারা বিমেস্টেকের সদস্যদের সঙ্গে সক্রিয় তৎপরতা চালাচ্ছেন।
সেক্রেটারি (ইস্ট) প্রীতি শরণের কথায়, “যেহেতু বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয়েই বিমস্টেকের সদস্য, ফলে তাদের দুজনের ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে আমরা এই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। ভারত-মিযানমার-থাইল্যান্ডের মধ্যেকার ত্রিদেশীয় হাইওয়েকেও দুদিকে আরও সম্প্রসারিত করার কথাও ভাবা হচ্ছে। আসলে কানেক্টিভিটি হল এমন একটা অবকাঠামো যা হয়তো চোখে দেখা যায় না – কিন্তু একটা অঞ্চলের প্রবৃদ্ধি বা উন্নয়নে সেটা বিরাট ভূমিকা রাখে।”
ফলে কানেক্টিভিটি বলতে এখানে শুধু নতুন রাস্তা, নতুন সেতু বা জলপথের কথাই বলা হচ্ছে না – একটা দেশ থেকে আর একটা দেশে পণ্য ও যাত্রীদের মসৃণ, অবাধ যাতায়াতের অঙ্গীকারও সেখানে নিহিত আছে।
গোয়াতে বিমস্টেক আউটরিচ এমন একটা অঞ্চলে সেই কানেক্টিভিটির স্বপ্ন দেখাচ্ছে যা আগে কখনওই দিনের আলো দেখেনি।
পাঠকের মতামত: