সেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও (কক্সবাজার ) প্রতিনিধি :::
ঘুর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার আলী আকবর ডেইল তবলারচর এলাকায় পানিতে ডুবে শফিকুর রহমান নামে আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে। সে ওই এলাকার মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে। উত্তর ধুরুং এলাকায় দেয়াল চাপা পড়ে আব্দুর রহিমের ছেলে মুহাম্মদ ইকবাল এবং কৈয়ারবিল এলাকায় নৌকায় চাপা পড়ে ফয়জুর রহমানের ছেলে ফজলুল হক মারা যায়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত জেলায় মৃত্যুর সংখ্যা ৩ জনে এসে দাঁড়িয়েছে। কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, কুতুবদিয়ার ৬ ইউনিয়নের অন্তত ২০ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘরবাড়ী হারিয়ে মানুষজন পানিতে দিন-রাত কাটাচ্ছে। দুর্গত মানুষদের জন্য অতিদ্রুত ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর দাবী করেন তিনি। এদিকে ঘুর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে শনিবার সারাদিন থেমে থেমে হালকা থেকে মাঝারী ধরণের বৃষ্টি হয়। সমুদ্রের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৭ ফুট বৃদ্ধি পেয়ে উপকূলের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়। জেলার ১৫৮ আশ্রয়কেন্দ্রে ১৭ হাজার ৪৩৪ পরিবারের ৮৭ হাজার ১৭০ লোক আশ্রয় নিয়েছে। শনিবার ভোর থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৮৬ কিলোমিটার।
বিশেষ করে কুতুবদিয়ার উত্তর ধুরুং, দক্ষিণ ধুরুং, আলী আকবর ডেইল, কৈয়ারবিল, লেমশিখালি, মহেশখালী উপজেলার মাতাবাড়ি, ধলঘাটা, কুতুবজুম, টেকনাফের সবরাং, সেন্টমার্টিন, শাহাপরির দ্বীপ, পেকুয়ার মগনামা, উজানটিয়াসহ ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বিধ্বস্ত েেহছ দুই শতাধিক ঘরবাড়ী।
এছাড়া কক্সবাজার শহরের সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া ও নুনিয়াছড়া এলাকার আড়াই হাজারের অধিক মানুষ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে। এসব এলাকায় ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে শতাধিক ঘরবাড়ি, চিংড়িঘের বিধ্বস্ত হয়েছে। শহরের নাজিরারটেক এলাকার শুটকিমহালের অন্তত এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আকতার কামাল।
ঘূর্ণিঝড়ের আগে ১৭ হাজার ৪৩৪ পরিবারের ৮৭ হাজার ১৭০ জনকে এসব এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার ১৫৮ আশ্রয়কেন্দ্রে তাদের সরিয়ে আনা হয়েছে।
এছাড়া কক্সবাজার শহরের সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া ও নুনিয়াছড়া থেকে আড়াই হাজারের অধিক মানুষ সরিয়ে এনে আশপাশের আশ্রয়কেন্দ্র ও স্কুলে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। তবে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেনি জেলা প্রশাসন।
এদিকে ঘুর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে উত্তর ধুরুং এলাকায় দেয়াল চাপা পড়ে আব্দুর রহিমের ছেলে মুহাম্মদ ইকবাল এবং কৈয়ারবিল এলাকায় দুই নৌকার মধ্যখানে চাপা পড়ে ফয়জুর রহমানের ছেলে ফজলুল হক মারা গেছে।
একইভাবে উপকূলীয় এলাকায় নিরাপদে আশ্রয় নিতে গিয়ে আরো অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে। কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন এলাকায় আহত হয়েছে অন্তত দশজন। জেলা সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা ক্লিনিকে তাদের ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, উপকূলীয় এলাকা কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া ও টেকনাফের ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার ১৭৪৩৪টি পরিবারের ৮৭১৭০ জন লোককে নিরাপদ স্থানে আশ্রয়ে সরিয়ে আনা হয়েছে। তাদের মাঝে শুকনো চিড়া, মুড়ি ও গুড় বিতরণ করা হয়েছে। দুর্গত এলাকায় ৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে।
এ দিকে ঘুর্ণিঝড় রোয়ানুর বিষয়ে জানাতে ২১ মে শনিবার বিকালে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডর নির্বাহী পরিচালক মো. সবিবুর রহমান জানান, ঘুর্নিঝড় রুয়ানোর আঘাতে উপকূলীয় এলাকাসমূহে ২৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়েছে। এসব এলাকায় অবিরত পানি ঢুকছে।
পাঠকের মতামত: