মামলাটি রেকর্ড করার পর তদন্ত কর্মকর্তা ও চকরিয়া থানার এসআই মুজিবুর রহমান ও থানার সঙ্গীয় পুলিশ কর্মকর্তা ও ফোর্সের সহায়তায় অভিযান চালিয়ে প্রথমে সন্দেহভাজন আসামী মিনহাজুল ইসলাম নয়নকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাঁর কাছে ঘটনার বিষয়ে গুরুত্বপুর্ণ তথ্য উৎঘাটনপুর্বক তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।
থানার ওসি ওসমান গনী বলেন, পরবর্তীতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় এবং নিহত ব্যবসায়ী লতিফ উল্লাহর মোবাইল ব্যাংকিং এর আর্থিক লেনদেনের তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে এবং ঘটনায় ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র (দা) কেনার ভিডিও সংগ্রহপুর্বক পর্যালোচনা করে তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আসামী মিজানুর রহমানকে চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারকৃত মিজানুর রহমান ঝালকাটি জেলার সদর উপজেলার বালকদিয়া বিনয়কাটি ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মৃত জলিল আকনের ছেলে।
আসামী মিজানুর রহমান পটিয়া থানার একটি মামলায় চট্টগ্রাম কারাগারে থাকায় আদালতের মাধ্যমে তাকে চকরিয়া থানা পুলিশের কাছে নেওয়া হয়। পরে আদালতের মাধ্যমে পুলিশ রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে ঘটনার সহিত জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং তার দেওয়া তথ্যমতে অভিযান পরিচালনা করে ভিকটিমের মোবাইল ফোন উদ্ধার এবং ঘটনার সময়ে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র (দা) ক্রয়ের ভিডিও ও ঘটনার পূর্বে ভিকটিমকে ফোনে ডেকে আনার মোবাইল ফোনটিও জব্দ করা হয়।
চকরিয়া থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনী আরও বলেন, সর্বশেষ মঙ্গলবার গ্রেফতারকৃত আসামি মিজানুর রহমানকে পুলিশ রিমান্ড শেষে মামলার তদন্ত কর্মকর্ত চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করেন। এসময় আসামী মিজানুর রহমান সেচ্ছায় দায় স্বীকার করে আদালতের কাছে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দেন। স্বীকারোক্তিতে আসামী মিজান ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে আশরাফুল ইসলাম আসিফ নামের একজনের নাম উল্লেখ করে।
এরপর মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারী রাতে চকরিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় সড়কে আজিজ ম্যানসন থেকে পরিকল্পনাকারী আশরাফুল ইসলাম আসিফকে গ্রেফতার করে গতকাল আদালতে পাঠানো হয়েছে। গ্রেফতারকৃত পরিকল্পনাকারী আসিফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় সড়কের আজিজুল হক প্রকাশ আজিজ মুন্সির ছেলে।
ওসি ওসমান গনী বলেছেন, ব্যবসায়ী লতিফ উল্লাহ হত্যাকাণ্ড পরবর্তী মামলা রুজু হবার পর কক্সবাজারের জেলা পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সহকারি পুলিশ সুপার (চকরিয়া সার্কেল), চকরিয়া থানার ওসি ও ওসি তদন্ত এর সার্বিক দিক নির্দেশনায় চকরিয়া থানা পুলিশের একাধিক টিম মামলার আসামি গ্রেফতার ও ঘটনার ক্লু উৎঘাটনে কাজ করেন।
উল্লেখ্য গত ৩ জানুয়ানরী সোমবার রাত সাড়ে দশটার দিকে চকরিয়া পৌরশহরের ২নং ওয়ার্ডের পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় সড়কে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে দুর্বৃত্তরা বিকাশের এজেন্ট মোহাম্মদ লতিফ উল্লাহকে কুপিয়ে হত্যা করে। এ সময় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের টাকাও লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
নিহত লতিফ উল্লাহ চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার আধুনগর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের সুফী পাড়ার মৃত ইলিয়াছ সওদাগরের ছেলে ও চকরিয়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শরাফত উল্লাহ’র ছোট ভাই।
স্থানীয়রা জানান, চকরিয়া পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের চকরিয়া সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয় সড়কের পাশে লতিফ উল্লাহর মালিকাধীন কোমল পানীয়সহ বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সোমবার রাত সাড়ে দশটার দিকে ব্যবসার কাজ সেরে দোকান বন্ধ করার সময় ৩-৪ জনের একদল দুর্বৃত্ত ক্রেতা সেজে পন্য কেনার অজুহাতে এসে নগদ টাকা ও বিকাশের মোবাইল লুটে নিয়ে লতিফ উল্লাহকে কুপিয়ে পালিয়ে যায়।
পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে চকরিয়া সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্মরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে। চকরিয়া পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে হত্যায় ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করে।
পাঠকের মতামত: