ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

‘প্রভাবশালীদের মনোরঞ্জনে ইউক্রেন রাশিয়ার সুন্দরী তরুনী’

ATM-criminalনিউজ ডেস্ক  : গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে পিওটর বলেন, এটিএম বুথ জালিয়াতিতে জড়িত অর্ধশত নেতা, শিল্পপতি ও ব্যাংকারদের জন্য ‘ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে তরুণীদের ভাড়া করে বাংলাদেশে নিয়ে আসতাম। উত্তরার একটি অভিজাত আবাসিক হোটেলে ওই তরুণীদের থাকার ব্যবস্থা ছিল। সেখানেই আসতেন বাংলাদেশের প্রভাবশালী নেতা, শিল্পপতি ও ঊর্ধ্বতন ব্যাংক কর্মকর্তারা। বাংলাদেশি পুরুষদের পছন্দের শীর্ষে রাশিয়া ও ইউক্রেনের তরুণীরা। কারণ এই তরুণীরা ফর্সা ও লম্বা ৬ ফুটের উপরে।

তাই প্রভাবশালীদের কাছে যেতে এবং সুবিধা নিতে তাদের মনোরঞ্জনের জন্য এই তরুণীদেরই ব্যবহার করেছি। উত্তরার ওই হোটেলে এমন সব ব্যক্তি যেতেন যাদের সাক্ষাৎ পাওয়াই সাধারণ মানুষের জন্য বেশ কষ্টসাধ্য।’
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এটিএম জালিয়াতির ঘটনায় আটক জার্মান বংশোদ্ভূত পোলিশ নাগরিক পিওটর সেজেফান মাজুরেক এসব কথা বলেছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ। পিওটরের দেয়া এসব তথ্যে গোয়েন্দা কর্মকর্তারাও হতবাক হয়ে গেছেন। পিওটর গোয়েন্দাদের আরো বলেছেন, ইউরোপে সে ওয়ানটেড। তার বিরুদ্ধে পরোয়ানাও রয়েছে। তাই ইউরোপে জালিয়াতি করা কষ্টসাধ্য।

নানাভাবে খোঁজ নিয়ে বাংলাদেশকেই টার্গেট হিসেবে বেছে নেন পিওটর। বছর দু’য়েক আগে যখন বাংলাদেশে প্রথম আসেন তখন নানাভাবে তথ্য নিয়ে জানতে পারেন বাংলাদেশি প্রভাবশালীদের মনোরঞ্জন করতে বিদেশি তরুণী দরকার। এ কারণেই রাশিয়া ও ইউক্রেনের তরুণীদের আনার উদ্যোগ নেন তিনি। উত্তরার ওই আবাসিক হোটেলে পরিচয় হওয়া ব্যাংক কর্মকর্তারাই তাকে এটিএম জালিয়াতি করতে আগ্রহী করেছেন। তবে এর আগে একজন শিল্পপতির সঙ্গে কিছুদিন বিদেশে লোক পাঠানোর ব্যবসাও করেছেন। সেখানে জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়ে তিনি ওই ব্যবসা গুটিয়ে নেন।

পিওটর আরো জানিয়েছেন, একসঙ্গে তিনি ৫/৬ জন করে তরুণীকে ঢাকায় আনতেন। ফলে ওই হোটেলে যখন আড্ডা বসত তখন সবার সঙ্গেই বিদেশি তরুণী থাকত। আর পিওটরের সঙ্গে থাকত বাংলাদেশি তরুণী। কারণ বাংলাদেশি তরুণীদের পছন্দ করতেন তিনি। পরে এদের একজনকেই বিয়ে করে সংসার পাতেন পিওটর।

গতকাল মঙ্গলবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এবং কাউন্টার টেরোরিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকের এটিএম জালিয়াতিতে ৪০ থেকে ৫০ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জড়িত থাকার তথ্যও জানিয়েছে পিওটর। এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান জালিয়াতিতে জড়িত, নাকি উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাদের নাম এতে জড়ানো হয়েছে, তা যাচাই করা হচ্ছে। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত ৩/৪ জনকে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

সমপ্রতি ঢাকার গুলশান, বনানী ও মিরপুরের কালশীতে ইস্টার্ন ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) চারটি এটিএম বুথে ‘স্কিমিং ডিভাইস’ বসিয়ে গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য চুরির পর এটিএম কার্ড ক্লোন করে টাকা তুলে নেয়ার ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় হয়। এরপর ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) ও সিটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ মামলা করলে তার তদন্তে নামে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

মনিরুল ইসলাম বলেন, পিওটর জার্মান নাগরিক হলেও তার পূর্বপুরুষ পোল্যান্ডের নাগরিক ছিল। পোল্যান্ডের নাগরিক হিসেবেই নকল পাসপোর্ট তৈরি করে পিওটর বাংলাদেশে এসেছে। তার কাছে জার্মানির একটি পরিচয়পত্রও পাওয়া গেছে। এটিএম জালিয়াতিতে পুলিশের কোনো সদস্যের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যায়নি বলেও জানান পুলিশের এই অতিরিক্ত কমিশনার। ইত্তেফাক

পাঠকের মতামত: