মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া :: কক্সবাজার জেলার পেকুয়া সাব রেজিস্ট্রার অফিসে বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্যে জড়িত ও বিতর্কিতদ প্রধান সহকারী অর্চনা বড়ুয়ার খুটির জোর নিয়ে পেকুয়ার অফিস পাড়া ও সচেতন মহলে নানা প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। গত এক বছর ধরে পেকুয়া সাব-রেজিষ্টার অফিসকে অনিয়ম-দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের আঁখড়ায় রূপান্তর করেন প্রধান সহকারী অর্চনা। ঘুষ বাণিজ্যে চরমভাবে বেপরেয়া হয়ে হয়ে পেকুয়া সাব রেজিষ্টার অফিসে নানা বিতর্কিত কর্মকান্ড জন্ম দিলেও উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বিতর্কিত অর্চনার বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারণে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, সম্প্রতি সময়ে পেকুয়া সাব রেজিষ্টার অফিসে অর্চনার বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্যে’র বিষয়ে স্থানীয় ও জাতীয় একাধিক পত্রিকায় তথ্যনির্ভর ও বস্তুনিষ্ট প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও কক্সবাজার জেলা রেজিষ্টার অফিস ও নিবন্ধন অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ ঘুষখোর প্রধান সহকারী অর্চনার বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারণে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এরফলে দিন দিন ঘুষ বাণিজ্যে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অর্চনা। সাব রেজিষ্টার অফিসের প্রভাবশালী কর্মচারী বিতর্কিত অর্চনা কোন কিছুর তোয়াক্কা করেনা। প্রতি বুধবার ও বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দলিল লেখক ও দলিল লেখক সহকারী মুন্সিরা প্রধান সহকারী অর্চনাকে ঘুষের টাকা দিতে অফিসে অফিসে ভীড় জমায়। গত এক মাস পূর্বে কক্সবাজার জেলা রেজিষ্টার বিকাল ৪টার পর পেকুয়া সাব রেজিস্টার অফিস খোলা না রাখতে মৌখিকভাবে নির্দেশ দিলেও সে নির্দেশ মানতে নারাজ প্রধান সহকারী অর্চনা। অর্চনা নিজের ইচ্ছে ও খেয়াল খুশিমতো পেকুয়া সাব রেজিষ্টার অফিসকে ঘুষ বাণিজ্যে ও অনিয়ম-দুর্নীতির আঁখড়ায় রূপান্তর করেছেন।
পেকুয়া সাব-রেজিস্টার অফিসের কয়েকজন দলিল লেখক ও দলিল লেখক সহকারী মুন্সি জানান, ঘুষখোর অর্চনা যে অফিসেই চাকুরী করেন, সেখানেই ঘুষ বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। বছর খানেক পূর্বে চকরিয়া সাব রেজিষ্টার অফিস থেকে বদলী হয়ে পেকুয়া সাব-রেজিষ্টার অফিসে যোগদান করেন অর্চনা। আর পেকুয়ায় যোগদান করেই শুরু করেন বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্যে আর অনিয়ম-দূর্নীতি। অর্চনার চাহিদা মতো ঘুষের টাকা না দিলে দলিল লেখক ও দলিল লেখক সহকারী মুন্সিদের নানাভাবে হয়রানী করা হয়া। দলিল নিবন্ধনের সময় সরকারী ফি’র ব্যাংকে চালানের মাধ্যমে জমা দিলেও নিবন্ধনের সময় অর্চনাকে নির্দিষ্ট হারে ঘুষের টাকা দিতে হচ্ছে বলে জানা গেছে। অর্চনা সাব-রেজিস্টার অফিসে একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করে জমি নিবন্ধনে আগত সেবা প্রার্থী ও দলিল লেখকদের চরমভাবে হয়রানী করে যাচ্ছেন। তার নেতৃত্বে পেকুয়া সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসে একটি সিন্ডিকেট করে রাতে বা আন-অফিসিয়ালি সময়ে রেজিস্ট্রী সম্পাদন করে সেবা প্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। অফিসের অন্য কর্মচারীদের তোয়াক্কা না করে এসব অপকর্ম করে যাচ্ছেন বিতর্কিত অর্চনা।
পেকুয়া সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে আগত একাধিক সেবা প্রার্থীরা জানিয়েছেন, সরকারি ফি ছাড়া প্রতি লাখে এক হাজার টাকা করে ঘুষ দিতে হয় অর্চনাকে। এভাবে জমি ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে সংশ্লিষ্ট দলিল লেখকদের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন প্রধান সহকারী অর্চনা। ঘুষের দুই ক্যাটাগরিতে দলিল সম্পাদন হয় পেকুয়া সাব রেজিষ্টার অফিসে। প্রথম ক্যাটাগরি দলিলের মূল্য ২০ লাখের কম হলে সেক্ষেত্রে ঘুষ দিতে হয় প্রতি লাখে নয়শত টাকা। আর দলিলের মূল্য যদি ২০ লাখের বেশি হয় সেক্ষেত্রে ঘুষ দিতে হয় প্রতি লাখে আটশত টাকা। দলিল লেখকের নামে কয়টি দলিল সম্পাদন হয়েছে তার হিসাব অনুযায়ী ঘুষের টাকা হিসেবে করে আদায় করেন অর্চনা। এ ছাড়া সাব রেজিষ্টার অফিস থেকে দলিলের অবিকল নকল কপি তুলতে নকলনবিস বিকাশ চৌধুরী, নকলনবিস তারেকুর রহমানকে দিতে হয় সরকারি ফি’র বাইরে অতিরিক্ত দেড় হাজার টাকা। এভাবে সাব রেজিষ্ট্র অফিসের কর্মচারীরা যে যার যার মতো নিজেদের খেয়াল খুশিমতো দেদারসে ঘুষের টাকা আদায় করে পুরো সাব রেজিস্ট্রি অফিসকে ‘ঘুষের হাটে’ রুপান্তর করেছেন। এ ধরনের গুরুতর অনিয়মে ডুবলেও পেকুয়া সাব রেজিষ্টার অফিস নিয়ে কোন ধরনেই মাথা ব্যথা নেই জেলা রেজিষ্টার অফিসের।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে পেকুয়া সাব-রেজিস্টার অফিসের প্রধান সহকারী অর্চনার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সমূহ অস্বীকার করেছেন।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কক্সবাজার জেলা রেজিস্টার বলেন, পেকুয়া সাব রেজিস্টার অফিসের প্রধান সহকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।
পাঠকের মতামত: