ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আওয়ামী লীগের দপ্তরে নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থীর লিখিত অভিযোগ

ফাঁসিয়াখালী ইউপিতে নৌকা ডোবাতে মরিয়া উপজেলা আ.লীগের সম্পাদক গিয়াস চৌধুরী

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::  আগামী ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ফাসিয়াখালী ইউপি নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন চেয়েছিলেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী। তবে তার বিরুদ্ধে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে নির্যাতন, পরিবেশ ধ্বংসসহ বহু অভিযোগ জমা পড়ায় কেন্দ্র এবার তাকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন দেয়া হয়নি। তার স্থলে এবার দলের মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা যুবলীগ নেতা হেলাল উদ্দিন। এতে বেশ অখুশী হন তাঁর অনুসারী নেতাকর্মীরা।

আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ, চেয়ারম্যান প্রার্থী ঘোষণার পরপরই কেন্দ্রের দৃষ্টিতে আকর্ষণে গিয়াস চৌধুরীর পক্ষের লোকজন কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কে টায়ারে আগুন দিয়ে অবরোধ এবং গিয়াসকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধনও করে। এতেও কোনো কাজ না হওয়ায় নৌকার প্রার্থী হেলাল উদ্দিনকে হারাতে গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করিয়েছেন আপন ছোট ভাই নাছির উদ্দিনকে।

নৌকার মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী হেলাল উদ্দিন অভিযোগ করেছেন, দলের মনোনয়ন না পাওয়ায় গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী তার ছোট ভাই নাছির উদ্দিনকে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নৌকা প্রতীক দিয়ে ফাসিয়াখালী ইউনিয়নবাসির সেবা করতে পাঠিয়েছেন। সেখানে নৌকার ডোবাতে এবং আপন ভাই নাছিরকে জিতিয়ে আনতে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী কালো টাকা নিয়ে মাঠে নেমেছেন। এমনকি নৌকার পক্ষে মাঠে যারা কাজ করছেন, তাদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে শাসাচ্ছেন, নির্দেশ দিচ্ছেন তা^র ভাই নাছিরের পক্ষে মোটরসাইকেল প্রতীকের পক্ষে কাজ করতে।

এই অবস্থায় ফাসিয়াখালী ইউপি নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে এবং নৌকার বিরোধীতাকারী চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়ে শনিবার ১৮ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সম্পাদক ছাড়াও চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এর কাছে লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছেন।

লিখিত আবেদনে নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী হেলাল উদ্দিন বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের জনগণের সেবা করার জন্য দলীয় প্রতীক নৌকা মার্কা নিয়ে আমাকে পাঠিয়েছেন। এতে ফাসিয়াখালীবাসি অত্যান্ত খুশি এবং সবাই মিলে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু অত্যন্ত দু:খের সাথে জানাচ্ছি যে, গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী এই ইউনিয়নের দীর্ঘদিনের আওয়ামীলীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান ছিলেন এবং দীর্ঘদিন যাবৎ চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। আমি তার সাথে সহযোদ্ধা হিসেবে ছিলাম।

তিনি এবারের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন চাইলেও দল তাকে মনোনয়ন দেয়নি। আমি মনোনয়ন পাওয়ার পর তাঁর সাথে অনেকবার দেখা করেছি এবং ফোনেও যোগাযোগ করেছি। তিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের একজন সিনিয়র নেতা হওয়া স্বর্তেও এখনো পর্যন্ত নৌকার কোন প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেনি।

উল্টো তিনি মনোনয়ন না পাওয়ার বেদনা থেকে নৌকাকে সুকৌশলে পরাজিত করার জন্য আপন ছোট ভাই নাছির উদ্দিনকে (মোটর সাইকেল প্রতীক) নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন এবং উন্মুক্তভাবে তার বাড়ীতে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের ডেকে এনে এনে তার ভাইয়ের জন্য মোটর সাইকেল প্রতীকে ভোট করার জন্য চাপ প্রয়োগ করতেছে। যা মোবাইল ফোনে রেকর্ডিং রয়েছে। তিনি রাতে হেলমেট পরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহাব উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক নুরুল আবচারসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় গোপন বৈঠক করছেন। মসজিদে ঢুকিয়ে টাকা হাতে গুঁজে দিয়ে শপথ করাচ্ছেন মানুষকে। এসব বিষয় উপজেলা, জেলা এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন বলে জানান হেলাল।

হেলাল উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে প্রায় তিন হাজার সংখ্যালঘু পরিবার ভোটার আছে। তাদের উপর অতীতেও অত্যাচার করেছিল গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ও তার ভাইয়েরা। যার কারণে দল এবার তাকে দলীয় মনোনয়ন দেয় নেয়নি। সেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন এবার নৌকায় ভোট দিলে মারধর করিবে, হত্যা করিবে, লাশগুম করিবে মর্মে হাকাবকা করিতেছে গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ও তার ছোট ভাই নাছির উদ্দিন (মোটর সাইকেল প্রতীকের প্রার্থী)।

ফাসিয়াখালী ইউনিয়ন আওয়ামীললীগের বর্তমান কমিটি গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর সাজানো সংগঠন। সেই সুবাদে তিনি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের প্রকাশ্যে ও গোপনে নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করার চাপ প্রয়োগ করছেন। নৌকার জন্য ভোট করলে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ থেকে চিরতরে বহিষ্কারের হুমকি দিচ্ছেন গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী এবং তার নিকটতম আত্মীয় ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আবচার।

এই অবস্থায় আমি কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগ ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দরা এবং চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বরত নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই যে, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে সহসা দল থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে ফাসিয়াখালীতে জননেত্রী শেখ হাসিনার নৌকার জয় হবে বলে আমার বিশ্বাস।

জানা গেছে, আগামী ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপে চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে ইভিএম পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাতজন প্রার্থী। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত সমর্থিত একক প্রার্থীর পাশাপাশি আরও তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন।

চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও কক্সবাজার-১ আসনের এমপি জাফর আলম বলেন, কেন্দ্র থেকে দলের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষেই সবাইকে মাঠে নেমে প্রকাশ্যে নৌকার জন্য ভোট চাইতে হবে। যারা কেন্দ্রের নির্দেশনা মানবে না, তাদের কপালে কী আছে তা বলা মুশকিল।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে যেসব নেতাকর্মী এখনও নৌকার পক্ষে মাঠে নামেননি, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং কেন্দ্রকে লিখিতভাবে জানানো হবে।

অন্যদিকে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তার ছোট ভাই নাছির উদ্দিন ও ব্যক্তিগত গাড়িচালক হামিদ হোসেন স্বাধীনভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। নৌকা প্রার্থীকে পরাজিত করতে তাদের তিনি নির্বাচনে দাঁড় করাননি। এ ছাড়া নির্বাচনে নৌকা প্রার্থী হেলাল উদ্দিনকে সহযোগিতা বা অসহযোগিতা কিছুই করছেন না তিনি।

 

 

পাঠকের মতামত: