ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

জামায়াতের আমির হচ্ছেন মকবুল

makbolবাংলা ট্রিবিউন

জামায়াতে ইসলামীর আমির পদে নির্বাচিত হওয়ার পথে রয়েছেন দলটির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ। দলটির রুকনদের অনেকে অন্য নেতাদের পছন্দ করে ভোট দিলেও বেশিরভাগেরই পছন্দ সত্তুরোর্ধ্ব এই নেতাই। আগামী আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যেই আনুষ্ঠানিক ভাবে ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণা করবে দলটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। ইতোমধ্যে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার এক প্রভাবশালী সদস্য শনিবার সাড়ে তিনটার দিকে এ তথ্য জানান।

এ সংগঠনের আমির হিসেবে নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন বর্তমান ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদই।

দীর্ঘ ৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভারপ্রাপ্ত আমির দিয়ে সংগঠন পরিচালনার পর এবার ২০১৭-১৯ সেশনে নতুন আমির নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। এর মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত হয়ে হারানো ইমেজ পুনরুদ্ধার করতে চাইছে সংগঠনটি।

মজলিসে শূরার দায়িত্বশীল এই সূত্রটি জানিয়েছে, সদ্য আমির নির্বাচনে রুকনদের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। এই নির্বাচনে প্রায় ৯৫ শতাংশ ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। গৃহীত ভোটে মকবুল আহমাদই এগিয়ে আছেন। ভোটের বেশিরভাগ অংশ তার দিকেই গেছে। সত্তরোর্ধ্ব মকবুল আহমাদ প্রায় ৯০ ভাগের বেশি ভোট পেয়েছেন বলে ধারণা করছেন এই সূত্রটি।

জানতে চাইলে সিলেট জেলার নেতা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য মাওলানা হাবিবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। এখন গণনা হবে। সবকিছু কেন্দ্র থেকে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে বিশেষ দায়িত্বশীলদের মাধ্যমে।’

গত ১৭ আগস্ট বুধবার দিনভর কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে আমির নির্বাচন কার্যক্রম শুরু হয়। সারাদেশে একযোগে ৮৩টি সাংগঠনিক জেলায় প্রায় ৩৭ হাজার রুকন এই ভোট কার্যক্রমে অংশ নেন।

নতুন এই আমির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দলটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি পাবে, অবসান হবে প্রায় ৬ বছরের বেশি সময় ধরে চলা ভারপ্রাপ্ত নেতৃত্বের। ২০০৯ সালের শেষ দিকে টঙ্গীর তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসায় জামায়াতের সর্বশেষ রুকন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনেই নিজামী আমির নির্বাচিত হয়েছিলেন।

জামায়াতের একাধিক সূত্র জানায়, পরিস্থিতি প্রতিকূল হওয়ায় রুকনদের ভোট গ্রহণ কার্যক্রম নানা পদ্ধতিতে শুরু হয়। কোথাও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে, কোথাও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, কোথাও নেতাদের বাসায় ভোট গ্রহণ করা হয়। এরই মধ্যে রাজধানীর বাড্ডা, সাতক্ষীরা, দিনাজপুরসহ কয়েকটি এলাকা থেকে ভোটগ্রহণ কার্যক্রমের সময় অনেককে গ্রেফতার হতে হয়েছে। যদিও আইন-শৃংখলাবাহিনীর অভিযোগ আছে, তারা সংঘবদ্ধভাবে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র পরিচালনা করছিল।

সূত্রমতে, চলতি মাসের শেষ কয়েকদিনে ভোট গ্রহণ শেষ ও ব্যালট পেপারের রেজাল্ট সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কার্যক্রম আগামী দুদিন চলবে। এরপরই গণনা চূড়ান্ত করে ফলাফল ঘোষণা করা হবে। এরপর নিয়ম অনুযায়ী শূরার অধিবেশনে আমির হিসেবে শপথ গ্রহণের কথা থাকলেও পরিবেশ প্রতিকূল বিবেচনায় এবার সম্ভাব্য সর্বোচ্চ শূরা সদস্যদের সামনে শপথ নেবেন আমির।  প্রধান নির্বাচন পরিচালক এটিএম মাছুম আমিরকে শপথ পড়াবেন।

সূত্র আরও জানায়, শপথ নেওয়ার পর নির্বাচিত আমির শিডিউল প্রকাশ করবেন। প্রথমে কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা নির্বাচন হবে। প্রতি ২০০ রুকনে একজন করে কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য নির্বাচিত হবেন। গঠনতন্ত্রের ১৮ ধারার ২ উপধারা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় শূরার কার্যকাল তিন বছর।

এরপর পর্যায়ক্রমে সেক্রেটারি জেনারেল, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ, বিভাগীয় সেক্রেটারি নির্বাচন হবে। শূরা নির্বাচনের পাশাপাশি জেলা ও মহানগরী আমির নির্বাচনও সম্পন্ন হবে বলে সূত্র দাবি করেছে। জেলা ও মহানগরীর রুকনরা আমির নির্বাচনে ভোট দেবেন।

উল্লেখ্য, বিগত ছয় বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত আমির হিসেবে মকবুল আহমাদ দায়িত্ব পালন করছিলেন। পাশাপাশি ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি হিসেবে প্রথমে এটিএম আজহারুল ইসলাম, পরবর্তী সময়ে গ্রেফতার হলে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার পর দুজনেই দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপনে থেকে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন। মূলত একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসিতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মতিউর রহমান নিজামীর রায় কার্যকরের অপেক্ষায় ছিল জামায়াত। এ বছর তার ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় আমির নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয় দলটি।

পাঠকের মতামত: