ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

পরিস্কার বেগমের ২৫লাখের ষাঁড়টি বিক্রি হলো ১০ লাখে

cowমানিকগঞ্জ প্রতিনিধি :::

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার দেলুয়া গ্রামের পরিস্কার বেগম তার ষাঁড়টির দাম চেয়েছিলেন ২৫ লাখ টাকা। শেষ পর্যন্ত সেটি বিক্রি হলো ১০ লাখ টাকায়। বিষয়টি শনিবার দুপর ২টার দিকে পরিস্কার বেগমের কন্যা ইতি আক্তার নিশ্চিত করেছেন।

ইতি জানান, ‘প্রতিদিন  থেকে ৪- ৫ হাজার লোক পর্যন্ত ভিড় জমিয়েছে ‘লক্ষ্মী সোনা’ নামের ষাঁড়টি দেখার জন্য। মাঝে অব্যশ্য চোর ডাকাতও ঢু মারত আমাদের বাড়িতে। ভাগ্য খারাপ তাই লোকসান দিয়ে শুক্রবার রাতে প্রাণ আরএফএল গ্রুপের কাছে ‘লক্ষ্মী সোনা’ ষাঁড়কে  মাত্র ১০ লাখ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে।

পরিস্কার বেগম জানান, তার ষাঁড়কে কেনার জন্য অভিনেতা ডিপজল লোকজন পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু কিছু বেপারির জন্য তখন বিক্রি করতে পারেননি। তাই বাজার ভালো না থাকার কারণে ৪-৫ লাখ টাকা লোকসান দিয়ে ১০ লাখ টাকায় বিক্রি করতে হলো। পরিস্কার বিবি দাবি করেন, উপযুক্ত দাম থাকলে ১৪-১৫ লাখ টাকা দাম পেতেন ।

এ ব্যাপারে সাটুরিয়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ নিতাই চন্দ্র দাস জানান, সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে লালন করা এ ষাঁড়টি এক নজরে দেখতে  প্রতিদিন উৎসুক মানুষ সাটুরিয়া উপজেলা ছাড়াও বিভিন্ন জেলা থেকে আসত ষাঁড় দেখতে। এ ষাঁড়টি উচ্চতা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি, লম্বা ৯ ফুট, ভেড় ৬ হাত আমাদের হিসেব অনুযায়ী সর্বনিম্ন ওজন হবে ৩৫ মন। বর্তমানে এটি মানিকগঞ্জ জেলার সব চেয়ে বড় ও ওজনের ষাঁড়। ১০ লাখ টাকায় বিক্রি করাতে তাদের লোকসান হয়েছে। ১৪-১৫ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারলে তাদের কিছু টা হলেও লাভ হতো।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গত বছরের একই উপজেলার বালিয়াটী গ্রামের তাড়া মিয়ার ২২ লাখ টাকার ষাঁড়ের চেয়েও বড় এ ষাঁড়টি।

পরিস্কার বেগমের কন্যা ইতি আক্তার জানান, এ ষাঁড়টিকে কোনো প্রকার মোটা তাজাকরণ ওষুধ সেবন ছাড়াই দেশীয় পদ্ধতিতে লালন পালন করা হয়েছিল। তাকে ছাড়া কেউ তার ষাঁড় লক্ষ্মীকে শান্ত করতে পারত না, তার ষাঁড়টিকে লক্ষ্মী বলে ডাকলে কথা বেশি শুনে, রাগ উঠলে নলকুপের ঠান্ডা পানি শরীরে ছিটিয়ে দিলে সে শান্ত হয়ে পড়ত।

এদিকে লক্ষ্মীকে ভিন্ন রকমের দেশীয় খাবার খাওয়ানো হতো। তিন বেলা বড় ধরনের খাবারের মধ্যে ছিল, চিড়া, ছুলা, গুড় ও ভুষি পানিতে ভিজিয়ে রাখার পর মিষ্টি লাউ, কুমড়া কেটে সিদ্ধ করে সব একত্র করে তিন বেলা খাওয়ানো হতো। বড় খাবারের পাশে ছিল লেবু, মাঝে মাঝে টক পানি তো আছেই। এক ঘন্টা পর পর নাস্তা সারেন বিচি কলা ও সবড়ি কলা দিয়ে। তাকে নিয়মিত স্যালাইন খাওয়া নো হয়।  ২৪ ঘন্টা বৈদ্যুতিক পাখা দিয়ে বাতাস দিতে হতো।

ইতি আরো জানান, তার বাবা খাইরুল ইসলাম তাদের জন্য বাজার থেকে চাউল কিনতে ভুলে গেলেও লক্ষ্মীর জন্য আঙ্গুর, কমলা ও মালটা আনতে ভুল করেন না। প্রতিদিন ফল খাওয়ান প্রায় ৩-৪ শ’ টাকার।

পরিস্কার বিবি জানান, লক্ষ্মীর মা এক মাস ২২ দিন পর মারা যায়। পড়ে নিজের সন্তানের মতো করে আস্তে আস্তে  লালন করতে থাকি। সাড়ে তিন বছর ধরে আমার স্বামী খাইরুল ও কন্যা ইতি তিনজন মানুষ ওর পিছনে পরিশ্রম করে আজকে পর্যন্ত নিয়ে আসছি। শেষ দেড় বছর প্রতিদিন এক হাজার টাকা খরচ হচ্ছে ওর পিছনে।

পরিস্কার বিবির পাশের বাড়ির রশিদ জানান, এ লক্ষ্মীকে বিক্রি করে দেবার পর তাকে বিদায় জানানোর সময় এক করুণ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। পরিবারে সময় তখন লক্ষ্মীর জন্য কানায়  ভেঙে পড়েন। লক্ষ্মীকে সাড়ে ৩ বছর নিজের সন্তানের মতোই আগলে রেখেছিল পরিস্কার বিবি।

পাঠকের মতামত: