চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি ::
চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের সামান্য দক্ষিণ-পূর্বে বগাচতর মৌজায় ব্যক্তি মালিকানাধীন ফসলি জমির মাটি কেটে লুটের উৎসব কোনভাবেই থামানো যাচ্ছেনা। বেশক’বার উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জরিমানা আদায় করলেও স্থানীয় প্রভাবশালী মহল আবারও জমির প্রকৃত মালিক ও কৃষকদের বাঁধা উপেক্ষা করে মাটি লুটের চেষ্টা চালাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী একাধিক গ্র“প বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অজুহাত দেখিয়ে বিগত ৬ মাস ধরে উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসংলগ্ন বেশ কিছু উঁচু শ্রেণির ও চাষের জমির মাটি কেটে লুট করে নিয়ে গেছে। জড়িতরা বেশিরভাগই সরকারি দলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। সেই কারণে পাহাড় টিলা ও চাষের জমি লুটের মহোৎসব চালালেও তাদের বিরুদ্ধে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তর কিংবা বনবিভাগ এই পর্যন্ত কার্যকর কোন আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
এই সুযোগে প্রভাবশালী চক্রের লোকজন এলাকার কিছু কিছু মালিকদের কাছ থেকে জমিবর্গা নিয়ে শক্তিশালী স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে লুটে নিয়েছে। সূত্রমতে অন্তত ৫ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি থেকে মাটি কেটে নেয়ায় ওই পরিমাণ এখন গভীর খাদে পরিণত হয়েছে। এসব জমির মাটি পরিবহন করতে গিয়ে আরও প্রায় ৫ একর ফসলি জমি চাষাবাদে অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
বর্তমানে বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই কেটে নেয়া ওই জমির অংশে ছড়াখালে পরিণত হয়েছে। তাতে অবশিষ্ট থাকা জমির (ধানক্ষেত) ধানক্ষেতও ছড়াখালে বিলীন হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী জমি মালিকরা। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী জমি মালিকপক্ষ উচ্চ আদালতে (হাইকোটে) রিট মামলা করলেও করোনাকালীন সময়ে মামলার শুনানী না হওয়ার সুযোগে অভিযুক্তরা মাটি লুটের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনী প্রতিকার চেয়ে সর্বশেষ ৩ আগস্ট চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন জমি মালিক রেজাউল কবির চৌধুরী। অভিযোগকারী রেজাউল কবির উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মাইজপাড়া গ্রামের এনামুল হক চৌধুরীর ছেলে। তার দায়েরকৃত অভিযোগে প্রতিপক্ষ হিসাবে উল্লেখ করেছেন ৭ জনকে। তারা হলেন, ওই ইউনিয়নের বাসিন্দা সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাইফুল এহেছান চৌধুরী, তার ভাই মাইদুল এহেছান চৌধুরী, সহযোগী সজিব, রেজাউল ওরফে সোনা মিয়া, নেজাম উদ্দিন, বদিউল আলম ও জিয়াউল করিম।
ইউএনও’র দপ্তরে দায়েরকরা লিখিত অভিযোগে জমি মালিক রেজাউল কবির চৌধুরী দাবি করেন, ডুলাহাজারা ইউনিয়নের বগাচতর মৌজার বিএস ৬২ খতিয়ানের কিছু জমি নিয়ে প্রতিপক্ষের সাথে তাদের বিরোধ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে একটি মামলা চলমান রয়েছে। কিন্তু অভিযুক্তরা করোনা সময়ে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকার সুযোগ নিয়ে আমাদের পৈত্রিক জমির মাটি কেটে লাখ লাখ ঘনফুট মাটি লুটে নিয়ে গেছে। এখনো তারা উল্লেখিত খতিয়ানের ৭০০, ৭০১, ৭০২ ও ৫৮৪ দাগের আমাদের জমি থেকে মাটি লুটের জন্য অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
ভুক্তভোগী জমি মালিক অভিযোগ করেন, চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই কেটে নেয়া ওই জমির অংশে ছড়াখালে পরিণত হয়েছে। তাতে অবশিষ্ট থাকা জমির (ধানক্ষেত) ফসলও সৃষ্ঠ ছড়াখালে বিলীন হচ্ছে।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চকরিয়া নিউজ প্রতিবেদক মঙ্গলবার বিকালে বিবাদী পক্ষের সাইফুল এহেছান চৌধুরীর মুঠোফোনে (০১৭১৬-৯৫৯৪৫৪) একাধিকবার চেষ্ঠা করা হয়। কিন্তু তাঁর মোবাইল ফোনের সংযোগ বন্ধ থাকায় বক্তব্য জানা সম্ভব হযনি।
বিষয়টি প্রসঙ্গে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ সামসুল তাবরীজ চকরিয়া নিউজকে বলেন, ডুলাহাজারা ইউনিয়নের সাফারি পার্ক লাগোয়া বগাচতর এলাকা থেকে পাহাড় ও আবাদি জমি কেটে মাটি লুটের ঘটনায় সত্যতা পেয়ে ইতোপূর্বে সেখানে অভিযান পরিচালনা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে মাটিভর্তি ডাম্পার ট্রাক জব্দ করে জরিমানাও করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আদালতের অভিযানের পর সেখানে মাটি কাটা বন্ধ ছিল। তবে নতুনভাবে ভুক্তভোগী জমি মালিক বাদী হয়ে দায়েরকরা লিখিত অভিযোগের আলোকে তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পাঠকের মতামত: