ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

প্রস্তুত কক্সবাজার, কাল ভোট

কক্সবাজার অফিস ::

উৎসাহ এবং শঙ্কার মধ্যেই আগামীকাল বুধবার অনুষ্ঠিত হবে কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচন। এবারই প্রথম মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে ভোট হচ্ছে। তাই স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনেও জাতীয় নির্বাচনের আঁচ লেগেছে। ব্যাপক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে ভোটারদের মাঝে। জাতীয় নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক উত্তেজনাও এখন তুঙ্গে।
ইতোমধ্যে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। মাঠে নামনো হচ্ছে এক হাজারেরও বেশি নিরাপত্তা কর্মীকে। ভোটে কোন ধরণের অনিয়ম হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন কক্সবাজার সফররত নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।
গতকাল সোমবার দুপুরে কক্সবাজার হিল ডাউন সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাসল পাওয়ার (বাহুবল) ও মানি পাওয়ার (টাকার শক্তি) কঠোরভাবে দমন করা হবে। ভোট পবিত্র আমানত। এই দুটি অপরাধের কাছে পবিত্র ভোট নষ্ট হতে দেব না। যারা এই ধরণের নগ্ন অপরাধ করার চেষ্টা করবে, তাদের কোন অবস্থাতেই ছাড় দেওয়া হবে না।’
গত রোববার নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালকুদারের সঙ্গে দেখা করে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর আচরণ বিধি লঙ্ঘন, প্রচারণাকালে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে হয়রানিসহ বেশকিছু অভিযোগ উত্থাপন করেছে বিএনপি। এসময় নির্বাচন কমিশনার অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু ভোট গ্রহনের বিষয়ে বিএনপি নেতাদের আশ্বস্থ করেন বলে জানা গেছে।
এদিকে গতকাল সোমবার সর্বশক্তি নিয়ে শেষ দিনের প্রচারণা চালিয়েছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। প্রার্থীদের প্রচারণায় সর্বত্র বিরাজ করে উৎসমুখর পরিবেশ। প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকদের মিছিলে-শ্লোগানে উদ্বেল ছিল পুরো পৌর এলাকা।
ভোটের দিন নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষনা করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুর থেকেই ভোট কেন্দ্রগুলোতে ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্সসহ যাবতীয় নির্বাচনী সমঞ্জাম পাঠানো হবে।
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো: মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘সোমবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে সব ধরনের নির্বাচনী প্রচারণা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রশাসন কঠোর নজরদারি করছে। আশা করছি, অত্যন্ত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি আমরা ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছি।’
তিনি বলেন, ‘কক্সবাজার পৌরসভার ১২ ওয়ার্ডের ৩৯টি কেন্দ্রের জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে ১২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পেয়েছি। একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক কেন্দ্রে ১২ থেকে ১৪ জন পুলিশ থাকবে। আনসার থাকবে ১০ জন। প্রতি দুইটি কেন্দ্রের জন্য একটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। এছাড়াও দুই প্লাটুন বিজিবি সদস্য ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এর ছয়টি দল দায়িত্ব পালন করবে।’
সূত্রমতে, কক্সবাজার পৌরসভার মোট ৩৯টি কেন্দ্রে ভোট কক্ষ থাকবে ২২৪টি। নির্বাচনে ৮৩ হাজার ৭২৮ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছে ৪৪ হাজার ৩৭৩ জন ও নারী ভোটার রয়েছেন ৩৯ হাজার ৩৫৫ জন।
৭০১ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ঃ এ নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারি প্রিজাইডিং এবং পোলিং অফিসার (ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা) হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ৭০১ জন । এর মধ্যে প্রতি কেন্দ্রে ১জন প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে ৩৯ জন, প্রতিটি কক্ষে ১ জন সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে ২২৪ জন এবং প্রতিটি কক্ষে দুইজন পোলিং অফিসার হিসেবে ৪৪৮ জন। ভোটার সনাক্ত এবং ব্যালট দিয়ে ভোট কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে এসব কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
তিন কেন্দ্রে ইভিএম ঃ কক্সবাজার পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ৩ কেন্দ্রে ভোট হবে ‘ইলেক্ট্রনিক ভোটিং সিস্টেম (ইভিএম)’ পদ্ধতিতে। এ তিন কেন্দ্রে মোট ভোটার ৫ হাজার ৫৯০ জন। কক্সবাজার কেজি এন্ড মডেল হাইস্কুল কেন্দ্রে ঝাউতলা গাড়ী মাঠের ১০১৭ জন পুরুষ ও ৮৭৮ জন নারী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এই কেন্দ্রে ভোট কক্ষ ৫টি। পশ্চিম, দক্ষিণ ও উত্তর বাহারছড়ার ২০৫২ জন পুরুষ ও ১৬৪৩ জন নারী ভোটার ভোট দেবেন দুই ভোটকেন্দ্র প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই) সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয় ও প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই) প্রশিক্ষণ শাখায়। সেখানে মোট কক্ষ ১০টি।
তিন পদে ৮৬ প্রার্থী ঃ কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে ৩ পদে ৮৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। এর মধ্যে মেয়র পদে পাঁচ জন, সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ১৭ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৬৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। মেয়র পদের প্রার্থীরা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মুজিবুর রহমান (নৌকা), বিএনপি মনোনীত প্রার্থী রফিকুল ইসলাম (ধানের শীষ), জামায়াত সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী সরওয়ার কামাল (নারিকেল গাছ), জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী রুহুল আমিন (লাঙ্গল) ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী জাহেদুর রহমান (হাত পাখা)।

পাঠকের মতামত: