ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

ছাত্রলীগ নেতার হামলায় আহত কলেজছাত্রী লাইফ সাপোর্টে

bsl-leader-killing-college-girlডেস্ক নিউজ : প্রেমে প্রত্যাখাত হওয়ার ‘প্রতিশোধ’ নিতেই খাদিজা বেগম নার্গিস (২৩) নামের সিলেট সরকারী মহিলা কলেজের এক ছাত্রীকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়েছে । সোমবার বিকেলে সিলেট এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে কুপিয়ে জখম করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সহসম্পাদক বদরুল।
প্রথমে গুরুতর আহত খাদিজাকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থা চিকিৎসাধীন থাকা কালীন আশঙ্কাজনক হলে সোমবার মধ্যরাতে ঢাকায় পাঠানো হয়। ভর্তি করা হয় স্কয়ার হাসপাতালে।
হাসপাতালের উপ-পরিচালক আবদুস সালাম বলেন, চিকিৎসা চলাকালে রাত ১টার দিকে খাদিজার অবস্থার অবনতি ঘটে। পরে তাকে সিলেট থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
তিনি জানান, খাদিজার মাথায়, হাতে ও পায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। মাথার ক্ষত গুরুতর হওয়ায় তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
স্কয়ার হাসপাতাল থেকে খাদিজার চাচা আবদুল কুদ্দুস মুঠোফোনে জানিয়েছেন, খাদিজার অবস্থার অবনতি হওয়ায় গত রাতে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে তাকে ঢাকা স্কয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ঢাকায় আনার পরেই তার সিটিস্ক্যান করা হয়েছে। ডাক্তাররা জানিয়েছেন অপারেশন করা যাবে, কিন্তু বাঁচার সম্ভাবনা মাত্র ৫ শতাংশ। তবে অলৌকিক ভাবে সে বেঁচে গেলেও আ34333_bodর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে না। এজন্য আমরা এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছিনা। তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে।
এ ঘটনার পর এমসি কলেজের শিক্ষার্থীরা হামলাকারী বদরুলকে গনপিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। গণপিটুনিতে আহত বদরুলকেও সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত খাদিজা আক্তার সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। পরীক্ষা দিতে সে সোমবার এমসি কলেজে গিয়েছিলো।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সিলেট সদর উপজেলার মোগলগাঁও ইউনিয়নের হাউসা গ্রামের মাসুক মিয়ার মেয়ে খাদিজা আক্তার নার্গিসের বাড়িতে লজিং থাকত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) অর্থনীতি বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র ও শাবি ছাত্রলীগের সহসম্পাদক বদরুল আলম। সেখানে থাকাকালে মেয়েটির কাছে প্রেম নিবেদন করে সে। নার্গিস বারবার প্রত্যাখ্যান করে। বিকেলে পরীক্ষা দিয়ে বের হওয়ার পর এমসি কলেজ মসজিদের পেছনে শিক্ষার্থীদের সামনে ধারালো চাপাতি দিয়ে কোপাতে থাকে বদরুল। প্রত্যক্ষদর্শী লোকজন নার্গিসের চিৎকার শুনে এগিয়ে যায়। তারা নার্গিসকে সংকটাপন্ন অবস্থায় উদ্ধার করে এবং বদরুলকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে।
এ ব্যাপারে এমসি কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর সালেহ আহমদ বলেন, ‘কিছু ছাত্র এসে একটি মেয়েকে কুপিয়ে দুই টুকরো করে ফেলেছে বলে আমাদের জানায়। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ এসে হামলাকারী যুবককে জনতার কবল থেকে উদ্ধার করে। আমরা ওই মেয়েকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠাই।’
প্রত্যক্ষদর্শী ইমরান কবির বলেন, ‘একটি মেয়েকে কোপাতে দেখে এগিয়ে যাই। কলেজ কর্তৃপক্ষ ও অন্যান্যের সহায়তায় আমরা মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। চিকিৎকরা বলেছেন, তার রক্তের প্রয়োজন। আমরা কিছু রক্তের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তার অবস্থা সংকটাপন্ন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।’
এদিকে এ ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সিলেট-তামাবিল সড়ক অবরোধ করে।
নৃশংস এই হামলার সময়কার মুঠোফোনে ধারণকৃত একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, কলেজছাত্রী খাদিজাকে বদরুল মাটিতে ফেলে তার মাথায় এলোপাতারি কুপাচ্ছে। এ সময় ঐ তরুণীকে রক্ষার চেস্টায় দূর থেকে অনেকেই চিৎকার করছিলেন এবং তাকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়ছিলেন। তখন সে তাদের উদ্দেশ্যেও চাপাতি দিয়ে ধাওয়া দেয়।
নৃশংস সেই ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুণ এমসি কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় এ ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
প্রেম সংক্রান্ত বিরোধের জেরে খাদিজার ওপর হামলা হতে পারে বলে জানিয়েছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (উত্তর) জিদান আল মুসা। তিনি জানান, জনতার সহায়তায় হামলাকারীকে আটক করা হয়েছে। আহত ছাত্রী খাদিজার চিকিৎসার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষসহ সবাই চেষ্টা করছেন।
এদিকে মঙ্গলবার সকালে ওসি জানান, বর্তমানে পুলিশি পাহারায় সিলেট ওসমানী হাসপাতালে বদরুল চিকিৎসাধীন। গণপিটুনিতে তিনি আহত হয়েছিলেন।
এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি।
আটক বদরুল আলম শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৮-০৯ সেশনের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি শাবি ছাত্রলীগের সহসম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। তবে তার বিরুদ্ধে শিগগিরই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থ।

পাঠকের মতামত: