এম.আর মাহমুদ, চকরিয়া ঃ
ডাক্তার আসার পূর্বেই যদি রুগী মারা যায় তখন রোগীর স্বজনেরা বিষয়টি সহজ ভাবে মেনে নিতে পারেনা। অথচ মানুষ মরণশীল। জন্মিলে মরিতে হবে। নদীর পাড়ে যারা বসবাস করে তারা ভাঙ্গনের শিকার হবে। যা পূর্ব দিকে সুর্য্য উদিত হয়ে পশ্চিমে যেমন অস্ত যায় তেমনি বাস্তব। চকরিয়া উপজেলার পুরানো একটি ঐতিহ্যবাহী ইউনিয়ন কাকারা। যেই ইউনিয়নের প্রাণকেন্দ্র প্রপার কাকারা। নদী ভাঙ্গনের কারনে প্রপার কাকারার একটি অংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে ব্লক বসানোর কাজ করায় এ অংশের ভাঙ্গন ৮০ ভাগ বন্ধ হয়েছে। ফলে কাকারার অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও বিশাল জনবসতী পুর্ণ পাড়াটি রক্ষা পেয়েছে। তার পরও কাকারার মানচিত্র থেকে অনেক অংশ কমে গেছে। এই ইউনিয়নের প্রাপার কাকারার সকলেরই একটি পরিচিত মঈনা পুকুর এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে কয়েকযোগ আগে। নতুন প্রজন্ম এ নামের সাথে পরিচিত হলেও পুকুরের অস্তিত্ব দেখেনি। চকরিয়া সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা কাকারা ইউনিয়ন কাউন্সিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট মরহুম মোস্তক আহমদ চৌধুরীর স্মৃতি বিজড়িত গ্রামের বাড়ী নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তারপরও স্ব-মহিমায় তাদের পরিবারের অবদানে প্রতিষ্ঠিত কাকারা উচ্চ বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ ও এলজিইডির সড়কটি নদী ভাঙ্গনের শিকার হতে হতে লাবেজান অবস্থায় স্বচল আছে তবে কতদিন থাকে তা আল্লাহ রব্বুল আলামীনই জানে। চাটগাইয়া একটি প্রবাদ এখানে না বললে যথার্থ হয়না “হিন্দুর দাড়ী, মুসলমানের নারী, খালকুইল্যা বাড়ী, মুরাকুইল্যা গাই” এই চার জাতের বিশ্বাস নাই। তার ব্যাখ্যা হিন্দু সম্প্রদায়ের যে সমস্ত ব্যক্তি দাড়ী রাখে তা যে কোন সময় ছেটে ফেলতে পারে। আর মুসলমান বিবাহিত নারীকে তিন তালাক দিলেই চিরতরে বিচিছন্ন হয়ে যায়। অপরদিকে নদীর পাড়ের বাড়ী যে কোন সময় ভাঙনের শিকার হতে পারে। অপরদিকে জঙ্গলের পাশের গাভী যে কোন সময় বন্যপ্রাণীর আক্রমনের শিকার হয়ে প্রাণ হারাতে পারে যে কারনে পন্ডিত ব্যক্তিরা এই প্রবাদটি প্রচলন করেছে বলে আমার ধারনা। বর্ষায় নদীতে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়। যা চিরন্তন সত্য। তবে নদী ভাঙন রোধ করতে সরকার পানি উন্নয়ন বোর্ড নামক একটি সরকারী সংস্থার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা ব্যায় করে ভাঙ্গন রোদ করে। এতে সফলতা আছে, কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যর্থতাও আছে তবে অপরিকল্পিত ভাবে অর্থ ব্যয় করলে সরকারী অর্থ “পানিতে যায়” যার প্রমাণ ভুড়িভুড়ি। যেমন প্রপার কাকারায় বিশাল অংশের ভাঙ্গন মারাত্মক আকার ধারণ করলে পানি উন্নয়ন বোর্ড ব্লক বসানোর কাজ শুরু করে। এতে সফলতা আসে ৮০ ভাগ। সম্প্রতি মাহাবুব মিয়ার বাড়ীর পশ্চিমাংশে টেকটি যা ‘বাইজ্যাতলা’ হিসেবে পরিচিত। এখন চরম ঝুকির মুখে। এ অংশের ভাঙ্গন ঠেকাতে গেল অর্থ বছর পাউবো-কক্সবাজার প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে সিমেন্ট মিশ্রিত বালুর বস্তা বসালেও কাজের কাজ হয়নি। মাতামুহুরী নদীর প্রবল বন্যার পানির তোড়ে বালির বস্তা সরে গিয়ে ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। ফলে স্থানীয় লোকজন সুফল পাইনি। তবে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার তার বিল ঠিকই উত্তোলন করে নিয়েছে। চলতি বছর এ ভাঙ্গন রোদকল্পে বর্তমানে বান্দারবান পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্তণে জিও টেক্সটাইলের তৈরী বস্তায় নদীর বালু ভর্তি করে পুনরায় ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় ফেলার একটি প্রক্রিয়া শুরু করেতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে বর্ষা মৌসুমের আষাঢ় মাসের ১৫ টা দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। তবে বালুর বস্তাগুলো রাস্তার পাশে এখনো পড়ে রয়েছে। কবে ফেলা হয় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারাই ভাল জানে। তাদের দায়িত্বে অবহেলা দেখে মনে হচ্ছে ডাক্তার আসার পূর্বেই রোগীর মৃত্যু ঘটবে। পাতিলে ভাত রান্না করে অভুক্ত সন্তানদেরকে খেতে না দেয়া যেমন নিষ্ঠুর তেমনি বালু ভর্তি বস্তা তৈরী করে ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় না ফেলার পেছনে কোন অসৎ উদ্দেশ্য আছে কিনা বুঝা যাচ্ছেনা। শেষ পর্যন্ত সরকারী বরাদ্দের ৬৪ লাখ টাকা গতবারের মতই মাতামুহুরীর পানির সাথে মিশে যাবে। সমস্যাকোথায় এসব যেন গোরিসেনের টাকা! কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহ-সভাপতি বিশিষ্ট সমাজসেবক আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন কন্ট্রাক্টর বলেছেন, বালু বস্তা দিয়ে নদীর ভাঙ্গন ঠেকানো যায়না। যদি বালুর বস্তা দিয়ে নদীর ভাঙ্গন ঠেকানো যায় তাহলে ভাতের মাড় দিয়ে দধি তৈরী করা যাবে! প্রতিবছর সরকার নদীর ভাঙ্গন ঠেকানোর জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও উন্নয়ন কর্মকান্ড নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। যেমন- হাওড়ের ভাঙ্গন ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় দেশে চলতি মৌসুমে বোরো মৌসুমে ধান উৎপাদনে ধ্বস নেমেছে। হাওড়ের লোকজন খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছে। বর্তমান অবস্থায় যা চলছে তা হচ্ছে “খইয়া আছে বার ভাই, পোয়া লইয়া কেউ নাই” কর্তৃপক্ষ যদি মনে করেন চকরিয়া উপজেলার প্রাপার কাকারার ভাঙ্গন বড় বিষয় নয়, এটা যেন সামান্য ক্ষতি তা হলে কারো কোন মন্তব্য করার কিছুই নাই। রুম যখন পুড়ছিল রুমের সম্রাট নিরো রাজ প্রসাদে বসে বাশি বাজাচ্ছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবস্থা দেখে বার বার রুমের সম্রাটের বাশি বাজানোর ঘটনার মনে পড়ছে।
পাঠকের মতামত: