চকরিয়া নিউজ ডেস্ক :: কক্সবাজারে পর্যটকের ভিড় বাড়লেই হোটেল-মোটেলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও রেস্তোরাঁয় বেশি দামে খাবার বিক্রি শুরু হয়। কে কত বেশি টাকা হাতিয়ে নিতে পারে সেই প্রতিযোগিতায় নামেন যেন ব্যবসায়ীরা। হোটেল ভাড়া নিয়ে কোনও তালিকা না থাকায় অনিয়মই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। এতে করে ঠকছেন পর্যটকরা। দুর্গাপূজা উপলক্ষে টানা ছুটিতে ঘুরতে আসা পর্যটকরাও এমন পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ব্যবসায়ীদের এসব আচরণে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ব পর্যটন দিবসকে ঘিরে এবার কক্সবাজারে পর্যটন মৌসুম শুরু হয়। গত ৩ অক্টোবর কক্সবাজার জেলা প্রশাসন আয়োজিত সাত দিনব্যাপী পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভালের সমাপ্তি ঘটে। মেলা উপলক্ষে হোটেল-মোটেল ও রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিশেষ ছাড় ঘোষণা দেয়। তবে মেলা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবাসিক হোটেল ও রেস্তোঁরাগুলো গলাকাটা বাণিজ্য শুরু করেছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আবাসিক হোটেলগুলোতে রুম ভাড়ার তালিকা টানানোর নিয়ম থাকলেও অধিকাংশ হোটেল কর্তৃপক্ষ তা মানছে না। তারকামানের হোটেলের পাশাপাশি নিম্নমানের হোটেলগুলোও রুমের ভাড়া বাড়িয়েছে যেনতেনভাবে। হোটেল-মোটেল জোনের অধিকাংশ হোটেলে পাঁচশ’ থেকে এক হাজার টাকা মূল্যের রুমের ভাড়া বাড়িয়ে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে। অন্যদিকে দুই থেকে তিন হাজার টাকা মূল্যের রুমের ভাড়া এখন সাত থেকে আট হাজার টাকা আদায় হচ্ছে। শুধু তাই নয়, রুম নিতে হলে দুই রাতের জন্য নিতে হচ্ছে, এক রাতের জন্য কোনও রুম ভাড়া দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন পর্যটকরা।
রাজধানী ঢাকার উত্তরা থেকে আসা ফাহিম চৌধুরী বলেন, ‘টানা ছুটি কাটাতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কক্সবাজার এসেছি। অনেকদিনের পরিকল্পনা ছিল কক্সবাজার সৈকত ঘুরে বেড়ানোর। অবশেষে তা পূরণ হচ্ছে। তবে বিপাকে পড়েছি হোটেল ভাড়া নিয়ে। অন্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।’
কক্সবাজারে বেড়াতে আসা শিক্ষার্থী আনোয়ার হালিম বলেন, ‘আমরা ঢাকা থেকে কয়েকজন বন্ধু বেড়াতে এসেছি। এখানে এসে শহরের গণপূর্ত ভবনের পাশে গড়ে ওঠা গ্রিন কক্স এবং কক্স হিলটপ হোটেলে রুম ভাড়া নিতে গেলে তারা প্রতি রুম সাড়ে আট হাজার টাকা শুনে চমকে যাই। আমরা সবাই ছাত্র, এত টাকা আমাদের নেই। ফলে রুম না নিয়ে অন্য হোটেলে যাই। সেখানে সীমিত মূল্যে রুম নিয়েছি (চার হাজার টাকা) এক রাতের জন্য। তবে রুমের গুণগতমান তেমন ভালো না।’
কয়েকজন পর্যটক অভিযোগ করেন, অভিসার নামের একটি আবাসিক হোটেলের দুই হাজার টাকার কক্ষের ভাড়া উঠেছে ৭-৮ হাজার টাকা। পর্যটকদের অভিযোগের ভিত্তিতে হোটেলটির এক্সিকিউটিভ জসিম উদ্দিনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটি কক্ষের ভাড়া ছয় হাজার টাকা দিতেই হবে। এ সময় ছাড়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন কোনও ছাড় নেই’।
তবে অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়টি সঠিক নয় বলে দাবি করেন হোটেল অভিসারের ম্যানেজার লিটন পাল।
তিনি বলেন, আমাদের হোটেলে রুমের ভাড়া সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৭৫০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ২ হাজার ২৫০ টাকা। অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। আমরা পর্যটক বান্ধব প্রতিষ্ঠান। আর এক রাতের জন্য রুম বুকিং নেওয়া হয় না, এ বিষয়টিও সঠিক নয়। তবে সামনে (আজ) শুক্রবার থাকায় ক্ষতি এড়াতে দুই রাতের জন্য রুম প্রয়োজন এমন পর্যটককে প্রাধান্য দিচ্ছি আমরা।’
এসব হোটেল-মোটেলের মতো কক্সবাজারে আরও বেশ কয়েকটি আবসিক হোটেল ও রেস্তোঁরায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেন, ‘হোটেল রুমের ভাড়া অতিরিক্ত না নেওয়ার জন্য আগে থেকে বলা আছে। হোটেল অভিসারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা আমরা খতিয়ে দেখছি। কোন রুমের ভাড়া তারা বেশি চেয়েছে, তা দেখার পর পরবর্তী মন্তব্যসহ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘যারা হোটেল রুমের অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে পর্যটন খাতকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে, তাদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সুত্র: বাংলাট্রিবিউন
পাঠকের মতামত: