২০১৫সালের স্বরণকালের ভয়াবহ বন্যার তান্ডবে গৃহহীন কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের দরিদ্র ৮০টি পরিবার পেলেন অবশেষে বেঁেচ থাকার ঠিকানা। নুন আনতে পান্তা পুরায় অবস্থা যাদের সেই পরিবার গুলো এখন নতুন বাড়ি পেয়ে খুশিতে পঞ্চমুখ। বানবাসির মানুষের জন্য এই মহতি কাজটি করেছেন ইউএনডিপির সহযোগি প্রতিষ্টান আরলি রিকভারী ফেসিলিটি ও কানাডিয়ান বৈদেশিক বিষয়ক বাণিজ্য এবং উন্নয়ন বিভাগ। দুটি সংস্থার অর্থায়নে এনজিও সংস্থা ক্রিশ্চিয়ান এইড ও মুক্তি কক্সবাজার অঞ্চলের সার্বিক মনিটরিংয়ে মডেল প্রকল্পের আওতায় উপজেলার বিএমচর, কাকারা ও কৈয়ারবিল ইউনিয়নে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ ৮০টি দরিদ্র পরিবারকে নতুন বাড়ি দেওয়া হয়েছে। গতবছরের বন্যার পর ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যাছাই বাছাই করে এসব উপকারভোগী নির্বাচন করেন। গতকাল রোববার দুপুরে উপজেলার বিএমচর ইউনিয়নের খঞ্জনীঘোনা গ্রামে উপকারভোগী পরিবার সদস্যের হাতে আনুষ্টানিকভাবে নতুন বাড়ির চাবি তুলে দেন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রানালয়ের সচিব মো.শাহ কামাল।
চকরিয়া উপজেলার বিএমচর ইউনিয়নের খঞ্জনীঘোনা এলাকায় বানবাসি উপকার ভোগী পরিবারের মাঝে নতুন বাড়ির চাবি বিতরণ উপলক্ষে আয়োজন করা হয় সুধী সমাবেশের। ইউএনডিপির কান্ট্রি ডিরেক্টর মিস পৌলিন ট্যামেসিস এর সভাপতিত্বে অনুষ্টিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রানালয়ের সচিব মো.শাহ কামাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো.রিয়াজ আহমেদ, কানাডিয়ান হাই কমিশনের কর্মসুচী প্রধান মিষ্টার ডেনিয়েল লোটফি, ক্রিশ্চিয়ান এইড এর কান্ট্রি ডিরেক্টর সাকিব নবী, ইউএনডিপির আরলি রিকভারী ফেসিলিটি’র প্রধান মিস তানজিবা আবেরিন হক, চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ জাফর আলম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান এসএম সিরাজুল ইসলাম আজাদ, নারী ভাইস চেয়ারম্যান শাফিয়া বেগম শম্পা, চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.জহিরুল ইসলাম খাঁন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, মুক্তি কক্সবাজার অঞ্চলের প্রধান নির্বাহী বিমল চন্দ্র দে সরকার, সহকারি সমন্বয়কারী আহমেদ শরীফ, বিএমচর ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ বদিউল আলম, কোণাখালী ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার।
এদিকে একইদিন সকালে চকরিয়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়ন মোহনায় ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রানালয়ের সচিব মো.শাহ কামাল ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো.রিয়াজ আহমেদ উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও সুধীজনের সাথে মতবিনিময় সভা করেছেন। এতে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ত্রাণ সম্পাদক নুরুল আবছার, আলহাজ সেলিম উল্লাহ, চকরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ একেএম গিয়াস উদ্দিন, চকরিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম, পৌরসভা আওয়ামীলীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটু, ইউপি চেয়ারম্যান এটিএম জিয়াউদ্দিন চৌধুরী, আবদুল হাকিম, আজিমুল হক আজিম, জসীম উদ্দিন, আবদুর রহমান, শরীফ উদ্দিন চৌধুরী, জহির উদ্দিন আহমদ বাবর, নুর মোহাম্মদ মানিক, কামাল উদ্দিন প্রমুখ।
জানতে চাইলে এনজিও সংস্থা মুক্তি কক্সবাজারের সহকারি সমন্বয়কারী আহমেদ শরীফ, মডেল প্রকল্পের আওতায় নতুন বাড়ি পাওয়া উপকারভোগীদের বেশীরভাগই পরিবার প্রধান নারী। যাদের কারো স্বামী মারা গেছেন, বা অসুস্থ অবস্থায় দিনযাপন করছেন। আবার অনেকে ডিভোর্সপ্রাপ্ত অথবা স্বামী পরিত্যক্ত। এসব বাড়ি সমুহ নির্মাণে প্রতিটিতে খরচ পড়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। বসতভিটায় মাটি ভরাট করে উচু স্থানে চারচালা বাড়ি গুলো নির্মাণ করা হয়েছে যাতে বন্যার সময় পানি তলিয়ে যেতে না পারে। তিনি বলেন, এসব বাড়িতে রয়েছে পাকা মেঝ, টিনের ছাইনি, টিনের বেড়া ও একটি সেনিটারি পায়খানা। গত বছরের ভয়াবহ বন্যায় এসব পরিবারগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। নতুন বাড়ি দেয়ার পাশাপাশি অল্প সময়ের মধ্যে উপকারভোগী পরিবার সমুহের আয় বৃদ্ধির জন্য নগদ অর্থ সহায়তা প্রদানসহ গরু, ছাগল, হাস মূরগী পালন, সেলাই কাজ ও শাক সব্জির ব্যবসা বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
অনুষ্টিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথি দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.শাহ কামাল বলেন, এই মডেল প্রকল্পের আওতায় আপাতত ৮০টি গৃহহীন পরিবারকে নতুন বাড়ি দেওয়া হয়েছে। এসব বাড়ির ডিজাইন এলাকাবাসী গ্রহন করলে পর্যায়ক্রমে একই ভাবে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত আরো ৩০হাজার গরীব পরিবারের মাঝে নতুন বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হবে। #
পাঠকের মতামত: