নিজস্ব প্রতিবেদক :: একশ্রেণীর অসাধু বালু ব্যবসায়ীদের কারণে কোনভাবেই থামছে না বনের জমি জবরদখল, বনের গাছ কর্তন ও অবৈধ বালু উত্তোলন। বালু ইজারার নামে ধ্বংস করা হচ্ছে বনভূমি। স্থানীয় দখলবাজ ও প্রভাবশালী সিন্ডিকেট এসব ঘটনার সাথে জড়িত বলে জানা গেছে।
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের খুটাখালী বনবিটের আওতাধীন ফান্ডাছড়ি, ধইল্লাঝিরি, নহরফারি, গৈয়ালমারা এক সময়ের বন সমৃদ্ধ জনপদ। যেখানে ছিল সংরক্ষিত বন, চোখ ধাঁধানো সবুজের সমারোহ। নানা প্রজাতির গাছ গাছালি ছিল সবুজ বনের সাক্ষী। দুঃখজনক হল, সেই প্রকৃতি এখন আর নেই। বনের গাছ প্রায় উজাড় হয়ে গেছে। পাহাড়ের বালি, মাটি শেষ হওয়ার পথে। দখলবাজচক্রের হাতে ধ্বংসপ্রায় সবুজ প্রকৃতি।
ফুলছড়ি রেঞ্জ ও খুটাখালী বিট কর্মকর্তার সাথে গোপন আতাঁত রেখেই বালু উত্তোল হয়, এমন অভিযোগ দীর্ঘ দিনের।
স্থানীয়রা বলছেন, বিস্তীর্ণ বনভূমিতে রাজত্ব করছে চিহ্নিত বনখেকোরা। সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছে খুটাখালী ছড়িবিল এলাকার সাইফুল ইসলাম।
ছরাখাল ও পাহাড়ের পাদদেশ থেকে অবাধে চলছে বালু উত্তোলন। দখলবাজদের ছায়া হয়ে আছে রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতারা। মাসোহারার প্যাকেট যায় অসাধু কিছু কর্তার পকেটে।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, বনের ভেতর ছরাখাল ও পাহাড়ের পাদদেশ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালী মহল। তারা বনের গর্জনসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছগাছালি নির্বিচারে কেটে পাচার করছে। ধানি জমি, বাগানভিটা বিরান হয়ে যাচ্ছে।
শ্যালো মেশিন (ড্রেজার) বসিয়ে ছরা থেকে অবৈধভাবে বালু তোলার কারণে আশপাশের এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে।
বিশেষ করে ফান্ডাছড়ি এলাকা থেকে ভয়ানকভাবে বালু উত্তোলন করছে। যে কারণে বিপন্ন হয়ে পড়েছে সামাজিক পরিবেশ। হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য।
ভুক্তভোগিরা জানিয়েছে, খুটাখালী থেকে ফান্ডাছড়ি-হরিখোলা সড়কে দৈনিক অন্তত ৫০০ ডাম্প ট্রাক যাতায়াত করে। অবাধ গাড়ি চলাচলের কারণে মারাত্মক ভোগান্তির শিকার সড়কের দুই পাশের বসতবাড়ির বাসিন্দারা। নিরীহ মানুষজন প্রতিবাদ করার সাহসও পাচ্ছে না। শক্তিশালী বালুদস্যু সিন্ডিকেটের হাতে ধ্বংস হচ্ছে সরকারি বনভূমি। তাদের হাতেই সংরক্ষিত বনের গাছ লুট হচ্ছে।
এলাকাবাসী অভিযোগ করেছে, ইজারার বাইরে আরো অন্তত ১০ কিলোমিটার পূর্বে বনভূমি থেকে বালু উত্তোলন করছে। ফুলছড়ি ও খুটাখালী বনবিট কর্তারা নিশ্চুপ। তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন এলাকাবাসীর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগীয় কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন, আমরা ইতোমধ্যে বেশ অনেকবার অভিযান চালিয়ে বালু উত্তোলনের সরঞ্জাম ধ্বংস করেছি। মামলাও হয়েছে। তবু দমানো যাচ্ছে না। ডিএফও বলেন, সীমিত জনবল, লজিস্টিক সাপোর্ট নিয়ে অভিযান চালানো ও বনজসম্পদ রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। যৌথ অভিযানের জন্য জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের নিকট লিখেছি। দেখা যাক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপপরিচালক শেখ মোহাম্মদ নাজমুল হুদা বলেন, উদ্বেগজনক হারে পরিবেশ বিপর্যয় হচ্ছে। তাতে দুষ্ট প্রকৃতির লোকজন জড়িত। আমাদের প্রচুর জনবল সংকট। অফিসে সময় দিলে বাইরের কাজগুলো হয় না। বাইরে গেলে অফিসের কাজ পড়ে থাকে। তবুও সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হয়।
তিনি বলেন, পরিবেশ রক্ষায় জেলা প্রশাসন, বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বিত ভূমিকায় থাকা চাই।
পরিবেশ বিপর্যয়ের পেছনে রাঘববোয়াল, প্রভাবশালীদের দোষছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ আমিন আল পারভেজ বলেন, অভিযোগ পেয়ে আমি সরোজমিনে গিয়ে দেখেছি। ঘটনার সত্যতা রয়েছে। এবছর বালুমহাল ইজারা দেওয়া হবে না।
পাঠকের মতামত: