এম গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া :: কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলায় ইউনিসেফ বাংলাদেশের অর্থায়নে ‘স্ট্রেনদেনিং রিস্ক কমিউনিকেশন এন্ড কমিউনিটি এনগেজমেন্ট এন্ড ভ্যাকসিন কমিউনিকেশন ফর কোভিড-১৯ প্রিভেনশন’ প্রকল্প বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত এনজিও এডাবের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ হেলথ এন্ড এডুকেশন ডেভলপমেন্ট সোসাইটি কর্তৃক কর্মসূচী বাস্তবায়নে ব্যাপক লুটপাট ও অনিয়ম-দূর্নীতির গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৬ মাস মেয়াদী উক্ত প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেকটা দায়সারা কর্মসূর্চী বাস্তবায়ন করে দাতা সংস্থা ইউনিসেফ বাংলাদেশের বরাদ্দ লুটে নিয়েছে এনজিওটি। অনিয়ম ও দূর্নীতির সাথে জড়িত রয়েছে এনজিও এডাবের সহযোগী প্রতিষ্টান চট্টগ্রামের চন্দনাইশের বাংলাদেশ হেলথ এন্ড এডুকেশন ডেভলাপমেন্ট সোসাইটি। উক্ত প্রতিষ্টানের প্রধান নির্বাহী হিসেবে রয়েছেন ইন্দ্রজিৎ চক্রবতী। তিনি উক্ত এনজিওর নির্বাহী কর্মকর্তার পাশাপাশি তার এলাকার একটি এমপিওভুক্ত হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদেও কর্মরত রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইউনিসেফ বাংলাদেশ এর অর্থায়নে কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলায় ছয় মাস মেয়াদী একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য দেশের সুনামধন্য এনজিও এডাব তাদের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ হেলথ এন্ড এডুকেশন সোসাইটি ডেভলপমেন্ট সোসাইটিকে দায়িত্ব প্রদান করে। কিন্তু এডাবের সহযোগী সংগঠন পেকুয়া উপজেলায় দায়সারা প্রকল্প কর্মসূচী দেখিয়ে ভুঁয়া বিল ভাউচারে দাতা সংস্থা ইউনিসেফ বাংলাদেশের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। প্রকল্পটি পেকুয়া উপজেলায় ইউনিসেফের সহায়তায় সুষ্টু ও নিয়মান্ত্রিকভাবে বাস্তবায়িত হওয়ার কথা।
জানা যায়, প্রকল্পটির মেয়াদ ছিল চলতি বছরের ১৭ মার্চ থেকে ১৬সেপ্টেম্বর-২০২২ইংরেজী পর্যন্ত। কিন্তু পেকুয়া উপজেলায় প্রকল্পটি এডাব বাস্তবায়ন না করে তাদের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ হেলথ এন্ড এডুকেশন ডেভলপমেন্ট সোসাইটি নামের একটি অখ্যাত এবং অনভিজ্ঞ এনজিওর মাধ্যমে চলতি বছরের জুলাই থেকে কিছু স্কুলে নামমাত্র সচেতনতামূলক কর্মসূচী পালন করে। প্রকল্পের ম্যানুয়েল অনুসরণ করে কোন ধরনের কার্যক্রম পেকুয়ায় তারা বাস্তবায়ন করেনি। প্রকল্প বাস্তবায়নকালীন পেকুয়া উপজেলায় বা প্রকল্প এলাকায় তাদের কোন অফিস ছিলনা এবং কোন কর্মচারীও নিয়োগ দেওয়া হয়নি। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সরকারী বন্ধের দিন পেকুয়ায় এসে কিছু লোকের সাথে খোশগল্প করে তার বাড়ি চট্টগ্রামের চন্দনাইশে চলে যেতো। অভিযুক্ত ইন্দ্রজিৎ তার এলাকার একটি এমপিওভুক্ত হাই স্কুলের শিক্ষকও। তিনি নিয়মিত স্কুলে ব্যস্ত থাকতো।
উক্ত প্রকল্পের ম্যানুয়াল অনুসারে কোভিড-১৯ প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম সম্পর্কে পেকুয়া উপজেলায় স্বেচ্ছাসেবকদের ওরিয়েন্টশন মে-২২ এর শেষ সপ্তাহ থেকে জুন-২২ এর ২য় সপ্তাহে বাস্তবায়নের জন্য উল্লেখ থাকলেও এরকম কোন ওরিয়েন্টশন প্রোগ্রাম তারা বাস্তবায়ন করেনি। উপজেলা থেকে ৪/৫জন স্বেচ্ছাসেবক ওরিয়েন্টশন প্রোগ্রামে অংশ নেওয়ার নিয়ম থাকলেও পেকুয়া থেকে কোন স্বেচ্ছাসেবক নেওয়া হয়নি। জেলা পর্যায়ে ৪০ জনের অংশ গ্রহণে ওরিন্টেশন প্রোগ্রামটি করার কথা থাকলেও সেটি করা হয়নি। অথচ ওরিয়েন্টশন প্রোগ্রামের জন্য অর্থ বরাদ্দও ছিল। কোভিড-১৯ প্রতিরোধমূলক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে কমিউনিটি লিডারদের মধ্যে সংবেদসশীল সৃষ্টি/মতবিনিয়ম/ ধারণা প্রদান ওরিয়েন্টশন ২য়-৪র্থ সপ্তাহে জুন-২০২২ এ ৪০ জন অংশগ্রহণকারী নিয়ে করার জন্য প্রকল্পের ম্যানুয়েলে উল্লেখ থাকলেও সেটি করা হয়নি। উক্ত ওরিয়েন্টশনে শিক্ষক, ইয়ুথ লিডার, জনপ্রতিনিধি, কমিউনিটি রেডিওর প্রতিনিধি এবং সাংবাদিকসহ স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন সেক্টরের প্রতিনিধিত্বকারী নাগরিকরা অংশ করবেন মর্মে ম্যানুয়েলে উল্লেখ ছিল। ওরিয়েন্টশন বাস্তবায়নের জন্য অংশগ্রহণকারীদের মাঝে বিতরণের জন্য মধ্যাহ্নভোজ ও যাতায়াত ভাতা বরাদ্দ ছিল। উক্ত ওরিয়েন্টশন প্রোগ্রামও করা হয়নি। এছাড়াও এলাকার কোন জনপ্রতিনিধিও জানেনা উক্ত প্রকল্প সম্পর্কে। ধর্মীয় নেতাদের সাথে কর্মশালা ২য়-৪র্থ সপ্তাহ জুন-২০২২ উপজেলা পর্যায়ে ৩০ জন ইমাম ও পুরোহিতদের অংশ গ্রহণে আয়োজনের জন্য অর্থ বরাদ্দ থাকলেও সেটিও করা হয়নি। এছাড়াও জেলাভিত্তিক কার্যক্রমের অগ্রগতি ও পরিকল্পনা ফলোআপ ৪র্থ সপ্তাহ জুন-২০২২ ওরিয়েন্টশন প্রোগ্রাম করার নির্দেশনা ছিল। উক্ত প্রোগ্রামে ৩০ জন সেচ্ছাসেবক অংশ গ্রহণের জন্য কথা। এসব প্রোগ্রাম বাস্তবায়নের জন্য অর্থও বরাদ্দ ছিল। এরকম প্রোগ্রামে পেকুয়া থেকে কোন স্বেচ্ছাসেবক নেওয়া হয়নি। উপজেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট সরকারী কর্মকর্তা এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সাথে টাউনহল বৈঠক জুলাই-২০২২ এর করার জন্য নির্দেশনা থাকলেও সেটি করা হয়নি। উক্ত প্রোগ্রাম বাস্তবায়নের জন্যও অর্থ বরাদ্দ ছিল।
উপজেলা পর্যায়ে নাগরিক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আগস্ট-২০২২ এ সরকারী পরিসেবা প্রদানকারীদের নিয়ে মিটিং করার জন্য প্রোগ্রাম ম্যানুয়েলে উল্লেখ ছিল এবং অর্থ বরাদ্দ ছিল। এ ধরনের কোন প্রোগ্রামও পেকুয়ায় হয়নি।
আমরা পেকুয়াবাসী সংগঠনের উপদেষ্টা মাহামুদুল করিম অভিযোগ করেছেন, এনজিও এডাবের সহযোগী সংগঠন পেকুয়া উপজেলায় ইউনিসেফ বাংলাদেশে অর্থায়নে ৬ মাস মেয়াদী প্রকল্প বাস্তবায়নে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে। যাহা সরকারী-বেসরকারী যেকোন এজেন্সি সরেজমিনে তদন্ত করলে প্রকল্প বাস্তবায়নে তাদের আরো বহু অনিয়ম ও দুর্নীতি বেরিয়ে আসবে বলে তিনি দাবি করেছেন।
পেকুয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়নে নানা অনিয়ম-দূর্নীতির বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে এনজিও এডাবের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ হেলথ এন্ড এডুকেশন ডেভলপমেন্ট সোসাইটি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইন্দ্রজিত চক্রবর্তীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এনজিও এডাবের সহযোগী হিসেবে তার মালিকানাধীন সংগঠন নিয়মানুসারে পেকুয়ায় গত ৬ মাস প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। কোন অনিয়ম হয়নি। প্রকল্পের ম্যানুয়েল অনুসরণ করে অনেক প্রোগ্রাম কেন বাস্তবায়ন করা হয়নি জানতে চাইলে তিনি কোন ধরনের সদুত্তর দিতে পারেনি।
পাঠকের মতামত: