ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজার থেকে ছাড়েনি দূরপাল্লার বাস : দুর্ভোগে যাত্রীরা

কক্সবাজার প্রতিনিধি ::

ঢাকাতে দুই স্কুল শিক্ষার্থী বাস চাপায় নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের রেশ পর্যটন নগরী কক্সবাজারেও পড়েছে। গত শুক্রবার সারা দিনে ঢাকা চট্টগ্রাম গামী বেশির ভাগ দূরপাল্লার বাস কক্সবাজার থেকে ছেড়ে যায় নি। রাতে কিছু সংখ্যক গাড়ী ছেড়েছে তাও পরিমানে খুব কম। এতে চরম বিপাকে পড়েছে পর্যটকসহ সাধারণ যাত্রীরা। পরিবহণ সেক্টরের কর্মকর্তাদের দাবী পরিবহণ শ্রমিকরা তাদের নিরাপত্তার খাতিরে গাড়ী নিয়ে রাস্তায় নামতে চাইছে না। এখন কাউকেতো আর জোর করে গাড়ী নিয়ে রাস্তায় নামানো যাবে না। তাই নিরাপত্তার জন্য গাড়ী চলাচল বন্ধ আছে। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে সাধুবাদ জানালেও সচেতন মহলের দাবী সেটা দীর্ঘমেয়াদী হলে সাধারণ মানুষের সমস্যা হবে সেটা বিবেচনায় নিয়ে সরকারের উচিত দ্রুত বিষয়টি সমাধান করা।
রোববার (২৯ জুলাই) ঢাকা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের চাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টেনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেনীর ছাত্র আবদুল করিম রাজিব (১৭) ও একাদশ শ্রেনীর ছাত্রী দিয়া খানম মীম(১৬) নিহত হয়। ঘটনার পর দিন এ ঘটনা নিয়ে হাসিমুখে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলের নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে চরম অসন্তোষ। এর পর থেকে গত ৫ দিন ধরে ঢাকার বিভিন্ন সড়কে শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে এবং পরিবহন খাতে শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে নিজেরাই কাজ করে এতে কার্যত অচল হয়ে পড়ে রাজধানী সহ সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা। প্রথম দিকে কিছুটা সচল থাকলেও আস্তে আস্তে তা রুপ নেয় মারাত্বক সমস্যার দিকে। যার ফলশ্রুতিতে কয়েক দিন ধরে পর্যটন নগরী কক্সবাজার থেকে দূর পাল্লার বাস চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও গতকাল শুক্রবার ছেড়ে যায় নি বেশির ভাগ বাস। কক্সবাজার এস আলম সার্ভিসের ম্যানেজার মোঃ নাজিম উদ্দিন বলেন,দিনের বেলায় বাস টার্মিনাল থেকে প্রতি ২০ বা ৩০ মিনিট পর পরই আমাদের চট্টগ্রাম এবং ঢাকাগামী বাস ছাড়ে কিন্তু গতকাল সকাল বেলায় কিছু গাড়ী ছেড়েছিল পরে আর ছাড়েনি শুনেছি রামুতে শ্রমিকরা গাড়ী আটকে দিয়েছে। মুলত শ্রমিকরা তাদের নিরাপত্তার খাতিরে গাড়ী রাস্তায় নামাতে চাইছে না। বিভিন্ন মিডিয়াতে দেখা যাচ্ছে ছাত্ররা রাস্তায় নেমে শ্রমিকদের অহেতুক হয়রানী করছে নানানভাবে অপমান করছে এখানে যদি শ্রমিকরা কোন প্রতিক্রিয়া দেখাতে যায় তাহলে সংঘাত হতে পারে তার চেয়ে গাড়ী রাস্তায় না নামানোই ভাল। তিনি জানান রাতেও গাড়ী ছাড়ার সম্ভাবনা নেই। এদিকে গ্রীণ লাইন সার্ভিসের কর্মকর্তা প্রদীপ জানান সকাল বেলায় গাড়ী গিয়েছিল তবে দুপুরের পর থেকে আর গাড়ী ছাড়ে নি। এখন রাতেও ছাড়বে কিনা বলতে পারছি না বরং না ছাড়ার সম্ভবনাই বেশি।
এদিকে শ্যমলী গাড়ীর কর্মকর্তা মোঃ শামীম বলেন,আমাদের প্রচুর গাড়ী প্রস্তুত আছে তবে রাস্তায় সমস্যার কারনে চালক এবং শ্রমিকরা গাড়ী ছাড়তে চাইছে না,তবুও আমরা চেস্টা করছি রাতে কিছু গাড়ী ছাড়ার জন্য এখনো ঠিক বলতে পারছি না। তবে শ্যামলী কাউন্টারে রাতে ঢাকাগামী গাড়ী টিকিট বিক্রি করতে দেখা গেছে।
একই সাথে হানিফ, সোহাগ, ইউনিক সহ অনেক কাউন্টারে গিয়ে দেখা গেছে কাউন্টার খোলা থাকলেও টিকিট বিক্রি বন্ধ আছে। তবে গাড়ী ছাড়বে কিনা তাই কেউ পরিষ্কার করে বলতে পারছে না।
এদিকে গতকাল জরুরী প্রয়োজনে ঢাকা যেতে বাসের জন্য অপেক্ষারত টেকপাড়ার আজিম উদ্দিন বলেন, আমার চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে ঢাকা যাওয়া খুব জরুরী তা গাড়ীর জন্য বসে আছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,ছাত্রদের আন্দোলন ঠিকই আছে তবে সেটা যেন মানুষের কষ্টের কারন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। লারপাড়া এলাকার মনজুর আলম বলেন, আমার মা পবিত্র হজ্বে যাবেন তাই আমার ঢাকা যাওয়া খুব জরুরী আর বিমান নিয়ে যাওয়ার মত টাকাতো নেই। এভাবে অনেক পর্যটকও বাস না পেয়ে আটকা পড়তে দেখা গেছে।
এদিকে ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পরিবহণ খাত সংস্কারের নামে ছাত্র আন্দোলনের ব্যাপারে কক্সবাজার ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি কলিম উল্লাহ বলেন,একটি দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা দূর্বল হলেই মানুষ রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়। ছাত্ররা বর্তমানে যা করছে সেটা খুবই যৌক্তিক কারন পরিবহণ খাতে শৃংখলা ফিরিয়ে আনা খুবই জরুরী। সব চেয়ে বড় কথা বাস চাপায় নিহত হওয়ার ঘটনা যেভাবে বেড়েছে এটা সত্যি উদ্বেগ জনক।
আলাপ কালে কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যাপক জসিম উদ্দিন বলেন, আমাদের দেশের রাস্তাতো এখন মরণফাঁদ এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না, সে ক্ষেত্রে ছাত্র আন্দোলন যৌক্তিক,আর যতটুকু শুনছি সরকারও চেস্টা করছে সব দিকে একটি শৃংখলা ফেরাতে। এখন আমার মতে আন্দোলন দীর্ঘমিয়াদী হলে সাধারণ মানুষের কষ্ট হবে। সে জন্য সরকারের উচিত হবে বিষয়টি তাড়াতাড়ি সমাধান করা।
কক্সবাজার আইন জীবি সমিতির সাবেক সহ সাধারণ সম্পাদক এড, মোঃ আবদুল্লাহ বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখছি ছাত্ররা রাস্তায় নামার পরে ঢাকাতে অনেক শৃংখলা এসেছে। অনেক জায়গায় দেখা যাচ্ছে সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের গাড়ীর লাইসেন্স নেই,চালকের লাইসেন্স নেই। সব চেয়ে বড় কথা কিশোর বয়সের চালকরা চালাচ্ছে অনেক ভারী গাড়ী মোট কথা আইন থাকলেও তার প্রয়োগ নেই। এই আন্দোলনে একটি লাভ হবে সেটা হলো জাতির এবং সরকারের একটি চেতনা ফিরে আসবে সবাই দায়িত্বশীল আচরন করতে বাধ্য হবে।
কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর এ.কে.এম ফজলুল করিম চৌধুরী বলেন, নিরাপদ সড়ক সবার প্রত্যাশা,আমরা অবশ্যই চাইনা আমার ছেলেমেয়ে স্কুলে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরুক,যাদের হাতে গাড়ী ষ্টেয়ারিং ধরিয়ে দিচ্ছে তাদের যোগ্যতা পরীক্ষা করা উচিত। আইন থাকলেও এর প্রয়োগ এত দিন হতো আসা করি এবার সেটার প্রয়োগ হবে। তবে আন্দোলনের নামে কোন বিশৃংখলা কাম্য নয়।

পাঠকের মতামত: