ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

জেলায় ফের বেড়েছে ডেঙ্গুর ‘প্রকোপ’

কক্সবাজার প্রতিনিধি ::  কক্সবাজারে আবার বেড়েছে ডেঙ্গু প্রকোপ। গত ২৪ ঘণ্টায় সনাক্ত হয়েছে ১৩ জন ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত রোগি। তৎমধ্যে মাত্র ৩ জন রোগি ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে কক্সবাজার এসেছেন। বাকি সবাই আক্রান্ত হয়েছে কক্সবাজারে। হঠাৎ একদিনে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের হার আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় আবারও মানুষের মধ্যে ‘ডেঙ্গু’ আতঙ্ক তৈরী হচ্ছে।
জানা গেছে, শুরুর দিকে কক্সবাজারে ডেঙ্গু জ¦রের প্রকোপ কিছুটা বেশি ছিল। এরপর ধীরে ধীরে কমে আসে। সর্বশেষ চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে আরও কমে এসেছিল ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের হার। আক্রান্তের চেয়ে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়ে বাড়ি ফেরার সংখ্যাই বেশি ছিল। কিন্তু বুধবার ও বৃহস্পতিবার হঠাৎ করে ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্তের প্রকোপ বেড়ে গেছে। যা রীতিমত মানুষকে উদ্বীগ্ন করে তুলেছে।
তবে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, ঈদের সময়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা আগে থেকেই ছিল। এরজন্য স্বাস্থ্য বিভাগ প্রস্তুত ছিল। তাই একদিনে ১৩ জন শনাক্ত হওয়াতে উদ্বেগের কারণ নেই বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরিসংখ্যাবিদ পঙ্কজ পাল জানান, বুধবার (৭ আগষ্ট) সকাল ৯টা থেকে বৃহস্পতিবার (৮ আগষ্ট) সকাল ৯ টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ জন রোগি সনাক্ত হয়েছে। তৎমধ্যে ১০ জন রোগি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ৯ জন ও শহরের বেসরকারী ডিজিটাল হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১ জন। এনিয়ে সিভিল সার্জনের হিসাবমতে ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত এখন পর্যন্ত ৭৪ জন সনাক্ত হয়েছে। এই ২৪ ঘণ্টায় তুলনামূলকভাবে ডেঙ্গু শনাক্ত রোগি বেড়েছে বলে জানান তিনি।
পঙ্কজ পালের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হওয়া ১৩ জনের মধ্যে সদরে ৭ জন (অধিকাংশ পৌরসভায়), রামুতে ১ জন, উখিয়ায় ২ জন, পেকুয়ায় ১ জন, মহেশখালীতে ১ জন ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১ জন। এখন পর্যন্ত কক্সবাজার পৌরসভা এলাকায় ডেঙ্গু রোগি বেশি। তাই পৌর এলাকার লোকজনকে বাড়তি সতর্ক থাকার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত আটটা পর্যন্ত ডেঙ্গু শনাক্ত রোগি ভর্তি রয়েছে ২৫ জন। এরমধ্যে নতুন ভর্তি হয়েছে ৫ জন। বৃহস্পতিবার চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে গেছেন ২ জন রোগি।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. মহিউদ্দিন বলেন, নতুনভাবে ভর্তি হওয়া ৫ জনের মধ্যে তিনজনই ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে এসেছেন। ঢাকায় শনাক্ত হওয়ার পর কক্সবাজার চলে আসে।
তিনি আরও বলেন, ‘আজ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগির সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু এটা উদ্বেগ তৈরী করার মতো নয়। কারণ এখন ঈদে সবাই ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরবেন। স্বাভাবিকভাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগির সংখ্যা কিছুটা বাড়তে পারে। আজকালের মধ্যে এটা আবার কমেও যেতে পারে।’
ডা. মো. মহিউদ্দিন বলেন, ঈদের সময়ে ডেঙ্গু জ¦রের প্রকোপ বৃদ্ধির আগে থেকেই আশঙ্কা ছিল। সেই হিসেবে আমরা আগে থেকেই বাড়তি প্রস্তুতি নিয়েছি। কাজেই এটা নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। তবে লোকজনকে আরও সচেতন হতে হবে। আশপাশ পরিস্কার করে বিশেষ করে ডেঙ্গু ভাইরাসের লার্ভা উৎপন্ন হতে পারে এমন সম্ভাব্য স্থান সব সময় পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। তাহলেই ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সম্ভব। কারণ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নেওয়ার চেয়ে আগে থেকেই ডেঙ্গু জীবানুবাহী মশা উৎপাদন প্রতিরোধ করা জরুরি।
সূত্রমতে, ইতোমধ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। যারা সেখানে ইতোমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন তারাও ফিরে আসছেন। আবার ঢাকায় বা জেলার বাইরে ডেঙ্গুর জীবানুবাহী মশার কামড়ের পর বাড়িতে এসেও অসুস্থ হচ্ছে। এছাড়াও ঈদের পরদিন থেকে কক্সবাজারে বিপুল পরিমাণ পর্যটকের সমাগম ঘটবে। পর্যটকদের মধ্যেও অনেকে ডেঙ্গু জীবানুবাহী মশার কামড়ের শিকার লোকজন থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই ঈদে ডেঙ্গু ভাইরাসের চরম প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে ধারণা করছে, ইতোমধ্যেই প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে। তাই লোকজনকে অনেকবেশি সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্যবিভাগ।
এদিকে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কক্সবাজার পৌরসভা এলাকাতেই ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত রোগির সংখ্যা বেশি। সর্বশেষ বুধবার সকাল ৯টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত শনাক্ত হওয়া ১৩ জনের মধ্যে ৭ জনই পৌরসভা এলাকার। তাই জেলার মধ্যে কক্সবাজার পৌরসভা এলাকাকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে দেখছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

পাঠকের মতামত: