ঢাকা: বিডিআর সদস্যরা আগে বাঘ ছিল এখন বিড়াল হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, “আজকে বিডিআর নেই। নামও বদলে দেয়া করা হয়েছে। আমি বিডিআরই বলে যাব। এরা এক সময় বাঘ ছিল এখন বিড়াল।”
রাজধানীর বনানীতে ‘হোটেল সেরিনা’ মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে আয়োজিত এক ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বৃহস্পতিবার এ কথা বলেন খালেদা জিয়া। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল এ ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে।
দেশ রক্ষায় দেশের মানুষকে টাইগারের ভুমিকায় আসার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “আমি আপনাদের সঙ্গে সব সময় আছি, থাকব। রাস্তায় যেতে বললে এখনো রাস্তায় নামার মতো সাহস ও ক্ষমতা রাখি।”
বিডিআরের ৫৭ জন অফিসারকে শেষ করে দেয়া হয়েছে। বাকিগুলো অবসরে পাঠানো হয়েছে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, “তাদের হাতে বন্দুক আছে কিন্তু গুলি মারে না। দেশের মানুষকে বললে গুলিটা পট করে চালিয়ে দেবে। কিন্তু যদি বলেন, শক্র বার্ডারে লোক ঢুকে গেছে.. সীমান্তে কেন গুলি মারতে পার না। মায়ানমারের মতো দেশ আমদের আকাশ সীমা লঙ্গন করে। হেলিকাপ্টার নিয়ে ঘুরে কেন একটা গুলি মারতে পারে না? বিডিআর আজকে বাঘ থেকে আজে বিড়াল হয়েছে।”
ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে খালেদা বলেন, “সারাদেশের মানুষ আজকে বিড়াল বানিয়ে রাখতে চায়। আর তিনারা, আজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্য বাঘ, সিংহ সব কিছুই হতে চায়। কিন্তু এই টাইগারগুলো কোথায় গেল, আজকে সবাইকে টাইগারের ভূমিকায় আসতে হবে। লায়নের ভূমিকায় আসতে হবে। তাহলেই দেশেটা রক্ষা করা যাবে। আসুন দেশের অনেক ক্ষতি হয়েছে, অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। আর সহ্য করা যায় না।”
উপস্থিত সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “বিডিআর হত্যাকাণ্ডের কথা জানে না। তারা কেন এগুলো নিয়ে কথা বলে না। কেউকে এ ঘটনা নিয়ে কথা বলে না। জোরে কথা বলেন হাসিনা ক্ষমতায় আসার এক মাসের মধ্যে এ ঘটনা ঘটেছে। এর কি কোনো তদন্ত হয়েছে? কোনো তদন্ত হয়নি। কোনো বিচার হয়নি। আমরা জানি। সাহস থাকলে এগুলো বলা উচিৎ। যদি সাহস থাকে এগুলো বলবেন।”
ভারতকে ট্রানজিট দেয়া প্রসঙ্গে বিএনপি প্রধান বলেন, “যমুনা সেতুতে ৭০০-৮০০টাকা দিতে হয়, বাস, ট্রাকের জন্য আলাদা ফি নির্ধারণ করা আছে। অথচ ১৯৫ টাকায় যে ট্রানজিট দেয়া হলো এটা লজ্জার, এটাকে দয়া ও বলা যেতে পারবে। আজকে বাংলাদেশে নিজস্বতা মান সম্মান নিজস্ব কোনো সক্রিয়তা স্বাধীনতা নেই।”
মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আপানারা যুদ্ধ করেছিলেন দেশে গণতন্ত্র, ন্যায় বিচার, সুশাসন, সকলের সমান অধিকারের জন্য। আজকে দেশে কোনোটাই নেই। দেশে চলছে একব্যক্তির শাসন।”
খালেদা বলেন, “স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠনের করার কথা বলা হয়েছে, কয়েকজন ব্যক্তির নাম বলা হয়েছে। এছাড়াও আরো অনেক ব্যক্তি আছে। কিন্তু এটাও ধরে নিতে তারা কি কাজগুলো নিজ উদ্যোগে করেছেন নাকি কারো নির্দেশে করেছে। তারা কারো নির্দেশেই করেছে। কাজেই সে তো বাদ যেতে পারে না। এগুলো ভুলে যেতে হবে, আমরা ভুলে যেতে চেয়েছিলাম।”
খালেদা জিয়া বলেন, “মুসলাম, হিন্দু সবাই এই আওয়ামী লীগ দ্বারা নির্যাতিত। সকলেই আজকে আওয়ামী লীগের হাত থেকে মুক্তি চায়, দেশে শান্তি, উন্নয়ন, গণতন্ত্র, কথা বলার অধিকার, বাকস্বাধীনতা চায়, আজকে কোনোটাই নেই।”
তিনি বলেন, “আমি কথা বলতে চাই, ভয় পাই না, সংবিধানের কথা বলব। তার আগে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা দেশকে স্বাধীন করেছি অন্য কারো হাতে তুলে দেয়ার জন্য নয়।”
‘দেশ পুলিশি রাষ্ট্র হয়ে গেছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আজকে নিজের আত্মীয় স্বজনদের মারছে। পুলিশ র্যাব দিয়ে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। গণঅভিযানের নামে ১৬ হাজার লোক কারাগারে ঢুকিয়েছে। এর মধ্যে ৪ হাজার বিএনপির নেতাকর্মী আছে।”
খালেদা জিয়া বলেন, “ডা.জাফরুল্লাহ বিভিন্ন উপদেশ দেন, কিন্তু সব কথা রাখতে পারি না। আমি বলব সবাইকে নিয়ে আসেন আমি কথা বলব, সবার কথা শুনবো। সেখানেই বসতে চান আমি বসব, কথা বলতে রাখি আছি। কারণ আমাদের সমানে কাজ হচ্ছে দেশটাকে রক্ষা করা।”
বুড়িগঙ্গা শেষ হয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “পানি নেই। আমার কারো দয়া চাচ্ছি না। ন্যায্য অধিকারটা চাচ্ছি। আমাদের যকতটুকু প্রাপ্ত সেটা চাচ্ছি।”
মামলা সম্পর্কে খালেদা বলেন, “হাসিনার ১৫টি মামলা উঠে গেলে, হাসিনার মামলা উঠে গেলে আমার মামলাও উঠতে হবে। আমি কোনো অন্যায়, অবিচার করিনি। তাই আমি বলছি দেশে কোনো ন্যায় বিচার নেই।”
এর আগে ২০ দলীয় জোট শরিক এলডিপি প্রধান কর্ণেল(অব.) অলি আহমদ বলেন, “দেশের মানুষকে বিপদে ফেলেছে। তাদের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিচার করতে হবে।” প্রধান নির্বাচন কমিশনসহ বিচারপ্রতি এবিএম খায়রুল হকের বিচার দাবি করেন।
গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বিএনপির প্রধানের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “এখণ দেশে চলছে একব্যক্তির কথায়। আপনাকে এটা পরিষ্কার করতে হবে। সংবিধান সংশোধন করে রাষ্ট্রপ্রতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় মধ্যে ভারসাম্য আনতে হবে। আরা আপনার দলের মধ্যে গণলতন্ত্র আনতে হবে।”
তিনি বলেন, “দেশের অন্তত ৮ কোটি মানুষ আপনার মাধ্যেমে পরিবর্তন চায়। বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য সংখ্যা্ ২০ করে এর মধ্যে ১৫ জন নির্বাচিত এবং ৫জন আপনি নিজে নিয়োগ দিবেন এটা আমার প্রস্তাব। এভাবে সারাদেশের জেলাকমিটিগুলো নির্বাচনের মাধ্যমে করলে ভালো হবে।”
মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজীজ উলফাতের সভাপতিত্বে ইফতার মাহফিলে যোগ দেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মোশাররফ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর(অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মেজর জেনারেল(অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতিক, কর্ণেল(অব.) মোদাচ্ছের, কর্নেল (অব.) জয়নাল, মেজর(অব.) আইন উদ্দিন।
এছাড়া অর্থনীতিবিদ মাহবুব উল্লাহ ইফতার মাহফিলে যোগ দেন। বিএনপির নেতাদের মধ্যে আরো যারা ইফতার মাহফিলে যোগ দেন- শামছুজ্জামান দুদু, খায়রুল কবির খোকন, সাদেক খান, শহিদুল ইসলাম মিলন, সাবেক ছাত্রনেতা আতাউর রহমান ঢালী।
পাঠকের মতামত: