অমাবস্যার অস্বাভাবিক জোয়ারে ভাসছে টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের ১৫ গ্রামের মানুষ । এসব মানুষ আশ্রয়ের খোঁজে অন্যত্রে চলে গেলেও পানীয় জলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে ।
সংশ্লিষ্ট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গত ৫ থেকে ৮ জুন বঙ্গোপসাগরে জোয়ারের পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপের হারিয়াখালী, কচুবনিয়া, কাটাবনিয়া, লাফাঘোনা, ঘোলাপাড়া, ক্যা¤পপাড়া, মাঝরডেইল, জালিয়াপাড়া, মগপুরা, উত্তরপাড়া, ডাংগরপাড়া, পশ্চিমপাড়া, মাঝরপাড়া, দক্ষিণপাড়া, হাজিপাড়া এলাকার অধিকাংশ গ্রামের নলকূপে লবণাক্ত লোনা পানি প্রবেশ করায় এখন তা গৃহস্থালির কাজে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তেমনি ওই সকল গ্রামের প্রায় সাড়ে আট শতাধিক বসতবাড়ি জোয়ারের পানিতে ভাসছে।
গতকাল বূধবার সরেজিমন গিয়ে দেখা যায়, হারিয়াখালী, পশ্চিমপাড়া, ক্যা¤পপাড়া, মাঝরডেইল, মগপুরা, উত্তরপাড়া, ডাংগরপাড়া, ঘোলাপাড়া, হাজিপাড়াসহ ১৫ গ্রামে জোয়ারের সময় পানি ঢুকছে। কিন্তু জোয়ারের উচ্চতা কমে আসলেও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে আছে অন্তত ৮৬টি পাতকুয়া ও ২৪১টি নলকূপ। এসব এলাকায় খাওয়ার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
পশ্চিমপাড়ার এলাকার বাসিন্দা ফরিদুল আলম জানান, তাঁদের গ্রামসহ পুরো ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে প্রায় সাড়ে আটশতাধিক ঘরবাড়ি।
ঘোলাপাড়ার গৃহিনী রমিদা আক্তার বলেন, প্রতিদিন দুইবার জোয়ারের পানি ঘরে ঢুকছে। বুকসমান পানিতে কি বসবাস করা যায়। তাই পাশ্ববর্তী বাঁধের উচুস্থানে পলিথিন টাঙ্গিয়ে আশ্রয় নিয়েছি। বাড়িতে থাকা নলকূপে জোয়ারের পানি ঢুকে লবণাক্ত হয়ে পড়ায় এখন খাওয়ার পানি নিয়ে তীব্র সংকটে রয়েছি।
৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরুল আমিন বলেন, জোয়ার-ভাটার আতঙ্কে ইউনিয়নের অন্তত ৪০ হাজার মানুষের চোখে ঘুম নেই। এলাকায় বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির তীব্র সংকট। তাই জরুরি ভিত্তিতে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির ব্যবস্থা না করলে স্থানীয় লোকজন ডাইরিয়া ও পানিবাহিত রোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবে।
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, অমাবস্যার জোয়ারের পানি কমতে শুরু হলেও প্লাবিত ১৫ গ্রামের পানীয় জলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এতে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি সাগরে বিলীন হয়ে প্রায় দু হাজারের বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। এরপরও প্রতিনিয়ত দুইবার জোয়ার-ভাটায় প্লাবিত হচ্ছে। এলাকার আরও কয়েকটি স্থানের বেড়িবাঁধ ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী ক্য ছাই মং চাক বলেন, লবণাক্ত জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় ওই এলাকার পাতকূয়া ও নলকূপগুলোর পানি গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার ও খাওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। জোয়ারে পানি কমে গেলে ব্যবহার উপযোগি করে তুলা সম্ভব হবে এর আগে নয়।
টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আহমদ বলেন, ১৫গ্রামের প্রায় সাড়ে আট শতাধিক বাড়িঘর বুকসমান পানির নিচে ডুবে রয়েছে। সেখানে চলছে পানীয় জলে তীব্র সংকট ও তাদের রান্নাবান্না বন্ধ থাকায় লোকজন না খেয়ে থাকছে। তাই ক্ষতিগ্রস্থ লোকজনের মধ্যে খাবার ও পানি বিতরণের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, সরকারিভাবে এখনও ত্রাণসামগ্রী পাওয়া যায়নি পাওয়া গেলে দ্রুত বিতরণ করা হবে।
পাঠকের মতামত: