নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::
কক্সবাজারের চকরিয়ার চিংড়ি জোনে ভাইরাসের আক্রমণে এক ‘জো’তেই (মাছ ধরার সময়) পথে বসেছেন চাষিরা। পর পর দুইবার বন্যা পরবর্তী উপজেলার প্রায় ৪৫ হাজার একরের চিংড়ি জোনে এই ভাইরাস আক্রমণ করায় দুই হাজার চাষিসহ চিংড়ি চাষের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক–কর্মচারীর মাথায় হাত উঠেছে।
হঠাৎ করে কেন এই মড়ক এমন তথ্যানুসন্ধান করতে গেলে চিংড়ি বিশেষজ্ঞ ও চাষিরা জানিয়েছেন, চলতি বর্ষা মৌসুমে চকরিয়ায় লাগাতার ভারী বর্ষণ ও পর পর দুই দফা ভয়াবহ বন্যা হয়েছে এর মধ্যে। এর প্রভাব পড়েছে বিশাল চিংড়ি জোনেও। এ কারণে ঘেরের লোনা পানিতে লবণাক্ততা একেবারে কমে গেছে। আবার কয়েকদিন একনাগাড়ে প্রখর রোদ পড়ায় তাও বিরূপ প্রভাব ফেলেছে চিংড়ি জোনে। এসব কারণে চিংড়ি জোনে এই বিপর্যয় নেমে এসেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. সাইফুর রহমান দৈনিক চকরিয়া নিউজকে জানান জানান, ‘পর পর দুইবার বন্যায় ৪৫ হাজার একরের এই চিংড়ি জোন ব্যাপকভাবে তলিয়ে যায় এবং একনাগাড়ে কয়েকদিন ধরে পাহাড়ি ঢলের পানি অবস্থান করে ঘেরগুলোতে। এ কারণে কয়েক ধরনের ভাইরাস ছড়াতে পারে চিংড়ি ঘেরে। তম্মধ্যে চায়না ভাইরাস থাকতে পারে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে চিংড়ি মরে গিয়ে গায়ে দাগ পড়ে যাবে।’ মৎস্য বিশেষজ্ঞ সাইফুর রহমান আরো বলেন, ‘বন্যার সময় সময় চিংড়ি জোনে ঘেরগুলোতে লবণাক্ততার পরিমাণ একেবারে শুন্যের কোটায় নেমে আসে। তার ওপর ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় তা প্রকট রূপ নেয়। আবার বর্ষণ বন্ধ হয়ে গত কয়েকদিন ধরে আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় প্রখর রোদ পড়েছে। এতে হঠাৎ করে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে গেছে। চিংড়ি ঘেরে লবণাক্ততার পরিমাণ নির্দিষ্ট মাত্রার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হয়। তা না হলে চিংড়ি বেঁচে থাকবে না, অবশ্যই মড়ক দেখা দেবে।’
চকরিয়া চিংড়ি খামার মালিক সমিতির সভাপতি মো. সেলিম উল্লাহ দৈনিক চকরিয়া নিউজকে জানান, লাগাতার ভারী বর্ষণ ও পর পর দুইবার ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে চকরিয়ার চিংড়ি জোন। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর বর্তমানে ব্যাপকভাবে মড়ক দেখা দিয়েছে চিংড়িতে। এতে বন্যা পরবর্তী বড় ‘জোঁ’তে ৪৫ হাজার একরের এই চিংড়ি জোনের ২০০০ খামার মালিকের কয়েকশ কোটি টাকার উৎপাদিত চিংড়ি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মরে গিয়ে লালচে রং ধারণ করেছে। উৎপাদিত চিংড়ি ঘেরের কাছেই মাটিতে পুঁতে ফেলতে হচ্ছে। প্রতি ‘জোঁ’তে ২ দশমিক ৪৭ একর জমিতে চিংড়ি উৎপাদন হয় ২৫০ কেজি।
উপজেলার রামপুর মৌজার চিংড়িজোনের চিলখালী ঘোনার ৩১০ একরের প্রকল্পটির মালিক চিংড়ি চাষি পৌরসভার কাহারিয়াঘোনা গ্রামের বাসিন্দা আওয়ামীলীগ নেতা সেকান্দর বাদশা নাগু। বৃহৎ এই প্রকল্পের পরিচালক মিজানুর রহমান দৈনিক চকরিয়া নিউজকে জানান, গত একমাসে তাদের প্রকল্পের অন্তত ৩০ লাখ টাকার উৎপাদিত চিংড়ি ভাইরাসের আক্রান্ত হয়ে মারা পড়েছে। একই অবস্থা পুরো চিংড়িজোনের। এতে চিংড়ি চাষিরা দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
এই সমস্যা থেকে উত্তরণের বিষয়ে জানতে চাইলে এক মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, ‘চিংড়ি ঘেরের এই ভাইরাস রোধ করার বিষয়ে তেমন কোন বৈজ্ঞানিক উপায় নেই। এটি পুরোপুরি নির্ভর করে আবহাওয়ার ওপর। তাই আবহাওয়া ঠিক থাকলে ঘেরের পানির লবণাক্ততার পরিমাণও মাত্রার মধ্যে থাকবে।’
এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো. আবদুল আলীম গতরাতে দৈনিক চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘চকরিয়ায় চিংড়িঘেরে ব্যাপক আকারে মড়ক দেখা দিয়েছে কী–না তা আমার জানা নেই। তবে নানা কারণে ঘেরগুলোতে বিভিন্ন ধরণের ভাইরাস আক্রমণ করতে পারে। তন্মধ্যে অতি বর্ষণ, আবার অতিরিক্ত মাত্রায় গরম পড়লে এই সমস্যা দেয়।’
চিংড়ি চাষিদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী আর্থিকভাবে ক্ষতির চিত্র প্রসঙ্গে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দৈনিক চকরিয়া নিউজকে আরো বলেন, ‘যেভাবে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে চাষিরা দাবি করছেন তা কোন অবস্থাতেই সত্য নয়।’
এ প্রসঙ্গে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান দৈনিক চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘চিংড়িজোনে ভাইরাস আক্রমণের বিষয়টি বিভিন্ন চিংড়ি চাষিদের কাছ থেকে শুনেছেন। এই ভাইরাস রোধে কী করণীয় থাকতে পারে সে বিষয়ে মৎস্য কর্মকর্তাদের নজর রাখতে বলেছি।’
পাঠকের মতামত: