ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে রাজী নন কেউ

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ে জমজমাট ঘুষ বাণিজ্য

বিশেষ প্রতিবেদক, কক্সবাজার :: কক্সবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়, যেখান থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় জেলা সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষা দান। জেলার সেই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানটি ঘিরে যুগের পর যুগ চলছে প্রকাশ্যে ঘুষ বাণিজ্য। নতুন পদায়ন, বদলী থেকে শুরু করে শিক্ষকদের প্রতিটি ধাপে ধাপে নির্ধারিত ঘুষ প্রদান করতে হচ্ছে।
অথচ এসব বিষয়ে কোন ভাবেই কথা বলতে রাজী হননি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, তার যোগসাজসে ঘুষ আদায়কারি উচ্চমান সহকারি ও অফিস সহকারি। একই সঙ্গে বিষয়টি আলাপ করার জন্য দীর্ঘ ১৫ দিন চেষ্টা করেও কথা বলেননি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকও।

কক্সবাজার জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শতাধিক শিক্ষকের সাথে কথি বলে প্রাপ্ত তথ্য মতে, কক্সবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নেতৃত্বে প্রকাশ্যে ঘুষ বাণিজ্যের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে রূপ নিয়ে কার্যালয়টি। প্রতিষ্ঠানটির উচ্চমান সহকারি রফিক উদ্দিন, অফিস সহকারি মোহাম্মদ ইয়াছিন ও বশির আহমদ শিক্ষকদের নির্ধারিত অংকের ঘুষ আদায় অব্যাহত রেখেছেন। বিষয়টি নিয়ে কেউ কোন প্রতিবাদ করলে নানাভাবে হয়রানী করা হচ্ছে শিক্ষকদের।

বর্তমানে উপজেলার অভ্যন্তরে শিক্ষক বদলীকে পুঁজি করে প্রতিজনে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা করে ঘুষ আদায় শুরু হয়েছে। অথচ সরকারি বিধি মতে নিয়মাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এই বদলী হওয়ার কথা। এর আগে গত নভেম্বর মাসে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের পদায়নকে পুঁজি করে ৪ কোটি টাকা উৎকোচ আদায় করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে অভিযোগ দায়ের করেছেন কক্সবাজার জেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি কামাল উদ্দিন পিয়ারু। অভিযোগের অনুলিপিটি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী, সচিব, দুদক চেয়ারম্যান, কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সহ ১৪ টি দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
হয়রানীর শিকার শিক্ষকরা জানিয়েছেন, কক্সবাজার জেলায় ৪৮৮ জন শিক্ষককে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। শিক্ষা অধিদপ্তরের নিদের্শনা মতে, এসব শিক্ষকরা স্ব-স্ব এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শূণ্য পদে পদায়ন করার কথা থাকলেও কক্সবাজার জেলা শিক্ষা কার্যালয় তার উল্টো পথে চলেছে। প্রতিষ্ঠানটির উচ্চমান সহকারি রফিক উদ্দিন, অফিস সহকারি মোহাম্মদ ইয়াছিন ও বশির আহমদ শিক্ষকদের পছন্দের বিদ্যালয়ে পদায়নের শর্তে গড়ে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করে এই পদায়নের কাজটি সম্পন্ন করেছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট শাখা বলছে, নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের পদায়নের একক ক্ষমতা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার। জেলা প্রশাসন ওখানে কোনভাবেই যুক্ত নন। এ ক্ষমতাকে পুঁজি করে জেলা শিক্ষা কার্যালয় ঘুষ আদায়ের তথ্য তাদের কাছেও ছিল। এখন উপজেলার অভ্যন্তরে বদলীতেও ঘুষ দাবির অভিযোগ শুনা যাচ্ছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়, কক্সবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের উচ্চ সহকারি রফিক উদ্দিনম দুর্নীতির কারণে ২০১০ সালে তাকে শেরপুর বদলি করা হলেও তিনি হাইকোর্টে রিট করে কক্সবাজারে চাকুরি করে যাচ্ছেন। তিনি নিয়োগ, প্রধান শিক্ষক পদোন্নতি, বদলির নামে উৎকোচ আদায় করে কোটি টাকার মালিক হয়ে উঠেছেন। তার গ্রামের বাড়ি পেকুয়ায় বিপুল জমি ছাড়াও রয়েছে ৬ তলার বাড়ি। একই সঙ্গে কক্সবাজার শহরে রয়েছে ৫ তলার বিলাসবহুল বাড়ি। তার অপর সহযোগি ইয়াছিনেরও কুমিল্লায় গ্রামের বাড়ি ও শহরে অনেক জমি ও ফ্ল্যাট রয়েছে। ইতিমধ্যে সিন্ডিকেটটি পছন্দের বিদ্যালয়ে পদায়নের নামে প্রকাশ্যে উৎকোচ আদায় শুরু করেছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।

এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ তদন্ত করতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একটি দল গত ১৪ জানুয়ারি ঘুরে গেছেন কক্সবাজার। এ বিষয়ে জানতে কক্সবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জেছের আলী, উচ্চমান সহকারি রফিক উদ্দিনের মোবাইল ফোনে অসংখ্যবার চেষ্টা করা হয়। কোন কোন সময় ফোন বন্ধ, কখনও ফোন কল হওয়ার সাথে সাথে কেটে দেন তারা। এমনকি প্রতিবেদকের পরিচয় জানিয়ে এসএমএস পাঠানোর পরও কোনভাবেই কথা বলতে রাজী হননি তারা।

একই প্রক্রিয়ায় প্রতিবেদকের পরিচয় জানিয়ে এসএমএস পাঠানোর পরও কথা বলেননি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান।

পাঠকের মতামত: