আসন্ন ৩১ মার্চ ২য় দফা ইউপি নির্বাচনে পেকুয়া উপজেলার সাত ইউপিতেও ভোট যুদ্ধ শুরু হচ্ছে। এরই মধ্যে স্ব-স্ব ইউনিয়নের প্রার্থীরা প্রতীক বরাদ্ধ পেয়ে অবিরাম নির্বাচনী প্রচরণা চালিয়ে যাচ্ছে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় প্রচারনায়ও জাতীয় আমেজ দেখা দিয়েছে পুরো এলাকায়। স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও চালাচ্ছে তাদের নিজেদের মত করে নির্বাচনী প্রচারনা।
এ নিয়ে সদর ইউপির নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ আ’লীগ থেকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী গোয়াখালী এলাকার মরহুম হাজ্বি কবির আহমদ (সাও) এর পুত্র বীর মুক্তিযুদ্ধা এ্যাড: কামাল হোসেন। তিনি ১৯৪৮ সালে ৩০জুন সদর ইউপির পূর্ব গোয়াখালী এলাকায় জন্ম গ্রহন করেন। ১৯৬৩ সালে পেকুয়া জিএমসি থেকে এসএসসি, ১৯৬৫ সালে চট্রগ্রামস্থ সরকারী বাণিজ্য কলেজ থেকে এইচএসসি, ১৯৬৭ সালে উক্ত কলেজ থেকে øাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ১৯৮১ সালে চট্রগ্রাম আইন কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করে অদ্যবধি আইনজীবি পেশায় লিপ্ত রয়েছেন। এরই মাঝে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত হয়ে পেকুয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের প্রতিষ্টিত সাধারণ সম্পাদক ও চকরিয়া থানা আ’লীগের সদস্য নির্বাচিত হন। মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ গ্রহন করেন। রাজাকার আলবদরের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে এলাকা ছাড়া হন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তি চকরিয়া থানা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক (১৯৭৩-১১৯৮৬) নির্বাচিত হন। এরপর জেলা আওয়ামীলীগের কমিটিতে (২০০২-২০১৫) থাকে মুক্তিযুদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক মনোনিত করেন। বর্তমানে পেকুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এরই মাঝে জিএমসি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষাকতা ছাড়াও চকরিয়া আইজীবি সমিতিতে বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালন ও উপজেলার বিভিন্ন স্কুল/কলেজ/ মাদ্রাসার কমিটিতে সম্মানের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও সদর ইউপিতে একে একে ৩ বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত থেকে এলাকায় উন্নয়নের ব্যাপক ভুমিকা রাখায় সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন পদকে ভুষিত হন। বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী থাকে নৌকা প্রতীক হাতে তুলে দেওয়ায় আবারো ভাল মানুষের জয় হয়েছে বলে এলাকায় ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বর্তমান চেয়ারম্যান বাহাদুর শাহ। তিনি সদর ইউপির শেখের কিল্লা ঘোনা এলাকার মরহুম আলহাজ্ব অছিউর রহমানের পুত্র। পুরো এলাকায় তার পরিবারের ব্যাপক সুনাম রয়েছে। তারও রয়েছে সচ্ছ ইমেজ। বিগত সময়ে পেকুয়ার সন্তান সালাউদ্দিন আহমদ বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত হলে তিনিও বিএনপির সাথে জড়িত হয়ে পড়েন। এরই মাঝে ২০০৩ সালে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মনোনীত হয়ে অদ্যবধি দায়িত্ব পালন করে চলছে। বিগত ২০১১সালের ইউপি নির্বাচনে সদর ইউনিয়ন পরিষদে আ’লীগের প্রার্থী আবুল কাশেমকে অল্প ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তবে বিগত বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার সময় পেকুয়ায় ব্যাপক নাশকতায় তার ইন্ধন রয়েছে মর্মে মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন তিনি। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে আনারস মার্কায় ভোট যুদ্ধে নেমেছে বিএনপি নেতা সদরের মছিন্যাকাটা এলাকার শাহালম। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর পক্ষে হাত পাকা প্রতীক নিয়ে নাসির উদ্দিনও রয়েছে নির্বাচনে।
সদর ইউপির ৯ ওয়ার্ডে সরোজমিন গিয়ে স্থানীয় জনগনের কথা বলে জানা গেছে, মূলত ভোট যুদ্ধে লড়াই হবে নৌকা আর ধানের শীষ প্রতীকে। সাবেক ৩ বারের জনপ্রিয় চেয়ারম্যান ক্লিন ইমেজ হিসাবে এলাকায় ব্যাপক পরিচিত পাওয়া নৌকা প্রতীকের কামাল হোসেন বিগত বিএনপি সরকারের আমলেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার হাত থেকে শ্রেষ্ট চেয়ারম্যান হিসাবে স্বর্ণের মেডেল পেয়েছিলেন। তার গ্রাম আদালতে শালীষি বিচার এলাকায় বেশ পরিচিতি লাভ করেছিল। এমনকি তার নিজের পিতার বিচার করে এলাকায় প্রশংসাও কুড়ায়। তার আমলে নারী নির্যাতন, তালাক দেওয়া ছিল সম্পূর্ন বন্ধ। গ্রামে গ্রামে গিয়ে তাৎক্ষনিক শালিষ বৈঠকের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতেন বলে মারামারি হানাহানি আর মামলাও কমে গিয়েছিল। বিশেষ করে নির্যাতিত মহিলার প্রিয় চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। এ বিষয়টি আবারো সামনে চলে এসেছে। বৃদ্ধা রমিজা, আম্বিয়া, আরফা জানান, আমি নৌকা ধানের শীষ বুঝিনা। কামাল হোসেন না হলে আমাদের সংসার থাকতো না। তার চেয়ারম্যান আমলে আমরা সঠিক বিচার পেয়েছিলাম। অন্যদিকে এক বৃদ্ধ নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আমার এক ছেলের পরিবারের অত্যাচারে অতিষ্ট ছিলাম। বিষয়টি কামাল চেয়ারম্যান জানতে পেরে তাৎক্ষনিক ছেলেদের ডেকে নিয়ে সতর্ক করে দেন। এ পর্যন্ত আমি পুরো পরিবার নিয়ে যতেষ্ট সুঃখে আছি। ঠিক এলাকার আপমর জনগনের প্রিয় পাত্র কামাল চেয়ারম্যান। রাজনীতির বাইরের বেশি ভোট তিনি আদায় করতে পারবেন বলে সাধারণ ভোটেররা মনে করেন। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ও সহযোগি সংগঠন ঐক্যবন্ধ থেকে তাকে বিজয়ী করার সংকল্প করেছেন দলের নেতারা। দলের শীর্ষ নেতারা মনে করেন বর্তমান সরকারের উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে চাইলে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করতে হবে। জোড় সরকারের অপর জাতীয় পার্টির নেতারাও তার পক্ষে মাঠে রয়েছে বলে পার্টির সূত্রে জানা গেছে।
অন্যদিকে বাহাদুর চেয়ারম্যান সম্পূর্কেও অনেক ভোটার ভাল ধারণা দিয়েছেন। তিনি পাঁচ বছর চেয়ারম্যান থাকাকালে বর্তমান সরকারের দেওয়া বরাদ্ধগওলো যতাযত বাস্তাবায়নের চেষ্টা করেছেন। কিছু এমইউপির কারণে তা বাধাগ্রস্ত হলেও তা কাঠিয়ে ওঠেছেন। আবার অনেক ভোটার মনে করেন শালিষ বিচারে তার বেশ কিছু বির্তকিত ভুমিকা ছিল। দিনের পর দিন বিচারের জন্য ইউপি কার্যালয়ে দৌড়াতে হয়েছে সাধারণ জনগনকে। সাধারণ ভোটারেরা নির্বাচনে এবিষয়টি সামনে নিয়ে আসায় তার জন্য কাল হতে পারে। সবচেয়ে বড় কারণ হতে পারে দলের বিদ্রোহ। বিএনপি নেতা শাহালম স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও তার রয়েছে একটি ভোট ব্যাংক। সদরের পূর্ব পার্শ্বের বেশ কয়েকটি গ্রামে তার ভোট ব্যাংক রয়েছে। তিনি চেয়ারম্যান হওয়ার মতো ভোট না পেলেও এ এলাকার ভোটগ্রলো তাকেই দেওয়ার কথা বলেছেন তার আশেপাশে এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিরা। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী নাসির উদ্দিনের জামানত ঠিকিয়ে রাখার মতো ভোট পাবেনা বলে এলাকাবাসীর ধারণা। এখন দেখার বিষয় ৩১ মার্চ কে হচ্ছে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ন এলাকা পেকুয়া সদর ইউর্পি চেয়ারম্যান।
পাঠকের মতামত: