কিছুদিন ধরেই কলকাতার চলচ্চিত্রের ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। বিশেষ করে বাণিজ্যিক ছবির বেলায়। এমন মন্তব্য ওই দেশের সিনেমা-সংশ্লিষ্টদের। এতে করে কমে এসেছে ছবি তৈরির সংখ্যাও। কলকাতার এসকে মুভিজের পরিচালক হিমাংশু ধানুকা বলেন, ‘২০১৫ সালে কলকাতায় ৭০-৮০টি বাংলা চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে। ২০১৬ সালে এসে তা থেকে ২০-২৫ ভাগ ছবি নির্মাণ কমে গেছে।’
অনেকই মনে করেন, ছবির নির্মাণসংখ্যা কমে যাওয়ার কারণে কলকাতার ছবির নায়ক-নায়িকাদের কাজের ব্যস্ততাও কমেছে। যার কারণে অনেক শিল্পী এখন যৌথ প্রযোজনা কিংবা এ দেশীয় ছবিতে কাজের আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
এরই মধ্যে যৌথ প্রযোজনার ছবিতে জিৎ, সোহম, অঙ্কুশ, ওম, শ্রাবন্তী, শুভশ্রী, রিয়া সেন, ঋত্বিকা সেন, রজতভ দত্তসহ একাধিক শিল্পী অভিনয় করেছেন, এখনো করছেন। একইভাবে শুধু এ দেশীয় ছবিতেও কলকাতার পরমব্রত, ইন্দ্রনীল, পাওলি দাম, প্রিয়াংকা সরকার কাজ করছেন। এ ছাড়া দেব ও বনি সেনগুপ্তারাও শিগরিগই ঢাকার ছবিতে কাজ করবেন বলে শোনা যাচ্ছে।
তবে কলকাতায় ছবির সংখ্যা কমে যাওয়া কিংবা অভিনয়শিল্পীদের কাজ কমে যাওয়া কোনোটির সঙ্গেই একমত না ওপার বাংলার চিরদিনইতুমিযেআমারচলচ্চিত্রের অভিনেত্রী প্রিয়াংকা সরকার। তিনি এখন বাংলাদেশের রফিক সিকদারের হৃদয়জুড়ের শুটিংয়ে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, ‘ছবির সংখ্যা একদমই কমেনি। হয়তো ১০ বছর আগে যে বাজেটের ছবি তৈরি হতো, সেই বাজেটে এখন আর ছবি তৈরি করা যাচ্ছে না।’
বাংলাদেশের ছবিতে আগ্রহের ব্যাপারে বলেন, ‘সব দেশের শিল্পীরাই চায় তাদের দর্শক বাড়াতে। কাজের ক্ষেত্র বাড়াতে। দুই বাংলা তো একই ভাষাভাষী। এখানকার কাজকে তো আলাদা করে দেখছি না আমরা।’
এই উত্তরাটা একটু অন্যভাবে দিলেন শ্রাবন্তী। তিনি দুই বাংলার যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত শিকারি ছবিতে অভিনয় করে সফলও হয়েছেন। কলকাতা থেকে মুঠোফোনে বললেন, ‘বাংলাদেশের অনেক দর্শকই কলকাতার সিনেমার নিয়মিত দর্শক। এতে বাংলাদেশের দর্শকের কাছে কলকাতার তারকাদের একটা চাহিদা তৈরি হয়েছে। আর চাহিদা আছে বলেই তো পরিচালকেরা আমাদের নিচ্ছেন।’
তবে এই অভিনেতার মতে, কলকাতা বা ঢাকার সিনেমার সংখ্যা কিংবা শিল্পীদের কাজ কমে যাওয়াটা মুখ্য বিষয় নয়; বরং দুই বাংলার শিল্পীরা মিলেমিশে কাজ করলে দুই দেশের চলচ্চিত্রই এগিয়ে যাবে।
কলকাতার তারকাদের ঢালিউডমুখী হওয়া নিয়ে উঠে আসা আলোচনার সঙ্গে আংশিক মত দিলেন কলকাতার আরেক অভিনেতা পরমব্রত। কলকাতা থেকে মুঠোফোনে এই অভিনেতা বলেন, ‘এখানকার শিল্পীরা তাঁদের বাজার সৃষ্টির জন্য ঢাকামুখী হচ্ছেন—এটা মনে হতেই পারে। এই ভাবনাটাকে ফেলে দিচ্ছি না। তবে দুই বাংলায় বাংলা ছবির ভালো দিন ফিরিয়ে আনতে পারস্পরিক নির্ভরতার জায়গায় যেতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের ছবিতে কাজ করি নাড়ির টানে। আমি যতটা ভারতীয়, ততটাই বাঙালি।’
এদিকে, যৌথ প্রযোজনা কিংবা এ দেশের ছবিতে কলকাতার শিল্পীদের অভিনীত সব ছবি যে এখানকার দর্শকদের মাঝে সাড়া ফেলতে পেরেছে, ঠিক তা-ও নয়। তাহলে কেন সীমান্ত পার করে এসব ভিনদেশি শিল্পীদের দিয়ে এখানকার পরিচালকেরা ছবি নির্মাণ করছেন?
কারও কারও মতে, বাইরের দেশের শিল্পীদের দিয়ে ছবি নির্মাণ করলে শিল্পীর সঙ্গে চুক্তির দিন থেকেই ছবির পরিচালক ও ছবি নিয়ে খবরের কাগজ থেকে শুরু করে চলচ্চিত্রপাড়ায় আলোচনা শুরু হয়। একদিকে ছবির প্রচার বাড়ে, অন্যদিকে পরিচালকও অনেকটাই পরিচিতি পান।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন বলেন, ‘আমাদের শিল্পীদের মান তো খারাপ না। তারপরও যাঁরা ওপার বাংলা থেকে শিল্পী এনে এ দেশি ছবি নির্মাণ করছেন, তাঁরা ছবি ও নিজেদেরও কিছুটা আলোচনায় আনার জন্য এ কাজটি করছেন বলে আমার মনে হয়। দেশের বাইরের শিল্পীদের প্রতি প্রচারমাধ্যমের কিছুটা তো আগ্রহ আছেই। কই, এখানকার গুণী নির্মাতারা তো এভাবে ছবি নির্মাণ করছেন না।’
এই পরিচালক নেতার বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে চোরাবালি ছবির পরিচালক রেদওয়ান রনি বলেন, ‘আমি চরিত্রের প্রয়োজনেই ইন্দ্রনীলকে নিয়ে চোরাবালি বানিয়েছি। তাঁর গেটআপ, তাঁর অভিনয় আমার ছবির জন্য দরকার ছিল।’
এই পরিচালকের কথা, চোরাবালির সুমন চরিত্রটির জন্য প্রায় ছয় মাস ধরে অডিশন নিয়েও কাউকে পাইনি। পরে ইন্দ্রনীলের অটোগ্রাফ ছবিটি দেখার পর মনে হয়েছে সুমন চরিত্রের জন্যই তিনিই উপযুক্ত।’
তবে কলকাতার তারকাদের নিয়ে ছবি নির্মাণ করছেন তাঁদের মধ্যে কোনো কোনো নির্মাতা মনে করেন, এখানকার তারকাদের কেউ কেউ নিয়মিতই শুটিং সেটে আসেন দেরি করে, আবার মাঝেমধ্যে শিডিউল ফাঁসিয়ে দেওয়ার অভ্যাসও আছে। ফলাফল, ছবির কাজ শেষ করতে কখনো কখনো এক থেকে দুই বছরও লেগে যায়। এতে করে ছবির বাজেট বেড়ে দাঁড়ায় দ্বিগুণ। কিন্তু একই পারিশ্রমিকে কলকাতার তারকাদের এনে কাজ করালে, টানা কাজ শেষ করা যায়। কোনো বাড়তি চাপ থাকে না।
তবে কেউ কেউ বলছেন, সেখানে কাজের ব্যস্ততা কমে যাওয়ার কারণেই যৌথ প্রযোজনা কিংবা এ দেশীয় ছবিতে কলকাতার শিল্পীরা কাজের আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
পাঠকের মতামত: