ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

জামায়াত বাদে সর্বদলীয় সরকার প্রস্তাব দেবেন খালেদা জিয়া –

bp-2016-12-03-097-2অনলাইন ডেস্ক :::

নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে ১৩ দফা প্রস্তাবের পর এবার নির্বাচনকালীন ‘সহায়ক’ সরকারের রূপরেখা দেবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। রূপরেখায় বেশ কিছু বিকল্প প্রস্তাব থাকছে। এর মধ্যে নির্বাচনকালীন সময়ে সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাবনা গুরুত্ব পাবে। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন থাকা সব রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে সর্বদলীয় সরকার গঠনের ডাক দেবেন বেগম জিয়া। সেক্ষেত্রে নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতকে বাইরে রেখেই ওই প্রস্তাব দিতে পারেন ২০-দলীয় জোট প্রধান। জোটবদ্ধ এ শরিক দলটি নিয়ে নানামুখী সমালোচনার কারণে দলটি নীতিগত এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ক্ষমতা হ্রাস করলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনেও নির্বাচনে যাওয়ার ইঙ্গিত আসতে পারে প্রস্তাবে। দলীয় সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের পর পরই অনুকূল পরিস্থিতিতে এ নিয়ে প্রস্তাব তুলে ধরবেন বেগম জিয়া। এ নিয়ে প্রস্তাব তৈরির কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। দলের গুটিকয়েক সিনিয়র নেতা, সাবেক আমলা ও বিএনপি সমর্থিত কয়েকজন বুদ্ধিজীবী এ নিয়ে কাজ করছেন। এর আগে তারা নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়েও খালেদা জিয়ার ১৩ দফা নিয়ে কাজ করেছেন। পরে তা দলের স্থায়ী কমিটিতে অনুমোদন করা হয়। এরপর গণমাধ্যমে প্রস্তাব তুলে ধরেন বেগম খালেদা জিয়া।

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ভোটের দাবিতে নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম জিয়া সম্প্রতি নতুন ইসি গঠন নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ‘তত্ত্বাবধায়ক’ শব্দটি এড়িয়ে গিয়ে ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আবার সাংবাদিকদের সামনে আসার আভাস দেন। এ সময় খালেদা জিয়া বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন জাতিকে যাতে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ?্য নির্বাচন উপহার দিতে পারে, সেই উদ্দেশেই একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রয়োজন। আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা ভবিষ্যতে যথাসময়ে জাতির সমীপে উপস্থাপন করব।’ এ প্রসঙ্গে গতকাল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার নিয়ে কাজ চলছে। তবে এটা কবে দেওয়া হবে তা নির্ভর করছে আমাদের নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে সরকারের চিন্তাভাবনার ওপর। চেয়ারপারসনের মামলা ও সিটি নির্বাচন নিয়ে আমরা ব্যস্ত। দলের নেতাদের ছাড়াও সিভিল সোসাইটিসহ বিভিন্নজনের মতামত নিয়েই একটি প্রাথমিক ধারণা নিয়ে নিয়ে আসব। জানুয়ারির মধ্যেই এ প্রস্তাব আশা করা যায়। এ বিষয়ে এখনই বলার সময় আসেনি।’ দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার পাশাপাশি বিকল্প হিসেবে সংবিধান সংশোধন করে নতুন কাঠামোয় নির্বাচন দেওয়ার প্রস্তাবও থাকছে। আবার  যে মন্ত্রিসভা আছে, তার বাইরে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বিবেচনায় তিনজন টেকনোক্রেট মন্ত্রী নিয়োগের বিষয়টি থাকতে পরে। স্বরাষ্ট্র, সংস্থাপনসহ তিন-চারটি মন্ত্রণালয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিরা ওই দায়িত্বে থাকতে পারেন যারা প্রশাসনিক বিষয়টি সুপারভাইজ করবেন। বিএনপির সংশ্লিষ্ট একাধিক নেতা ও বুদ্ধিজীবীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি এখন দুটি জিনিস গুরুত্ব দিচ্ছে। একটি হলো— নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন নিয়ে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি। আরেকটি হলো— নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে সরকারের চিন্তাভাবনা কী। তা দেখার পরই বিএনপি সহায়ক সরকারের প্রস্তাবনা দেবে। ওই প্রস্তাবনায় থাকতে পারে নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ না করার শর্তে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও ওই সরকারে থাকতে পারবেন। বিএনপি সমর্থিত একজন বুদ্ধিজীবী জানান, ‘সর্বদলীয় সরকারে জামায়াতকে বাইরে রেখেই প্রস্তাব আসবে। এটা নির্বাচন কমিশন গঠনের রূপরেখায়ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, নিবন্ধিত অথবা বলে বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। নির্বাচনকালীন ‘সহায়ক’ সরকারের ক্ষেত্রেও তাই হবে। বিএনপি অনেক কিছু ছাড় দিয়ে একটি কার্যকর সরকার গঠনের প্রস্তাব দেবে।’ নির্বাচনকালীন ‘সহায়ক’ সরকারের রূপরেখায় কী থাকছে, এমন প্রশ্নে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যখন নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয় উঠে আসবে, তখন আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করব। তবে এ নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া একটি প্রস্তাব দেবেন। তার কাজ চলছে।’ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তখনকার মহাজোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাব দিলে তা প্রত্যাখ্যান করে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা  ফেরানোর দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি। এর বদলে ২০১৩ সালের ২০ অক্টোবর একজন ‘সম্মানিত নাগরিকের’ নেতৃত্বে সাবেক ১০ উপদেষ্টাকে নিয়ে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের পাল্টা প্রস্তাব দেন তখনকার বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া। জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতিনিধির দূতিয়ালিতেও সে সময় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমঝোতা হয়নি। জাতীয় পার্টি ও পুরনো শরিকদের কয়েকজনকে মন্ত্রিসভায় এনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করেন। সেই সরকারের অধীনেই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোট হয়। বিএনপি ও শরিকদের বর্জনের মধ্যে টানা দ্বিতীয়  মেয়াদে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।  – বাংলাদেশ প্রতিদিন ::

পাঠকের মতামত: