ঢাকা,মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ভারে ভেঙ্গে পড়ছে শিক্ষা কার্যক্রম

চকরিয়া সাহারবিল আনওয়ারুল উলুম কামিল মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক মহলে বাড়ছে ক্ষোভ

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::  মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের নীতিমালা অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে একবছর কর্মরত থাকার মেয়াদ থাকলেও প্রায় তিনবছর ধরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে চলছে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার সাহারবিল ইউনিয়নে অবস্থিত আনওয়ারুল উলুম কামিল মাদরাসাটি। উপজেলার শতবছরের প্রাচীন এই দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আড়াই থেকে তিন হাজার শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত থাকলেও শুন্যপদে একজন স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ না হওয়ায় সুষ্ঠ মনিটরিংয়ের অভাবে লেখাপড়ায় চরম ছন্দপতন ঘটছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি চালানোর কারণে জেলার অন্যতম সেরা এই দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি যেমন ঐহিত্যগত জৌলুস হারাচ্ছে, তেমনি প্রশাসনিক ও একাডেমিক শৃঙ্খলা একেবারে নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে।

মাদরাসার প্রশাসনিক ও একাডেমিক শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়ার কারণ উল্লেখ্য করে নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শূন্যপদে একজন স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগদানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়ে সর্বশেষ ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারী মাদরাসা কমিটির সভাপতি কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (সার্বিক) কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। মাদরাসা কমিটির সহ-সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আলহাজ ছমিরুল ইসলাম চৌধুরী স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগে জানানো হয়েছে, ২০১৯ সালের ২৮ ফেব্র“য়ারী মাদরাসার অধ্যক্ষ (বর্তমান রেক্টর) আলহাজ মাওলানা মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুছ আনোয়ারী আল আজহারী অবসরে যান। সেইসময় প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা শফিউল হক জিহাদিকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে অধ্যক্ষ নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি হলে শফিউল হক জিহাদি প্রার্থী হিসেবে আবেদন করেন। সেই প্রেক্ষিতে

সহকারি অধ্যাপক (বাংলা) জিল্লুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আবেদনে মাদরাসা কমিটির সহ-সভাপতি আলহাজ ছমিরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, দায়িত্বপালন কালীন সময়ে ২০২১ সালের ১১ মে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জিল্লুর রহমান বিধিমোতাবেক অবসরে যান। পরবর্তীতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে আসীন হন আরবি প্রভাষক মাওলানা মোহাম্মদ হাছন। এভাবে পরপর তিনজন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে শতবছরের প্রাচীন এই দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হলেও মাদরাসার সচিব হিসেবে মুলত তাদের কর্মদক্ষতা ও সমন্বয়ের অভাবে ক্রমান্নয়ে প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক শ্রেণী কার্যক্রম ছাড়াও প্রশাসনিক কার্যক্রম দিনদিন গতিহীন হয়ে পড়ে বলে লিখিত অভিযোগে দাবি করেন মাদরাসা কমিটির সহ-সভাপতি ছমিরুল ইসলাম চৌধুরী।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে মাদরাসার শুন্য পদে অধ্যক্ষ নিয়োগে পরপর চারবার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও মাদরাসার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ হাছন দায়িত্বে থাকলেও অধ্যক্ষ নিয়োগদানে কার্যকর কোন ধরণের উদ্যোগ নেয়নি। উল্টো তিনি সময়ক্ষেপন করে নিয়োগ কার্যক্রমকে দীর্ঘসুত্রিতায় আবদ্ধ রেখেছেন।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মাদরাসার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ হাছন। তিনি মুঠোফোনে বলেন, অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আমার কোন ধরণের গাফেলতি নেই। আমিও চাই শুন্যপদে একজন স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ হোক, প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতি হোক। তিনি নিয়োগ কার্যক্রম দীর্ঘসুত্রিতার বিষয়ে বলেন, যথাসময়ে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দপ্তরে আমরা নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্র পাঠিয়েছি।

তবে অধিদপ্তরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতি পালনসহ প্রশাসনিক কিছু কারণে একটু সময়ক্ষেপন হযেছে। তিনি আরও বলেন, গতকাল (সোমবার) মাদরাসা কমিটির সভাপতি কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (সার্বিক) সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি আগামী ৯ এপ্রিল অধ্যক্ষ নিয়োগ পরীক্ষার চুড়ান্ত তারিখ নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

জানতে চাইলে মাদরাসা কমিটির সভাপতি ও কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো.জাহিদ ইকবাল বলেন, বিভিন্ন কারণে অধ্যক্ষ নিয়োগ পরীক্ষা নিতে বিলম্ব হয়েছে। গতকাল (সোমবার) মাদরাসার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। অধ্যক্ষ নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে আমরা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছি। আগামী ৭ অথবা ৮ এপ্রিল নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে যিনি উর্ত্তীণ হবেন তাকে আমরা নিয়োগ দেব। তবে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনধরণের তদবির চলবেনা।

 

পাঠকের মতামত: