নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::
হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দূর্গোৎসব উৎযাপন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তহবিল থেকে বরাদ্দ দেওয়া সাড়ে ৪৩ মেট্রিক টন চাল নিয়ে চিরিঙ্গা খাদ্য গুদামের ওসি নাছির উদ্দিন চালবাজি শুরু করেছেন বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
প্রতিবছর সরকারিভাবে দূর্গোৎসব উৎযাপনে মন্দির কমিটির মাঝে আতব চাল বরাদ্দ দেওয়া হতো। কিন্তু খাদ্য গুদামের ওসি নাছির উদ্দিন কৌশল অবলম্বন করে আতব চাল না দিয়ে সিদ্ধ চাল বরাদ্দ দিয়েছেন। এই অবস্থায় বরাদ্দের আতব চালের বিপরীতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে সুষ্ঠুভাবে উৎসব আয়োজন নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন চকরিয়া উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি তপন কান্তি দাশ।
চকরিয়া উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি তপন কান্তি দাশ বলেন, এবারে শারদীয় দূর্গোৎসব পালন করা হবে ৪৩টি প্রতিমা পূজা ও ৪৪টি ঘটপুজা। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে পূজার জন্য সাড়ে ৪৩ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গত ১৮ অক্টোবর খাদ্য নিয়ন্ত্রক বরাদ্দের বিপরিতে চালের ডিও লেটার ছাড় দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ডিও লেটার নিয়ে চিরিঙ্গা খাদ্য গুদামে চাল উত্তোলনে গেলে গুদামের ওসি নাছির উদ্দিন আমাদেরকে সিদ্ধ চাল নিতে হবে বলে জানিয়ে দেন। তখন আমরা তাঁকে বলি, সরকারি বরাদ্দপত্র ও ডিও লেটারে চাল লেখা আছে। সেখানে আতব বা সিদ্ধ কোনটাই লেখা নেই। প্রতিবছর সরকার দুর্গাপুজার জন্য আতব চাল বরাদ্দ দিয়ে এসেছেন। এসব বলার পরও খাদ্য গুদামের ওসি নাছির উদ্দিন এবছর সিদ্ধ চাল নিতে হবে বলে বাধ্য করছেন।
চিরিঙ্গা খাদ্য গুদামের ওসি নাছির উদ্দিন আতব চালের বিপরিতে সিদ্ধ চাল দেওয়া হবে এমন বাহনা তুলে কৌশলে আমাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা চাইছেন। এ ধরনের অনিয়মে ছাড়া দিইনি। তাই শুক্রবার গুদাম থেকে বরাদ্দের চাল উত্তোলন করিনি।
বিষয়টি আমরা ইতোমধ্যে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের জানিয়েছি।
তপন কান্তি দাশ দাবি করেন, খাদ্য গুদাম থেকে বরাদ্দের চাল উত্তোলন না করলেও যেহেতু পূজা সন্নিকটে চলে এসেছে, তাই আমরা বাধ্য হয়ে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ধারদেনা করে বরাদ্দের বিপরীতে প্রতিটি মন্দির কমিটির মাঝে ১৯ অক্টোবর স্থানীয় এমপি জাফর আলম, চকরিয়ার ইউএনও জেপি দেওয়ান এর উপস্থিতিতে নগদ টাকা বিতরণ করেছি। পরে বরাদ্দের চাল বিক্রি করে ওই টাকা পরিশোধ করা হবে।
প্রতিবছরের মতো এবারের বরাদ্দের সাড়ে ৪৩ মেট্রিক টন আতব চাল দিতে হবে। কোন অবস্থাতে আমরা সিদ্ধ চাল নেব না। চিরিঙ্গা খাদ্য গুদামের ওসি নাছির উদ্দিন হিন্দু সম্প্রদায়ের আর্থিক ক্ষতি করতে সিদ্ধ চাল নিতে তালবাহানা করছে।
পরিকল্পিত ভাবে বাঁধা সৃষ্টিকারী চিরিঙ্গা খাদ্য গুদামের ওসি নাছির উদ্দিনের অপসারণের দাবি জানাচ্ছি। তার অন্যায় অপর্কমের বিরুদ্ধে উর্ধ্বতন মহলে অভিযোগ করবো।
চকরিয়া উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তপন মল্লিক বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে চকরিয়া উপজেলার জন্য সরকারি ভাবে বরাদ্দ দেওয়া সাড়ে ৪৩ মেট্টিক টন চালের বিপরিতে ডিও লেটার গত ১৮ অক্টোবর আমি ছাড় করে দিয়েছি। গুদামে তো আগে থেকে চাল স্টক রয়েছে। এতদিনে বরাদ্দের চাল গুলো গুদাম থেকে উত্তোলন হবার কথা।
তিনি বলেন, কী কারণে বরাদ্দের চাল উত্তোলন হচ্ছে না, সেটি আমি জানাতে পারছিনা, কারণ এখন আমি পূজার ছুটিতে আছি।
বিষয়টি জানানো হলে কক্সবাজার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সৈয়দ আতিকুল হক বলেন, নিয়ম আছে, স্টকে আগে থেকে আতব চাল জমা থাকলে, আতব চাল আগে ছাড় দেবে। সিদ্ধ চাল স্টকে আগে থাকলে সেটি আগে ছাড় করবে। তবে কী কারণে ঝামেলা হচ্ছে সেটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
তিনি বলেন, আমি ঢাকায় একটি মিটিংয়ে আছি, সোমবার চকরিয়া যাবো, দেখি বিষয়টি সেদিন সমাধান হয়ে যাবে।
চিরিঙ্গা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছির উদ্দিনের মোবাইলে কয়েকবার ফোন দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি রিসিভ না করাটা তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, স্টকে যেহেতু আগে থেকে আতব চাল জমা ছিল, তাই আমি খাদ্য গুদামের ওসিকে পূজার বরাদ্দের চাল গুলো সেখান থেকে দিয়ে দিতে বলি। তিনি আতব চাল দিচ্ছেন বলে আমাকে জানালেও এখন শুনছি সিদ্ধ চাল দিতে চান তিনি।
তিনি বলেন, খাদ্য গুদামের ওসির এধরনের আচরণের বিষয়টি পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা জানিয়েছে। তিনি না দিলে বরাদ্দের ওই চাল বদরখালী খাদ্য গুদাম থেকে দেওয়া হবে।
পাঠকের মতামত: