ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

পেকুয়ায় বেড়িবাঁধ নির্মাণে ধীরগতি, দুর্ভোগে উপকূলবাসী

badপেকুয়া প্রতিনিধি :::

বেড়িবাঁধ বলতে জমির আইলের মত মাটির সরু রাস্তা, নদীর চরের সাথে মিশে যাওয়া মাটির স্তুপ, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ব্লকের খন্ডাংশ রয়েছে। বালুর পরিবর্তে মাটি দিয়ে ভর্তি করায় পানিতে গলে গিয়ে খালি পড়ে রয়েছে জিও টেক্স ব্যাগ। উপজেলার উপকূলীয় এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ ২০কিলোমিটার বেড়িবাঁধের ১৩কিলোমিটারের চিত্র এটি। আর বাকি সাত কিলোমিটারে সংস্কার কাজ চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।

বর্ষা মৌসুম শেষ হওয়ার আগে বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ হবার আশা দেখছে না স্থানীয়রা। তাই আবারো সাগরের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন উপজেলার মগনামা, উজানটিয়া ও রাজাখালী ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ।

এছাড়া পেকুয়া সদর ইউনিয়নে প্রায় দুই কিলোমিটারেরও বেশি অংশ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে বেড়িবাঁধ। প্রতিবছর মাতামুহুরি নদীর পাহাড়ি ঢলে এসব অংশ ভেঙে প্লাবিত হয় পেকুয়া সদর ইউনিয়ন।

চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরুতে ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতে আরো বেশি নাজুক অবস্থার সৃষ্টি বেড়িবাঁধের এসব অংশের। বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছে মগনামা, উজানটিয়া, রাজাখালী ও পেকুয়া সদর ইউনিয়নের বিস্তৃতঅঞ্চল।

বিগত সময়ে একাধিকবার প্রাকৃতিক ঘুর্ণিঝড় আর বন্যায় বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধের করুণ অবস্থার বর্ণনা করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মগনামা ইউনিয়নের শরত ঘোনা গ্রামের মৃত আসাদ আলীর পুত্র বজর আলম(৬১)। সাথে যোগ করেন, গত বছর ঘুর্ণিঝড় রোয়ানোর আঘাতে বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে দীর্ঘমেয়াদি বন্যায় ক্ষতির কথা।

তিনি আরো বলেন, চলতি মৌসুমের শুরুতে ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি আমরা। এতে নাজুক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বেড়িবাঁধের। সম্প্রতি দুই দফা টানা বৃষ্টিতে বেড়িবাঁধ উপচে সাগর থেকে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে লোকালয়ে।

রাজাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছৈয়দ নূর বলেন, ইউনিয়নের মাতবর পাড়া এলাকায় ৩৫ চেইন, বকশিয়া ঘোনা এলাকায় ৫০ চেইন, হাজী মার্কেট এলাকায় ৪০ চেইন, নতুন ঘোনা এলাকায় ৫ চেইন বেড়িবাঁধ অত্যন্ত ঝুঁকিতে রয়েছে। অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জোয়ারে এসব অংশ দিয়ে সাগরের পানি উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। কার্যাদেশ হলে বাস্তবায়ন হয়নি বেড়িবাঁধের এসব অংশের নির্মাণ কাজ।

মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম বলেন, ইউনিয়নের কাকপাড়া এলাকায় ৮ চেইন, শরত ঘোনা এলাকায় ৭ চেইন বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। বৃষ্টি হলেই বেড়িবাঁধের এ দুটি অংশ দিয়ে সাগরের পানি প্রবেশ করে। জরুরি বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও কার্যাদেশ প্রাপ্ত ঠিকাদার কাজ না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই জনপ্রতিনিধিদের দৌড়ঝাপ শুরু করতে হয় বেড়িবাঁধ রক্ষায়। প্রতি জোয়ারেই মাটি দিয়ে বেড়িবাঁধ সংস্কার করতে হয় ভাঙ্গন ঠেকাতে।

পেকুয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাহাদুর শাহ বলেন, ইউনিয়নের মেহেরনামা অংশে মাতামুহুরি নদীর তীরবর্তী বেড়িবাঁধের তিনটি আলাদা অংশে প্রায় ১০ চেইন ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। এছাড়া ছিরাদিয়া ও আলেকদিয়া পাড়া এলাকায় আরো ১০ চেইন বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে।

পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু বলেন, বেড়িবাঁধ নির্মাণে সরকারের প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দিলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুষ্ঠু তদারকির অভাবে যথাযথভাবে কাজ হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজে চরম অবহেলা করলেও অদৃশ্য কারণে মুখে কুলুপ এঁটেছেন সংশ্লিষ্টরা।

তিনি আরো বলেন, যেসব অংশে বেড়িবাঁধ নির্মাণ চলছে তাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে নিম্নমানের কাজ করায় উপজেলা পরিষদ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও গিয়াস উদ্দিন বলেন, বৃষ্টি বন্ধ হলে বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ পুনরায় শুরু হবে। এব্যাপারে সার্বিক তদারকি আমাদের রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, বেড়িবাঁধের যেসব অংশ ঝুঁকিতে রয়েছে, তাতে জরুরি বরাদ্দের মাধ্যমে সংস্কার কাজ করানো হবে।

পাঠকের মতামত: