এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :: কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাট এলাকায় পিকআপ চাপায় সর্বশেষ চমেক হাসপাতালের আইসিইউতে মারা যাওয়া রক্তিম শীলের সৎকার মঙ্গলবার রাত ১২ টায় সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে নিহত ৬ ভাইয়ের পরিবারকে শান্তনা জানাতে বাড়িতে এসেছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্যপরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর এড. রানা দাশ গুপ্ত। একইসময়ে শোকাহত পরিবারকে শান্তনা জানাতে আসেন কক্সবাজাারের জেলা প্রশাসক মো.মামুনুর রশিদ।
এসময় জেলা প্রশাসক মো.মামুনুর রশিদ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছয় ভাইয়ের মা মানু রানী শীল, নিহতদের স্ত্রী এবং সন্তানদের সঙ্গে কথা বলেন। সহমর্মিতা জানান শোকাহত পরিবার সদস্যদেরকে। একইসময়ে তিনি জেলা প্রশাসনের পক্ষথেকে শোকাহত প্রতিটি পরিবারকে ৬০ হাজার টাকা করে পরিবারগুলোর মাঝে নগদ ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা অর্থসহায়তাও বিতরণ করেন।
এসময় জেলা প্রশাসক ঘোষনা দেন নিহত ছয় ভাইয়ের পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ তহবিলের একটি করে নতুন ঘর দেওয়া হবে। তাদেরকে পরিবারকে মোট ৮টি বাড়ি দেওয়া হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে অ্যাডভোকেট রানাদাশ গুপ্ত জেলা প্রশাসন কর্তৃক নিহতদের পরিবারের সদস্যদের স্থায়ীভাবে জমি বন্দোবস্তের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ তহবিলের তথা মুজিব শতবর্ষের গৃহায়ণ প্রকল্প থেকে গৃহ নির্মাণ ও সার্বিক সহযোগিতা দেয়ার ঘোষনায় ধন্যবাদ জানান।
তিনি আরো বলেন, মূলতঃ এটি কোন নিচক দূর্ঘটনা নয়। এর পিছনের ঘটনা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে খুঁজে বের করতে হবে। বিনা ময়না তদন্তে ৫ ভাইকে সৎকার করতে দেওয়া আইনসিদ্ধ হয়নি বলে তিনি দাবী করেন। এ সময় হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ইস্কন ও কয়েকটি ধর্মীয় সংগঠন নিহতদের পরিবারের জন্য চাল, ডাল, তেল, কম্বলসহ সাড়ে ৪ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করেছেন। এদিকে, একই দিন দুপুরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদ মঙ্গলবার মারা যাওয়া রক্তিম শীলের স্ত্রীসহ অপর ৫ ভাইয়ের স্ত্রীদের মাঝে নগদ সহায়তা বিতরণ করেন।
জেলা প্রশাসক শোকাহত পরিবারের উদ্দেশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, প্রয়াত সুরেশ চন্দ্র শীলের পরিবারের নিহত সন্তান ও আহত অবস্থায় মালুমঘাট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হিরা শীলের পরিবারের জন্য সার্বিক সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন। এ সময় চকরিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (চকরিয়া সার্কেল) তফিকুল আলম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাহাত উজ জামান ও চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ ওসমান গণিসহ সনাতন ধর্মাবলম্বী বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে স্বামী সুরেশ চন্দ্র শীলকে হারিয়ে শোকে কাতর ছিলেন মানু বালা শীল। এ শোক কেটে উঠতে না উঠতেই সড়ক দূর্ঘটনায় বুকের ধন ৬ সন্তানকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন মানু বালা শীল। বুধবার দুপুরে বাড়িতে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা গেছে। ওই সময় বাড়িতে শোকাহত পরিবারকে শান্তনা জানাতে এড. রানা দাশ গুপ্ত ও কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ উপস্থিত হলেও তাদের দেখে অনেকটা নির্বাক ছিলেন মানু বালা শীল।
অপরদিকে ইস্কন ও কয়েকটি ধর্মীয় সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা নিহতদের একমাত্র বেঁচে থাকা ভাই প্লাবন শীল ও বিধবা স্ত্রীদের যোগ্যতা অনুসারে সরকারি চাকুরি প্রদানের মাধ্যমে এতিম শিশু সন্তানদের লালন পালনের সুব্যবস্থা করার জন্য প্রশাসনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
প্রসঙ্গতঃ গত ৮ ফেব্র“য়ারি প্রয়াত বাবা সুরেশ চন্দ্র শীলের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে মহাসড়কের মালুমঘাট এলাকায় পিকআপ চাপায় ৭ ভাইয়ের মধ্যে ৫ ভাইয়ের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন, অনুপম শীল (৪৭), নিরুপম শীল (৪৫), দীপক (৪০), চম্পক শীল (৩০) ও সরণ শীল (২৯)।
এ দূর্ঘটনায় অপর আহত ২ ভাই রক্তিম ও প্লাবন এবং তাদের বোন হিরা শীল আহত অবস্থায় মালুমঘাট হাসপাতালে ভর্তি হয়। পরে আশংকাজনক অবস্থায় রক্তিম শীলকে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হলেও আইসিইউ খালি না থাকায় তাকে ম্যাক্স হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়। সেখান থেকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। পরে তার সুচিকিৎসার জন্য ৫ বিভাগের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে ১৩ ফেব্র“য়ারি রক্তিমকে পুনরায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। ভর্তির ১৪ দিন পর রক্তিম শীল (২৮) হাসপাতালে মারা যায়। ফলে এ দূর্ঘটনায় ৬ সহোদর প্রাণ হারায়। এখন তাদের পরিবারে বিধবা স্ত্রীসহ মিলিয়ে ১১ জন শিশু সন্তান, নিহতদের মা মানু বালা ও তার ছোট ছেলে প্লাবন শীল বেঁচে আছেন।
পাঠকের মতামত: