এম জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বিএমচর ইউনিয়নে রাতের আঁধারে একটি হতদরিদ্র পরিবারের রুটি রোজির অবলম্বন বাগানের পেঁপে গাছ কেটে সাবাড় করেছে দুর্বৃত্তরা। রোববার (২ অক্টোবর) দিবাগত রাতের যে কোন সময় বিএমচর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের বাক্কার পাড়া গ্রামের শারীরিক চলাচলে অক্ষম শফর মুল্লুকের স্ত্রী খোরশিদা বেগম এর কষ্টার্জিত বাগানে হানা দিয়ে অন্তত ৩৫-৪০ টি পেঁপে গাছ কেটে কমপক্ষে দুই লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করেছে দূর্বৃত্তরা!
গতকাল সোমবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গেলে ভুক্তভোগী বাগান মালিক খুরশিদা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, বাড়ির পাশের নিজস্ব একখণ্ড জমিতে দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি খামারের আদলে বাগান গড়ে তুলে রকমারি ফলজ গাছ লাগিয়ে উৎপাদন পুর্বক বিক্রি করে পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।
একইভাবে ওই জমিতে তিনি এক বছর আগে বিভিন্ন ধরনের ফলদ ও বনজ গাছ রোপণ করেছেন। এরইমধ্যে গত ৩-৪ মাস পূর্বে রাতের বেলায় কে বা কারা তার বাগানে ঢুকে বেশ কিছু গাছ কেটে ফেলে। ওইসময় বিষয়টি স্থানীয় সমাজ সর্দার ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানানো হলেও তিনি কোন ধরনের প্রতিকার পাননি। সর্বশেষ রোববার রাতে বাগানের চারিপাশে রোপণ করা ৫০টির মধ্যে অন্তত ৩৫-৪০ টি পেঁপে গাছ কেটে ফেলেছে দূর্বৃত্তরা। তিনি বলেন, কেটে সাবাড় করে দেওয়া প্রতিটি গাছে ২০ থেকে ৩০ টি পেঁপে রয়েছে।
দুর্বৃত্তদের নিষ্ঠুর এ ঘটনায় হতবাক ভুক্তভোগী কৃষাণী খুরশিদা। পুত্র সন্তানহীন পরিবারের উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন বাগানের ( ‘ক্ষেত-খামারের) রোপিত পেঁপে গাছ কেটে সাবাড় করে দেওয়ায়, পরিবারের ভবিষ্যৎ অন্ধকার বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী।
স্থানীয় প্রতিবেশী আবদুর রশিদ জানান, শফর মুল্লুক দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক অসুস্থতার কারণে চলাচলে অক্ষম। ফলে বাড়ি থেকে বের হতে পারেন না। পরিবারে ছেলে সন্তান নেই, চার কন্যা সন্তানকে নিয়ে মা খুরশিদা বেগম ধায়দেনা নিয়ে অনেক কষ্ট করে এ খামারটি করেছিলেন। এখন গাছের পেঁপে গুলো বিক্রি করার উপযোগী হওয়ার মুহূর্তেই দূর্বৃত্তরা রাতের অন্ধকারে গাছ গুলো কেটে দিয়ে যে সর্বনাশ করেছে, তা জীব হত্যার চেয়েও জঘন্য অপরাধ করেছে দুর্বৃত্তরা। আমরা এ ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক, তাদেরকে গ্রেফতারে প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
স্থানীয় বিএমচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ইউনিয়নের বাক্কার পাড়া গ্রামের শফর মুল্লুকের স্ত্রী খুরশিদা বেগমের বাগানের পেঁপেসহ রকমারি গাছ কেটে ফেলার বিষয়টি শুনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এতগুলো পেঁপে গাছ কেটে ফেলার বিষয়টি খুবই নিষ্ঠুরতম ও জঘন্য কাজ। তিনি বলেন, আমি ঘটনায় জড়িত দূর্বৃত্তদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই পুলিশ প্রশাসনের কাছে।
জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, বিএমচরে অনেক গুলো ফলসহ পেঁপে গাছ কেটে ফেলার বিষয়টি শুনেছি। এবিষয়ে জড়িত দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নিতে চকরিয়া থানার ওসি ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, বিষয়টি শুনেছি। তবে সোমবার বিকাল পর্যন্ত থানায় উল্লেখিত বিষয়ে কেউ অভিযোগ দেয়নি। ত্পে পরবর্তী সময়ে অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাঠকের মতামত: