ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাকির ভারে জর্জরিত হলের ডাইনিংগুলো

২৫ টাকায় খাবার, তবু এক হলে বকেয়া ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা ।। ‘সকলে নগদে খান, আমি বাজার করতে পারি না’।।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি :: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষার্থীদের খাবারের নিম্নমান নিয়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে। তবে এর পেছনে শিক্ষার্থীদের দায় ঘুরেফিরে সামনে আসছে। হলের ডাইনিংয়ে একবেলা খাবারের দাম নেওয়া হয় ২৫ টাকা। এতে থাকে ভাত, ডাল, মাছ বা মাংস, ভর্তা বা সবজি। আবাসিক শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এই সুবিধা ভোগ করে হলের বাইরে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীরাও।

তবে টাকা বকেয়া করেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। বকেয়া এবার সীমা ছাড়িয়েছে। আলাওল হলের ডাইনিংয়ে বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দেড় লাখ টাকা। সোহরাওয়ার্দী হলের ডাইনিংয়ে বকেয়ার পরিমাণ প্রায় নব্বই হাজার টাকা। বাকি হলের ডাইনিংয়েরও অবস্থা একই।

এছাড়া খাবারের দোকান, ক্যান্টিনগুলোও শিক্ষার্থীদের বাকির ভারে জর্জরিত। ব্যবসায়ীদের দাবি, ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের টাকা বাকি ও ফাও খাওয়ার ক্ষতি পোষাতে ইচ্ছা থাকলেও খাবারের মান উন্নত করা যাচ্ছে না। টাকা না দিয়ে নিয়মিত খাওয়া অনেকেরই নিয়ম হয়ে গেছে। এ বিষয়ে মুখ খুলতেও ভয় পান ব্যবসায়ীরা। বাকি না দিলে খাবারের মানের প্রশ্ন তুলে যখন-তখন আন্দোলনও করে শিক্ষার্থীরা। আবার বাকির টাকা চাওয়ায় হুমকি-ধমকির শিকারও হয়েছেন অনেক হলের ডাইনিং ম্যানেজার ও দোকান মালিক।

সম্প্রতি এফ রহমান ক্যাফেটেরিয়ার পরিচালক হেলাল হোসেন টেবিলের উপরে লিখতে বাধ্য হন, ‘সকলে নগদে খান, আমি বাজার করতে পারি না’। কয়েকজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রাজনীতিতে সক্রিয় কর্মীরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে বাকি খেয়ে চলে যান। টাকা দেবে বলেও দেয় না। টাকা চাইলে নানা উছিলায় হুমকি-ধমকি দিয়ে দমিয়ে রাখেন তাদের। প্রশ্ন তোলা হয় খাবারের মান নিয়ে।

সোহরাওয়ার্দী হলের ডাইনিং ম্যানেজার মো. মালেক ভুঁইয়া বলেন, সব মিলিয়ে প্রায় ৮০-৯০ হাজার টাকার মতো বাকি আছে।
আলাওল হলের বর্তমান ম্যানেজার মো. ইকরাম হোসেন বলেন, বর্তমানে যে বাজার দর তার ওপর যদি এই পরিমাণে বাকি টাকা পড়ে, ডাইনিং চালানো সত্যিই কষ্টকর।

টাকা উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়ে আলাওল হল ডাইনিং পরিচালনা ছাড়তে হয় সাবেক ম্যানেজার মো. ইকবাল হোসেনকে। তিনি বলেন, ২০১৬ সাল থেকে হলের ডাইনিং ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছি। করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে আমার সংকট শুরু হয়। ছাত্রদের বাকি দিতে দিতে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা হয়েছে। টাকা তো দেয় না, বরং নানা ইস্যুতে হুমকি দেওয়ার চেষ্টা করে। পরে আমি পরিচালকের দায়িত্ব ছেড়েছি।

তিনি বলেন, বাকিতে বাজার করে ডাইনিং চালিয়েছি দীর্ঘদিন। বাকি বিক্রি করতে গিয়ে আমার অবস্থা খারাপ। ছাত্ররা বাকি খেয়ে বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে টাকা দেয় না। দেড় হাজার থেকে শুরু করে ৮ হাজার পর্যন্ত বাকি আছে একেকজনের কাছে।

এ বিষয়ে আলাওল হলে থাকা একাউন্টটিং বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের আবির বলেন, কত টাকা পাবে তা সঠিক বলতে পারছি না। লকডাউনের কারণে কিছু টাকা এদিক-ওদিক হতে পারে। উনার সাথে কথা বলে টাকা দিয়ে দেব।

আলাওল হলে অবস্থানরত শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের তৃতীয় বর্ষের রাশেদুল ইসলাম বলেন, আমি একবার টাকা দিতে গিয়েছিলাম, কিন্তু ম্যানেজারের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। আপাতত হাতে টাকা নেই। তবে তার টাকা দিয়ে দেব।

রাজনীতি বিজ্ঞানের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরিফ উদ্দিন বলেন, ক্যাম্পাসে খাবারের পরিবেশ এমনিতেই ভালো না। আমাদের সচেতন হওয়া দরকার। বাকি খেয়ে টাকা পরিশোধ না করলে খাবারের মান বৃদ্ধির আশা করা যায় না।

আলাওল হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফরিদুল আলম বলেন, হলের ডাইনিংয়ে বাকির বিষয়টি শুনেছি। বাকি দেওয়ার সময় বিষয়টি তার দেখা দরকার ছিল। ম্যানেজার ইকবাল অফিসিয়ালি কিছু জানাননি। জানালে কিছু করা যেত। শিক্ষার্থীদেরও সচেতন হওয়া উচিত। কয়েকজনের জন্য আমার দু-তিনশ শিক্ষার্থী ঝামেলায় পড়ুক, এটা আমি চাই না। ম্যানেজাররা ডাইনিং চালিয়ে তো অনেক টাকা লাভ করেন না। ২৫ টাকায় এখন কী পাওয়া যায়? তারা তো বাড়ি থেকে এনে ডাইনিং চালাবেন না।

পাঠকের মতামত: