গুলশান হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত পাঁচ আইএস জঙ্গি ভারতের কেন্দ্রীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সিবিআইর হাতে আটক হয়েছে। এর মধ্যে আছে বাংলাদেশ ও ভারতে আইএসের কর্মকাণ্ড বিস্তারের উদ্দেশ্যে সিরিয়া থেকে উপমহাদেশে আসা অন্যতম জঙ্গি নেতা আবু আল মুসা আল বাঙ্গালী ওরফে মোহাম্মদ মসিউদ্দিন ওরফে মুসা। গুলশান হামলার এক সপ্তার মাথায় ৮ জুলাই তাদের আটক করে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা। আটক এই জঙ্গিদের কাছ থেকে ইতিমধ্যে নানান গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও বের করেছে ভারতীয় সংস্থাগুলো। আটক জঙ্গি নেতাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যমতে, গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার মূল পরিকল্পনা যৌথভাবে সাজিয়েছেন সুলেমান ও আনসারুল তৌফিক নামে দুই জঙ্গি নেতা। এর মধ্যে বাংলাদেশের জেএমবির সাবেক নেতা সুলেমান বর্তমানে আইএসের সমন্বয়ক এবং তৌফিক আনসার আল বাংলা টিম বা এবিটির অপারেশন প্রধান বলে দাবি করছেন ভারতের সিবিআই ও সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তারা। এর মধ্যে জেএমবি আইএসের সমমনা ও এবিটি একিউআইএস বা আল-কায়েদার সমমনা। ভারতীয় গোয়েন্দাসূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সিবিআই সূত্রের খবর, ঢাকার গুলশানে বিদেশিদের ওপর হামলার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে ছয়-সাত মাস আগে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে আত্মগোপন করে সুলেমান ও তৌফিক। পরে মালদহ, বীরভূমসহ সীমান্তবর্তী বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সরাসরি তত্ত্বাবধান করে মাঠে থাকা জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে হামলাসংশ্লিষ্ট পরিকল্পনার বাস্তবায়ন। এর মধ্যে সুলেমান আগে জেএমবির কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জোরালোভাবে সম্পৃক্ত ছিল। সুলেমান বর্তমানে ‘আইএস বাংলা’ নামে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসামসহ এ অঞ্চলে আইএসের কর্মকাণ্ডের প্রধান সমন্বয়কের ভূমিকায় আছে। অন্যদিকে ধারাবাহিকভাবে ব্লগার হত্যা করে আসা আনসার আল বাংলা টিমের সমন্বয়কের ভূমিকায় আছেন আনসারুল তৌফিক। এর আগে ঢাকার গোয়েন্দাদের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, গুলশানে হামলা চালানো জঙ্গিরা সীমান্তবর্তী সাতক্ষীরায় আস্তানা গেড়েছিল এবং নিহত জঙ্গি নিবরাস প্রায়ই মোটরসাইকেলে কোথাও যেত। সে ক্ষেত্রে সাতক্ষীরা থেকে মাত্র ৮-১০ কিলোমিটার দূরের সীমান্তের আশপাশে তাদের প্রত্যক্ষ যোগাযোগও হয়ে থাকতে পারে। ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর, ইসলামিক স্টেট বা আইএসের অন্যতম জঙ্গি নেতা আবু আল মুসা আল বাঙ্গালী ওরফে মোহাম্মদ মসিউদ্দিন ওরফে মুসার সঙ্গে গত সপ্তায় আটক হয়েছে আরও দুই জঙ্গি শেখ আমিনুদ্দিন ও সাদ্দাম হোসাইন। প্রায় এক সপ্তা নানান জিজ্ঞাসাবাদের পর বৃহস্পতিবার দুই জঙ্গি আমিনুদ্দিন ও সাদ্দামকে গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডির মাধ্যমে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে নেওয়া হয়েছে। পরে আদালত তাদের প্রত্যেককে ১৪ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে। কিন্তু জঙ্গি নেতা মুসাকে এখনো নিজেদের কাছেই রেখেছে ভারতের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে তার কাছ থেকে। পরে মুসার মোবাইল কললিস্টে বার বার যোগাযোগ করার তথ্য পেয়ে বীরভূমের চন্দন শেখ ও স্বপন শেখকেও আটক করে নিজেদের জিম্মায় নেন গোয়েন্দারা। ভারতের গোয়েন্দাদের তথ্যানুসারে, উপমহাদেশে শাখা স্থাপনের ঘোষণা দেওয়ার আগে আগেই আবু আল মুসা আল বাঙ্গালীকে সিরিয়া থেকে এ অঞ্চলে পাঠানো হয়। মুসাই সুলেমান ও তৌফিকদের নির্দেশনায় বিভিন্ন জঙ্গি কর্মকাণ্ডের জন্য অর্থায়ন ও অস্ত্র-সরঞ্জমাদির জোগান দিয়ে আসছিল। মুসাই সুলেমান ও তৌফিকদের সঙ্গে ভারতের আইএসের অপারেশন-প্রধান সাফি আরমারের সংযোগ ঘটায়। পরে সুলেমান ও সাফি আরমার মিলিতভাবে স্থানীয় বিভিন্ন জঙ্গি গ্রুপগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে। ফলে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল, কলকাতা, বীরভূম, মালদহ, কাশ্মীর, দিল্লি, হায়দরাবাদ, মিরাট ও চেন্নাই থেকে শতাধিক তরুণকে দলে ভেড়াতে সক্ষম হয় তারা। সূত্রমতে, গুলশান হামলার পর পরই তত্পর হয়ে ওঠেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। চিহ্নিত হয় মুসা। তবে পুরো নেটওয়ার্ক ধরার স্বার্থে মুসাকে গ্রেফতার না করে রাখা হয় নজরদারিতে। এরই মধ্যে কলকাতার পাশের মেতিয়াব্রুজে বাংলাদেশ শাখার সুলেমানের সঙ্গে বৈঠক করে মুসা। সঙ্গে সঙ্গে মুসাকে গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে ফসকে যায় সুলেমান। আমোদপুর স্টেশনে আটক হয় মুসা এবং তাকে সেখানে নিতে আসা সাদ্দাম হোসাইন ও শেখ আমিনুদ্দিনকে আটক করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, কলকাতার এক হিন্দু ব্যবসায়ীকে আক্রমণের মাধ্যমে আইএসের উপস্থিতি জানান দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল মুসা ও সুলেমানদের। মুসা ও তার সঙ্গীদের আটকের পর পরই সুলেমান, আনসারুল তৌফিক ও সাফি আরমার গাঢাকা দেয়। তবে গোয়েন্দাদের ধারণা, তারা এখনো পশ্চিমবঙ্গের আশপাশেই কোথাও গোপন আস্তানায় আছে। সূত্রমতে, বাংলাদেশের জেএমবি নেতা সুলেমান ও এবিটির আনসারুল তৌফিকের সঙ্গে মুসার ২০১৪ সালের শেষার্ধ থেকে যোগাযোগ আছে। এর মধ্যে গত এক বছরে তাদের কমপক্ষে ছয়বার বৈঠক হয়েছে। বেশির ভাগই হয়েছে মালদহে। তবে ‘আইএস ভারত’ শাখার সাফি আরমার ও ‘আইএস বাংলা শাখা’র সুলেমান এবং মুসা আল বাঙ্গালীর ত্রিপক্ষীয় প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছে তিন মাস আগে হায়দরাবাদে। অবশ্য সুলেমান, তৌফিক ও আরমারকে ধরার চেষ্টা চালাচ্ছে ভারতের বাহিনীগুলো। মুসার ল্যাপটপ ও ছয়টি মোবাইল সিমের কললিস্ট নিয়ে আসা হয়েছে তদন্তের আওতায়। বর্ধমানের কাকসার আসিফ আহমেদ নামে এক পলিটেকনিক কলেজের ছাত্রের সঙ্গে মুসার যোগাযোগের তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। এ ছাড়া এই গ্রুপের সঙ্গে বেঙ্গালুরুভিত্তিক মেহেদি মাসরুর বিশ্বাস (২৪) নামে এক এক্সিকিউটিভ যুক্ত আছে। কলকাতা বন্দরের আশপাশে অবস্থান করা আরেক ব্যক্তিও আছে এই গ্রুপে। তার পরিচয় সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি, তবে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগে ওই ব্যক্তি কোড নাম ‘বাঘ-২’ ব্যবহার করে থাকে। জানা যায়, শিক্ষাজীবনে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোতে না পারা মুসা একসময় হোটেল, জুতার দোকান, স্কুলভ্যানের ড্রাইভার ছিল। পরে স্থানীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠী সিমির সদস্য হয় মুসা। এরপর জেএমবি ও হুজির মাধ্যমে আইএসের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে। এখন তথ্যপ্রযুক্তি ও একাধিক ভাষায় সে পারদর্শী। সর্বশেষ সুলেমান ও সাফি আরমারের কথামতোই সব যোগাযোগ রক্ষা করত। তার পাঁচ সিমের প্রতিটিতে বিভিন্ন জোনের ১০০ জন করে তরুণের নম্বর আছে। যোগাযোগ হতো টেলিগ্রাম নামের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলের এক বিশেষ অ্যাপসের মাধ্যমে। এই অ্যাপসের সিক্রেট অপশনে যোগাযোগ করলে এনক্রিপটেড এসএমএস ক্লাউডের কোথাও জমা থাকে না। ফলে সাধারণ টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলীর পক্ষেও এসব এসএমএস পুনরুদ্ধার সম্ভব হয় না। তাই ভারতীয় গোয়েন্দারা ম্যানুয়াল পদ্ধতিকেই অনুসরণ করছেন। ঢাকায় বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআইসহ একাধিক বিদেশি সংস্থা গুলশান হামলার তদন্ত করছে বলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
প্রকাশ:
২০১৬-০৭-১৬ ১৫:১২:৫৯
আপডেট:২০১৬-০৭-১৬ ১৫:১২:৫৯
- মাতামুহুরী নদীতে ১২ বসতঘর, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণে জেলা প্রশাসক
- নাইক্ষংছড়িতে টানা ৩দিন বৃষ্টির পানিতে ১৪ গ্রাম প্লাবিত
- চকরিয়ায় দুই দিনের ভারী বৃষ্টিতে নিন্মাঞ্চল প্লাবিত, ভয়াবহ বন্যার আশঙ্খা
- চকরিয়ায় উপজেলা পরিষদের পুকুরে ডুবে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীর মৃত্যু
- চকরিয়ায় সমিতির নামে অসহায় পরিবারের দশ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
- জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ছাড়িয়েছে জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ছাড়িয়েছে
- কিশলয় স্কুলের কেরানী সেলিম কর্তৃক শিক্ষক লাঞ্চিত
- চকরিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতার অফিস থেকে শটগান ও ২৮রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার
- চকরিয়ায় উপজেলা পরিষদ এলাকায় সরকারি জায়গা দখল নিয়ে উত্তেজনা, হট্টগোল হাতাহাতি
- চকরিয়ায় মসজিদের উঠান থেকে কাফনের কাপড়সহ কার্টুনভর্তি নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার
- শহরতলীর রাবারড্যাম সড়কে নির্মাণাধীন মসজিদের জমি দখলে হামলা, ভাংচুর-লুটপাট
- বৈষম্যমুক্ত ও ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায় জামায়াত:
- জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ছাড়িয়েছে জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ছাড়িয়েছে
- কিশলয় স্কুলের কেরানী সেলিম কর্তৃক শিক্ষক লাঞ্চিত
- শহরতলীর রাবারড্যাম সড়কে নির্মাণাধীন মসজিদের জমি দখলে হামলা, ভাংচুর-লুটপাট
- চকরিয়ায় মসজিদের উঠান থেকে কাফনের কাপড়সহ কার্টুনভর্তি নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার
- চকরিয়ায় দুই দিনের ভারী বৃষ্টিতে নিন্মাঞ্চল প্লাবিত, ভয়াবহ বন্যার আশঙ্খা
- চকরিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতার অফিস থেকে শটগান ও ২৮রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার
- নাইক্ষংছড়িতে টানা ৩দিন বৃষ্টির পানিতে ১৪ গ্রাম প্লাবিত
- চকরিয়ায় উপজেলা পরিষদ এলাকায় সরকারি জায়গা দখল নিয়ে উত্তেজনা, হট্টগোল হাতাহাতি
- চকরিয়ায় সমিতির নামে অসহায় পরিবারের দশ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
- চকরিয়ায় উপজেলা পরিষদের পুকুরে ডুবে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীর মৃত্যু
পাঠকের মতামত: