ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

টেকনাফে পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে রোহিঙ্গারা সরানোর উদ্যোগ নেই!

teknaf news picগিয়াস উদ্দিন ভুলু, টেকনাফ :::

টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার পাহাড় গুলো দখল করে নিয়েছে রোহিঙ্গারা। তাদেরকে দখল দিয়ে বসবাস করতে সাহয্য করছে চিহ্নত ভূমি ওপর ও পাদদেশে মারাÍক ঝুঁকি নিয়ে ১০ হাজার পরিবার বসবাস করছে। দিন দিন বেড়ে চলছে পাহাড়ের ঢালে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসতি স্থাপনকারীর সংখ্যা।

উপজেলার এগার ইউনিয়নের বিভিন্ন বৃক্ষহীন পাহাড় দখল করে বসতি স্থাপনকারী এসব পরিবারের ৫০ হাজারেরও বেশী লোকের জীবন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। দরিদ্র ভুমিহীনসহ দখলদার ভুমিদস্যুরা এবং অবৈধ অভিভাসি রোহিঙ্গারা স্থানীয় প্রশাসন ও বন বিভাগকে তোয়াক্ষা না করে বনভূমিসহ সরকারী খাস জমি দখল করে বসতি স্থাপন করছে। অনেক সময় নির্বিচারে গাছ এবং মাটি কাটার ফলে পাহাড় ও টিলাগুলো ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে। বিগত দেড় মাস ধরে মুষলধারে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায়,

মাটি নরম হয়ে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। এতে বসতঘর ভেঙ্গে যাওয়াসহ প্রাণহানীর ঘটনা বেড়ে চলছে।

গত বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধ্বসে রামুর কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের লট উখিয়ারঘোনা এলাকার আমির হোসেন (৩৫) ও রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের মিতার ছড়া এলাকার মো. রিদুয়ান (১০) প্রাণ হারিয়েছেন।

চলতি বর্ষা মৌসুমে গত ১ সপ্তাহ ধরে ভারি বর্ষনে রামু কাউয়ারখোপ লট উখিয়া ঘোনাসহ বেশ কিছু স্থানে পাহাড় ধ্বসের ঘটনা ঘটলেও কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

 নির্বিচারে পাহাড় কাটা এবং অবৈধ বসতি স্থাপনকারীর ব্যাপারে জরুরী ভিত্তিতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আরো বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশংকা প্রকাশ করে পরিবেশবাদীরা অভিযোগ করেন। বৃক্ষ নিধন করে নির্বিচারে পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন ও পাহাড়ের মাটি নরম করে পাথর উত্তোলনও অনেক সময় ধসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন ও বন বিভাগ তাঁদের বিরুদ্ধে কার্যত উল্লেখযোগ্য কোন ভূমিকা নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ তোলেছেন সচেতন মহল।

সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা জানান, রামু উপজেলার ১১ ইউনিয়নের মধ্যে ৯টি ইউনিয়নের অধিকাংশ স্থানের বৃক্ষশূন্য পাহাড় ও টিলা রয়েছে। এসব পাহাড় ও টিলায় অতি দরিদ্র ভূমিহীন মানুষসহ ভূমি দখলদারদের আশ্রিত পাহারাদার এবং রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়ে বসতি গড়ে তুলে। এ কারণে সরকারী খাস ও বন বিভাগের পরিত্যক্ত পাহাড়ে বসতি স্থাপনকারীর সংখ্যা আশংকাজনক হারে বাড়ছে দিন দিন। এ নিয়ে উপজেলা প্রশাসন এবং বনবিভাগের প্রতিরোধ মূলক কোন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।

উপজেলা গর্জনিয়া ইউনিয়নের উত্তর ক্যাজর বিল, পশ্চিম ক্যাজর বিল, বেলতলী শিয়াপাড়া, জাউস পাড়া শিয়াপাড়া, পূর্ব জুমছড়ি, পশ্চিম জুমছড়ি, মন্যাকাটা, জারুলিয়াঝিরি, লোহার ঝিরি, হাজির পাড়া, খাইছাখেলা, জোরানিখোলা, ঘোনাপাড়া, হরিণ পাড়া, নারিচ বানিয়া শিয়াপাড়া, দক্ষিন থিমছড়ি, পূর্ব থিমছড়ি এলাকায় ৮শত পরিবার। কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের ফকিরনির চর, শহর আলীর চর, ফাঁক্রিকাটা মুরাপাড়া, কচ্ছপিয়া মুরাপাড়া, দোছড়ি দক্ষিণ কুল মুরাপাড়া, ওদাইয়াকাটা, বড় জামছড়ি

নদীর পশ্চিমকুল পাহাড় পাড়া, বড় জামছড়ি নদীর পূর্ব পাহাড়পাড়া, মৌলভীকাটা নদীর পশ্চিমকুল পাহাড়পাড়া এলাকায় ৭শত পরিবার। কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের লট উখিয়ারঘোনা মুরারকাচা, পশ্চিম মনিরঝিল দরগাপাড়া, পূর্ব মনিরঝিল পাহাড়পাড়া, মইশকুম ও উখিয়ারঘোনা এলাকায় ৭শত পরিবার। রশিদনগর ইউনিয়নের লম্বাঘোনা, গোলাম আলীর ঝুম, হরিতলা, পূর্ব খাদেমর পাড়া, থলিয়াঘোনা ও পাহাড়তলী এলাকায় ৭শত পরিবার। ঈদগড় ইউনিয়নের উত্তর চরপাড়া, ধুমছাকাটা, চেংছড়ি, কোনার পাড়া বুরু¹্যার শিয়া, খরুলিয়া মুরা ও বৈদ্যপাড়া এলাকায় ১ হাজার পরিবার।

জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের পূর্ব জোয়ারিয়ানালা মুরা পাড়া, নন্দাখালী মুরা পাড়া, উত্তর মিঠাছড়ি পাহাড়ীয়াপাড়া, পূর্ব নোনাছড়ি পাহাড়িয়া পাড়া ও ব্যাঙডেবা এলাকায় ৮শত পরিবার। রাজারকুল ইউনিয়নের ভিলিজার পাড়া, ঘোনারপাড়া, ছাগলিয়াকাটা, কাট্টলিয়া পাড়া, পশ্চিম ঘোনার পাড়া, চৌকিদার পাড়া, দক্ষিণ সিকদার পাড়া ও পাহাড়তলী এলাকায় দেড় হাজার পরিবার। দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের খরুলিয়ারছড়ি, জিনরঘোনা, পানের ছড়া পশ্চিমকুল, সমিতি পাড়া, কালা খন্দকার পাড়া, ঘোনার পাড়া ও মোরাপাড়া এলাকায় ৮ শত পরিবার এবং খুনিয়াপালং ইউনিয়নের দারিয়ারদীঘি, পশ্চিম দারিয়ারদীঘি, পশ্চিম দারিয়ারদীঘি, খুনিয়াপালং ও উত্তর পাড়া, পশ্চিম গোয়ালিয়াপালং, পশ্চিম ধেচুয়াপালং, পূর্ব ধেছুয়াপালং, পেঁচারদ্বীপ, হিমছড়ি, মাঙ্গালাপাড়া, দক্ষিণপাড়া, করাচিপাড়া, দরিয়ানগর, এলাকায় ৩ হাজার পরিবার পাহাড়ের ঢালে বা পাদদেশে অথবা চূড়ায় ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার জানান, বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি হলেই নদী, ছড়া পানিতে ভরে যায়। এসময় নদী, ছড়া থেকে বালি বা মাটি তোলা যায় না। তাই অনেক সময় এলাকার উন্নয়ন কর্মকান্ডের জন্য বাধ্য হয়ে পাহাড় থেকে বালি, মাটি আনতে হয়।

রামু প্রেস ক্লাবের উপদেষ্টা দর্পন বড়–য়া বলেন, বনাঞ্চলের বৃৃক্ষ নিধন, পাহাড় ও টিলার মাটি কেটে বসতি স্থাপনকারী অধিকাংশই মায়ানমার রোহিঙ্গা নাগরিক। বছরের পর বছর এদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা সংরক্ষিত বনাঞ্চলে পাহাড়ের পাদদেশে বসতি স্থাপন করে বসবাস করলেও প্রশাসন কিংবা বন বিভাগ এদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।

বনবিভাগ জানান, উপজেলার ফতেখাঁরকুল ও চাকমারকুল ইউনিয়ন ছাড়া প্রায় সব ইউনিয়নের বন বিভাগের পাহাড়ে অবৈধ বসতি স্থাপনকারী রয়েছে। এদের অধিকাংশই ভূমিহীন অথবা রোহিঙ্গা। পাহাড়ে এক স্থানের এদের ঘর ভেঙ্গে দিলে অন্য কোন স্থানে আবার বসতি স্থাপন করে। লোকবলের অভাবে পাহাড়ে অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের স¤পূর্ণ উচ্ছেদ করা সম্ভব হয় না।

রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম বলেন, বৃক্ষ শূন্য পাহাড়গুলোতে ঘাসের আচ্ছাদন নষ্ট করার ফলে দ্রুত ভূমি ক্ষয় হয়ে ঝুকির মাত্রা বাড়ায়। বনভুমি দখল, নির্বিচারে গাছ ও পাহাড় কাটা, পাথর উঠানোর ফলে পাহাড় ধ্বসের ঘটনা ঘটে। বনভূমি দখল ও অবৈধ বসতি স্থাপনের ব্যাপারে জাতীয়ভাবে প্রতিরোধ করতে পারলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং পরিবেশের ভারসাম্য পাওয়া সম্ভব। এ ব্যাপারে সরকার ও সচেতন মানুষকে সমভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

পাঠকের মতামত: