ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

পেকুয়ায় মসজিদের সৌর বিদ্যুৎসহ টিআর প্রকল্পের ৩টন চাল লোপাট করলেন জাপা নেতা!

imagesপেকুয়া প্রতিনিধি :::

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের একটি মসজিদে সৌর বিদ্যুৎ স্থাপনসহ ৩টি টিআর (টেস্ট রিলিফ) প্রকল্পের ৩ টন চাল লোপাটের অভিযোগ উঠেছে খোদ প্রকল্প কমিটি ও জাপা নেতার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। গোপনে এসব খাদ্য শষ্য উত্তোলন কালোবাজারে বিক্রি করে প্রায় লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে জাপা নেতার নেতৃত্বে সিন্ডিকেট।

পেকুয়া পিআইও অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের টিআর প্রকল্পের ১ম পর্যায়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের নতুনব্রীজ ষ্টেশনের জামে মসজিদে সোলার স্থাপন দ্বারা উন্নয়নে ১ টন চাল বরাদ্দ দেন। একই সাথে রাজাখালী ইউনিয়নের পালাকাটা কালা মিয়া মার্কেটে সোলার স্থাপন দ্বারা উন্নয়ন ও একই ইউনিয়নের বাদশা মিয়া মার্কেটে সোলার স্থাপন দ্বারা উন্নয়নের জন্য পৃথকভাবে আরো ২ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়।ovijog_1

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ তিনটি টিআর প্রকল্পের সদস্য সচিব হিসেবে পেকুয়া উপজেলা জাতীয় পার্টির নেতা ও পেকুয়া মিয়া পাড়া গ্রামের মৃত উকিল আহমদের পুত্র হাজী বদিউল আলম পেকুয়া পিআইও অফিসে একটি ‘কথিত’ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি জমা দিয়ে প্রায় চার মাস পূর্বে বরাদ্দও উত্তোলন করে নিয়েছেন চকরিয়া খাদ্য গুদাম থেকে। ওই জাপা নেতা কৌশলে বরাদ্দ আত্মসাৎ করতে তিনটি প্রকল্পের ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে একই লোকজনকে অন্তর্ভূক্ত করেছেন। তিন প্রকল্পের চেয়ারম্যান করেছেন রাজাখালী মিয়া পাড়া গ্রামের জনৈক প্রবাসীর হাফসা খানমকে। আর তিন প্রকল্পের সদস্য সচিব জাপা নেতা বদিউল আলম নিজেই। প্রকল্প কমিটির সদস্য করা হয়েছে জাপা নেতা বদিউল আলমের বড় ভাই হাজী শামসুল আলমসহ আরো ২ জনকে। পেকুয়া পিআইও অফিসে জাপা নেতা হাজী বদিউল আলমের জমা দেওয়া ‘কথিত’ প্রকল্প কমিটির কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ভবিষ্যতে টিআর প্রকল্পের চাল লোপাটের ঘটনাটি কৌশলে ধামাচাপা দিতে প্রকল্প কমিটির কাগজপত্র ওই জাপা নেতা পিতার আসল নাম ও ঠিকানা গোপন করেছেন। সেখানে বদিউল আলমের পিতার নাম উল্লেখ করা হয় মৃত উকিল মিয়া। অথচ তার পিতার আসল নাম হচ্ছে মৃত উকিল আহমদ। ঠিকানা উল্লেখ করেছেন পেকুয়া শেখেকিল্লাহ ঘোনা। বদিউল আলমের গ্রামের ঠিকানা পেকুয়া মিয়া পাড়া হলেও সরকারী কাগজপত্রে ঠিকানা জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন।

এদিকে সরেজমিনে গত কয়েকদিন পূর্বে ওই তিন প্রকল্পের ঠিকানায় গিয়ে দেখা গেছে, রাজাখালী পালাকাটা কালা মিয়া মার্কেটে সোলার প্যানেল স্থাপন করেনি জাপা নেতা। একই ভাবে রাজাখালী নতুনব্রীজ ষ্টেশন জামে মসজিদেও সৌর বিদ্যুৎ ও বাদশা মিয়া মার্কেটে সৌর বিদ্যুৎ স্থাপন করেনি জাপা নেতা বদিউল আলম। এদিকে স্থানীয়রাও জানেনা ওই প্রকল্প সস্পর্কে। জানা গেছে, গত চার মাস পূর্বে জাপা নেতা বদিউল আলম প্রকল্প কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে পেকুয়ার পিআইও অফিস থেকে ৩ টন চালের বরাদ্দের ডিও নিয়ে চকরিয়া খাদ্য গুদাম থেকে চাল উত্তোলনও করে নিয়েছেন। প্রতি টন খাদ্য শষ্য চালের বর্তমান সরকারী বাজারমূল্য প্রায় ৩৩হাজার ৫’শ টাকা। সে হিসেবে তিন টন চালের মূল্য প্রায় লক্ষাধিক টাকারও বেশি।

এ বিষয়ে জানতে ওই তিন প্রকল্পের চেয়ারম্যান রাজাখালী মিয়া পাড়া গ্রামের জনৈক প্রবাসীর স্ত্রী হাফসা খানমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তাকে নামেমাত্র প্রকল্প চেয়ারম্যান করা হয়েছে। তিনি শুধু কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেছেন; পুরো বরাদ্দ উত্তোলন করেছেন জাপা নেতা ও প্রকল্পের সদস্য সচিব জাপা নেতা বদিউল আলম।

এ বিষয়ে জানতে ওই তিন প্রকল্পের চেয়ারম্যান ও জাপা নেতা বদিউল আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। অবশ্য পরে স্বীকার করেছেন, ওই তিন প্রকল্পের বরাদ্দগুলো তিনি উত্তোলন করেছেন। এখনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করেননি কেন জানতে চাইলে তিনি কোন ধরনের সদুত্তর দিতে পারেনি।

পেকুয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সৌভ্রাত দাশ বলেন, জাপা নেতা বদিউল আলম তার দফতর থেকে বরাদ্দের ছাড় পত্র নিয়ে খাদ্য শষ্য উত্তোলন করলেও এখনো পর্যন্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়নি। তিনি বিষয়টি সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।

পাঠকের মতামত: