স্টাফ রিপোর্টার, চকরিয়া :: শেখ হাসিনার নৌকাকে হারিয়ে দলের বিদ্রোহী ও বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে দফায় দফায় বৈঠক করছেন তারা। তৃতীয় দফা ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহীদের কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করায় বেশিরভাগ নৌকার প্রার্থী বিজয় হয়েছিলো। কিন্তু চতুর্থ দফা ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহীদের ব্যাপারে কোনধরণের সিদ্বান্ত না নেওয়ায় তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। আগামী ২৬ ডিসেম্বর ৮ ইউপি নির্বাচনে প্রভাবশালী নেতার অনুগতদের জেতাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
এদিকে নৌকাকে পরাজিত করতে বিদ্রোহী প্রার্থীরা এখনো মাঠে রয়েছেন। তাদের কারণে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন বলে জানান স্থানীয় ভোটাররা। এতে বিপাকে পড়েছেন মূল ধারার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
জানা যায়, কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ৪র্থ দফায় ৮টির ইউপির মধ্যে সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত র্বর্তমান চেয়ারম্যান আজিমুল হক বিনা প্রতিদ্ব›দ্বীতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে ওই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হচ্ছে না। উপজেলার বাকী ৭ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা প্রতিদ্ব›দ্বীতা করছেন। কিন্তু ওইসব ইউনিয়নে বিদ্রোহীদের বহিস্কার বা অব্যাহতি না নেওয়ায় বেকায়দায় পড়েছেন নৌকার প্রার্থীরা।
এরমধ্যে ডুলাহাজারা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন শাহনেওয়াজ তালুকদার। সেখানে দলের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন যুবলীগ নেতা হাসানুল ইসলাম আদর, ইউনিয়ন আ.লীগ নেতা কলিম উল্লাহ কলি। চিরিঙ্গা ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন শাহনেওয়াজ রুমেল, বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন ও চিরিঙ্গা ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি জামাল হোসেন চৌধুরী।
হারবাং ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন মেহেরাজ উদ্দিন মিরাজ, সেখানে বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন উপজেলা আ.লীগ সদস্য ছৈয়দ নূর, ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম মিরানের ছোট ভাই জাহেদুল ইসলাম, একইভাবে বমুবিলছড়ি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন মনজুরুল কাদের, বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন ইউনিয়ন আ.লীগ নেতা কফিল উদ্দিন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের এক দায়িত্বশীল নেতা নাম প্রকাশ না করে বলেন, চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম তার অনুসারী ফাঁশিয়াখালী ইউনিয়নে হেলাল উদ্দিন হেলালী, চিরিঙ্গা ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী জামাল হোসেন চৌধুরী ও ডুলাহাজারা ইউনিয়নে যুবলীগ নেতা হাসানুল ইসলাম আদরকে জেতাতে কাজ করে যাচ্ছেন।
একইভাবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী খুটাখালী ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী মো. বেলাল আজাদ ও ডুলাহাজারা ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী শাহনেওয়াজ তালুকদারের পক্ষে প্রচার প্রচারণা চালালেও নিজ ইউনিয়নে তার ছোট ভাই নাছির উদ্দিন চৌধুরী স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্ব›দ্বীতা করছেন। এই দুই নেতা অন্য নৌকার প্রার্থীকে জেতাতে গণসংযোগ বা সভায় যোগ দিচ্ছেন না।
একইভাবে চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদীও নিজের বলয়ের একটি গ্রুপ নিয়ে তার অনুসারীর পক্ষে ভোটের মাঠে রয়েছেন। তিনিও কলকাড়ি নাড়ছেন তার অনুসারীদের বিজয়ী করতে।
এতে উপজেলা আওয়ামী লীগের দ্বিধা বিভক্তির কারণে নেতাকর্মীরা বেকায়দায় পড়েছেন। জেলা ও উপজেলা আওয়ামীলীগের একটি পক্ষ নৌকার প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন। কিন্তু বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
এব্যাপারে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, চতুর্থ দফা ইউপি নির্বাচনে যারা নৌকার বিরোধীতা করছেন তারা কোনদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্মী হতে পারে না। তারা শুধু নৌকাকে ডুবাতে চায়। বিদ্রোহীদের ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে বহিস্কারের সিদ্বান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
পাঠকের মতামত: