ডেস্ক নিউজ- অর্ধেক সাজা ভোগ করার পর সাজার বাকি মেয়াদ বাড়িতে থেকেই কাটাতে পারবে নারী কয়েদিরা। শর্ত সাপেক্ষে তাদের এ সুবিধা দিতে এরই মধ্যে একটি বিধিমালার খসড়া তৈরি করা হয়েছে।
ওই খসড়া অনুযায়ী বাড়িতে থেকে অর্ধেক সাজা ভোগ করার জন্য বিশেষ শর্তে মুক্তি পাবে নারী কয়েদিরা। মুক্তি পাওয়ার পর প্রথম দুই মাস ১৫ দিন অন্তর ওই কয়েদিকে পর্যবেক্ষণ করবেন সংশ্লিষ্ট প্রবেশন অফিসার। দুই মাস পর থেকে শর্ত পালন করে সাজার বাকি মেয়াদ বাড়িতে বা নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে থেকে পার করতে পারবে কয়েদি। মুক্তি পাওয়ার পর কোনো নারী চাইলে আবাসিক ঠিকানা পরিবর্তন করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রবেশন অফিসারকে নতুন ঠিকানার তথ্য জানাতে হবে। তবে বিশেষ সুবিধায় মুক্তি পাওয়া কয়েদি শর্ত পালন না করলে তার সুবিধা বাতিল করতে পারবে সরকার।
‘কারাগারে আটক সাজাপ্রাপ্ত নারীদের বিশেষ সুবিধা বিধিমালা, ২০১৮’ নামে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা ওই খসড়া সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতে পাঠানো হয়েছে মতামতের জন্য। তাদের মতামতের ভিত্তিতে আন্ত মন্ত্রণালয় সভা করে চূড়ান্ত করার পর সেটি জারি করা হবে। ২০০৬ সালে পাস হওয়া ‘কারাগারে আটক সাজাপ্রাপ্ত নারীদের বিশেষ সুবিধা আইন, ২০০৬’-এর আওতায় এ বিধিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) রূপণ কান্তি শীল এ প্রসঙ্গে কালের কণ্ঠকে বলেন, বিধিমালার খসড়ার ওপর মতামত চেয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আন্ত মন্ত্রণালয় সভায় চূড়ান্ত করার আগ পর্যন্ত এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা সম্ভব নয়। নারী কয়েদিদের জন্য বিভিন্ন উন্নত দেশে বিশেষ সুবিধা থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাশের দেশ ভারত ও শ্রীলঙ্কায়ও এ ধরনের ব্যবস্থা আছে। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
আইন অনুযায়ী, কয়েক ধরনের নারী কয়েদি এ সুবিধা পাবে না। তারা হলো মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত, যেকোনো অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে দণ্ডিত কয়েদি এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইন, অস্ত্র আইন ও মাদকদ্রব্যসংশ্লিষ্ট আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধের দায়ে দণ্ডিত কয়েদি।
খসড়া বিধিমালায় বলা হয়েছে, বিশেষ সুবিধায় মুক্তি পেতে নারী কয়েদিদের আবেদন করতে হবে। যারা সুবিধা পাওয়ার যোগ্য তাদের প্রত্যেকের জন্য বিশেষ সুবিধার আলাদা পরিকল্পনা প্রণয়ন করবেন প্রবেশন অফিসার। প্রত্যেক কারাগারে এক বা একাধিক প্রবেশন অফিসার নিয়োগ দেবে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। যথাসম্ভব নারীদের প্রবেশন অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে। আবেদনকারী কয়েদির অতীত পারিবারিক ইতিহাস, বর্তমান মনোসামাজিক ও আবেগীয় অবস্থা, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা, কর্মোদ্দীপনা, কর্মদক্ষতা, প্রবণতা ইত্যাদি বিবেচনা করবেন প্রবেশন অফিসার। তিনি এসব পরিকল্পনা জেলা কমিটি বা জাতীয় কমিটির কাছে পাঠাবেন।
জাতীয় বা জেলা কমিটির কাছ থেকে সুপারিশ পাওয়ার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রশাসনিক আদেশ জারি করে তার অনুলিপি কারাগার কর্তৃপক্ষ ও প্রবেশন অফিসারের কাছে পাঠাবে। সংশ্লিষ্ট কয়েদি তখন প্রবেশন অফিসারের মাধ্যমে কারাগার কর্তৃপক্ষের কাছে মুচলেকা দাখিল করবে। খসড়া বিধিমালার ৩ ধারায় বলা হয়েছে, কারাগার কর্তৃপক্ষ মুচলেকা সংরক্ষণ করে প্রবেশন অফিসারের তত্ত্বাবধানে বিশেষ সুবিধার আওতায় কয়েদিকে শর্তাধীন মুক্তি বা নির্ধারিত বিশেষ সুবিধা দেবে।
খসড়া বিধিমালার ১১ ধারায় বলা হয়েছে, বিশেষ সুবিধার আওতায় মুুক্তি পাওয়া নারী কয়েদি যে জেলায় অবস্থান করবে ওই জেলা বা উপজেলার প্রবেশন অফিসার তাকে পর্যবেক্ষণে রাখবেন। ১১(৩) ধারায় বলা হয়েছে, বিশেষ সুবিধার আওতায় আসা নারীকে প্রথম দুই মাসে ন্যূনতম ১৫ দিনে একবার এবং পরে শর্তে উল্লিখিত সময়ে পর্যবেক্ষণ করবেন প্রবেশন অফিসার। তিনি মুক্তি পাওয়া কয়েদিকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও নির্দেশনা দেবেন এবং প্রত্যেক নারীর নথিতে তা লিখে রাখবেন।
বিশেষ সুবিধায় মুক্তি পাওয়া নারী কয়েদিরা যাতে উপার্জনমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারে, সে জন্য কারাভোগকালে তাদের বিভিন্ন রকম বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ ও অন্যান্য সুবিধা দেওয়া হবে। কারাগারের ভেতরে নারী কয়েদিদের জন্য ব্লক বা বাটিক, সূচিশিল্প, হেয়ার কাটিং, বাঁশ ও বেতের কাজ, দর্জিবিজ্ঞান, কাপড়ের ফুল তৈরি, বিউটিফিকেশন, নিটওয়্যারিং, এমব্রয়ডারি, কারচুপি ও জরি চুমকি, কম্পিউটার অপারেটিং, গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন ও রন্ধনশিল্পের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। বিশেষ সুবিধায় মুক্তি পাওয়ার পর সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তির সহায়তায় তাদের জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেবে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
পাঠকের মতামত: