ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

পেকুয়ায় বেড়িবাঁধের ব্লক তৈরীতে ব্যাপক অনিয়ম ও সীমাহীন দূর্নীতির অভিযোগ

18275271_1524372660952713_5208681868149329882_nমুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া :::

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার উপকূলীয় মগনামা ইউনিয়নে পাউবোর বেড়িবাঁধের ব্লক তৈরীতে ব্যাপক অনিয়ম ও সীমাহীন দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কাজ তদারকীর দায়িত্বে থাকা পাউবোর সংশ্লিষ্ট শাখা কর্মকর্তার সাথে ঠিকাদারের যোগসাজশের কারণেই নি¤œমানের ব্লক তৈরী করা হচ্ছে বলে মগনামা ইউনিয়নের একাধিক সচেতন বাসিন্দরা অভিযোগ করেছেন। স্থানীয়রা অনিয়মের সাথে জড়িত পাউবোর ওই কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দিনের অপসারনও দাবী করেছেন।

 এদিকে পেকুয়ার উপকূলবাসীকে রক্ষায় সরকারের এই বৃহৎ উদ্যোগ পাউবোর দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদারের অনিয়মের কারণে ভেস্তে যাওয়ার আশংকা করছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতনিধিরা। সংশ্লিষ্টদের অনিয়মের কারণে টেকসই বেড়িবাঁধ থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশংকায় রয়েছেন উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের প্রায় বিশ হাজারেরও বেশি মানুষ। নানান অনিয়ম ও দূর্নীতির আশ্রয় নিয়ে বেড়িবাঁধের ব্লক তৈরী করে তা বেড়িবাঁধে স্থাপন করা হলে সামনের বর্ষা মৌসুমে সাগরের ঢেউয়ের পানিতেই বিলিন হওয়ারও আশংকা করছেন স্থানীয়রা। পাউবোর কর্মকর্তা ও কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদার প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের এই অনিময়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্থানীয়রা মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেনা বলে জানা গেছে।

 কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, পেকুয়া উপজেলার ১২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে অধিক ক্ষতিগ্রস্থ ও ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত মগনামা, উজানটিয়া ও রাজাখালী ইউনিয়নের ২০ কিলোমিটার অংশে বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য যথাযথ প্রক্রিয়ায় গত কয়েক বছর পূর্বে কক্সবাজারের স্বনামধন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্টান উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনালকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। এ জন্য বরাদ্ধ করা হয়েছে একশত ৯০ কোটি টাকা। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের অবহেলা ও প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে ওই ২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে সংস্কার কাজ চলছে মাত্র ৭ কিলোমিটার অংশে। বাকি ১৩ কিলোমিটার এখনো রয়েছে অরক্ষিত। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীলরা বলছেন, আগামী বছরের বর্ষা মৌসুমের আগেই শেষ হবে বেড়িবাঁধের বাকি অংশের কাজ। তবে এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন, পেকুয়া উপজেলায় পাউবোর কাজ তদারকীর দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট শাখা কর্মকর্তা (এসও) গিয়াস উদ্দিনের সাথে ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের গভীর আঁতাতের কারণে বেড়িবাঁধের ব্লক তৈরীতেসহ সাব্র্কি কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতি হচ্ছে। ব্লক তৈরীতে অনিয়ম হলেও পাউবো ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উর্দ্ধতন বিভাগ এখনো কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। গত কয়েক দিন পূর্বে প্রধানমন্ত্রী, দূর্নীতি দমন কমিশন, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দফতরে মগনামায় পাউবোর ব্লক তৈরীর কাজ সহ সার্বিক উন্নয়নে কাজে পাউবোর কর্মকর্তা ও ঠিকাদারী প্রতিষ্টান ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করায় তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য মগনামাবাসীর পক্ষে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন মগনামার বাসিন্দা ও পেকুয়া উপকূলীয় প্রেস ক্লাবের সেক্রেটারী সাংবাদিক গিয়াস উদ্দিন।

 সরেজিমেন গিয়ে দেখা গেছে, মগনামার পশ্চিমাংশে ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধে মাটি ভরাটের পর ব্লক বসানোর কাজ হবে। ইতিমধ্যেই মগনামা লঞ্চঘাটের দক্ষিণাংশে ঠিকাদারী প্রতিষ্টান উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনাল ব্লক বসানোর কাজও শুরু করেছেন। দেখা গেছে, মগনামা ফুলতলা ষ্টেশনের পূর্বের অংশে কৃষি জমিতে গত এক বছর ধরে ব্লক তৈরীর কাজ করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্টান। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, টেকসই ব্লক তৈরী করা হচ্ছেনা। ব্লক তৈরীতে পাউবোর শিডিউল অনুযায়ী সিলেটি পাথর, বালু, পানি ও সিমেন্ট সংমিশ্রন করা হয়নি। সিলেটি পাথরের পরিবর্তে লামা ও আলী কদম উপজেলার বিভিন্ন এলাকার পাথর ব্যবহার করা হয়েছে ব্লব নির্মাণে। আর নি¤œমানের ব্যবহারও যতেচ্ছাভাবে হয়েছে। যেখানে ব্লক গুলো রাখা হয়েছে সেখান থেকে পরিবহন করে বেড়িবাঁধে নেওয়ার সময় কিছু কিছু ব্লক ভেঙ্গেও যাচ্ছে। নিম্মমানের নির্মান সামগ্রী ব্যবহার করে ব্লক তৈরী করায় এসব ব্লব ভেঙ্গে যাচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এসব ব্লক তৈরীর সময় পাউবোর তদারকীর দায়িত্বে থাকা ওয়ার্ক এসিস্টেন্ট ও এসও কে কোন সময় দেখা যায়নি। তারা কাজ তদারকরীর নামে সরকারী দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করে কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদারের কাছ উৎকোচ নিয়ে ব্লক তৈরীতে এহেন দূর্নীতির সুযোগ করে দিয়েছেন বলে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। মগনামায় কাজ তদরাকীর দায়িত্বে থাকা পাউবোর শাখা কর্মকর্তা (এসও) গিয়াস উদ্দিন ঠিকাদারের কাছ থেকে মোটা অংকে ম্যানেজ হয়ে নিশ্চুপ রয়েছেন। আর যে ব্লকগুলো বসানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে, অধিকাংশ ব্লকই শিডিউল মতে তৈরী করা হয়নি। স্থানীয়রা ব্লক তৈরীতে এহেন দূর্নীতির পিছনে পাউবোর কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দিনকে দায়ী করেছেন।

 অভিযোগের ব্যাপারে জানতে পাউবোর শাখা কর্মকর্তা (এসও) গিয়াস উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মগনামায় ব্লক তৈরীতে কোন ধরনের অনিয়ম হচ্ছেনা। শিডিউল মতে সব কাজ ঠিকঠাক মতে চলছে। আপনারা (সাংবাদিকরা) এ নিয়ে লেখালেখি করেও কিছু করতে পারবেন না উল্লেখ করে এ কর্মকর্তা আর কথা না বলে মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

 মগনমায় পাউবোর কাজ বাস্তবায়নকারী ঠিকাদারী প্রতিতষ্ঠান কক্সবাজার উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনালের স্বত্ত্বাধিকারী বিশিষ্ট শিল্পপতি মো. আতিকুল ইসলাম সিআইপির সাথে যোগাযোগ করা করা হলে তিনি বলেন, স্থানীয়দের এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। কিছু কুচক্রী মহল আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এখনো আমরা কাজ শেষ করিনি। তার আগে কাজ নিয়ে অভিযোগ তোলার কোন সুযোগ নেই। আমরা কাজ শেষ করলে সংশিষ্টø কর্তৃপক্ষ অবশ্যই পরীক্ষা- নিরীক্ষা করে সিডিউল অনুযায়ী কাজ বুঝে নেবেন। মগনামায় তার প্রজেক্টের কাজে কোন ধরনের অনিয়ম ও দূনীতি হচ্ছেনা বলে দাবী করেছেন।

পাঠকের মতামত: