ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজার জেলায় ১৯ দিনে এসেছে ১৭’শ প্রবাসী, ঘুরছে সর্বত্র

মাহাবুবুর রহমান, কক্সবাজার ::  হোম কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম না মেনে কক্সবাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রায় ২ হাজার বিদেশী এর মধ্যে ১৭০০ স্থানীয় প্রবাসী এবং বেশ কিছু গন্যমান্য ব্যাক্তি যারা বিভিন্ন কারনে বিদেশ সফর করেছে। গত ১৯ দিনে এ সব প্রবাসীরা দেশে এসেছে বলে জানা গেছে।

জেলার বিমানবন্দর, সিভিল সার্জন অফিস এবং পুলিশের দেওয়া তথ্য সূত্রে এই তথ্য পাওয়া গেছে। এ সব বিদেশ ফেরতরা কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে অংশ নিচ্ছে বিয়ে, মাহফিল সহ নানান সামাজিক অনুষ্টানে যাচ্ছে বাজার সহ সব ধরনের জনসমাগম স্থলে তাই এদের মাধ্যমে ব্যাপক হারে করোনা ভাইরাস ছড়াতে পারে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

ইতি মধ্যে প্রশাসন জেলায় ৮ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম না মানায় আর্থিক জরিমানা করলেও তাদের চলাফেরায় কোন পরিবর্তণ আসছেনা বলে জানান সে সব এলাকার স্থানীয় মানুষ।

চীনের উহান শহরে প্রথম প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস ধরা পড়ে গত বছরের ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে। সে থেকে পৃথীবির প্রায় ১৭০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই প্রাণঘাতি ভাইরাস। এর পর থেকে বাংলাদেশ সহ বিশে^র সব দেশ করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে প্রাথমিক ব্যবস্থা নিলেও ঠেকানো যায়নি করোনার বিস্তার।

এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন দেশে প্রায় ১০ হাজার মানুষ মারা গেছে এবং ২ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ আক্রান্ত বলে জানা গেছে। বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগি সনাক্ত হয় ৮ মার্চ তবে এর আগে থেকে বাংলাদেশের অন্যান্য বিমান বিমানবন্দর সহ কক্সবাজার বিমানবন্দরেও নেওয়া হয়েছিল সতর্কতা মূলত ব্যবস্থা।

এদিকে কক্সবাজার বিমানবন্দর এবং সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে গত ১৯ দিনে প্রায় ২ হাজার মানুষ বিদেশ থেকে দেশে এসেছে। এর মধ্যে ৩০০ জন বিদেশী নাগরিক এবং ১৭০০ জন স্থানীয় প্রবাসী একই সাথে বেশ কিছু গন্যমান্য ব্যাক্তি আছে যারা বিভিন্ন কারনে বিদেশ সফর করেছে। যার মধ্যে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কাতার, ইতালি, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, কয়েত, ওমান থেকে এসেছে।

বিমানবন্দর থেকে এসব প্রবাসীদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল কমপক্ষে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার। কিন্তু এসব প্রবাসীরা কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ঘুরে বেড়াচ্ছে সমস্ত জনবহুল স্থানে। ২০ মার্চ সকালে কক্সবাজার বড় বাজারে গরুর মাংস কিনতে এসেছেন পার্শবর্তি ইউনিয়ন খুরুশকুল থেকে আসা প্রবাসী। এ সময় উক্ত প্রবাসীতে অনেকে গালিগালাজ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি ঝগড়া করেছে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।

এছাড়াও গতকাল শহরের সাইফুল কমিউনিটি সেন্টারে খুরুশকুল এলাকার একটি বিয়ের অনুষ্টানে অন্তত ১৫ জন প্রবাসী এসেছিল বলে জানান বিয়েতে আসা খুরুশকুলের মিজান। তিনি জানান এখানে প্রথমে পুলিশ এসে বারণ করলেও পরে বিয়ের অনুষ্টান ঠিকই চলে পরে ম্যাজিস্ট্রেট এসে বারণ করলে সব কাজ তাড়াতাড়ি শেষ করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খুরুশকুল ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বলেণ, বিষয়টি আগে সেভাবে নজরে না আনলেও গত ১ সপ্তাহ ধরে প্রবাসীদের বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে। প্রবাসী আসলেও যে যার মত করে চলাফেরা করছে তবে তাদের বিমানবন্দর থেকেই বাধ্যতা মুলক ভাবে কোয়ারেন্টাইরে নেওয়া উচিত ছিল।

২০ মার্চ বেলা ১১ টার দিকে কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া বাজারে গিয়ে দেখা গেছে অন্তত ১৫/২০ বিদেশী বাজার করতে এসেছে। এ সময় বাহারছড়া বাজারের ব্যবসায়ী আবস সুবর বলেণ, সকাল থেকে অনেক বিদেশী এখান থেকে বাজার করে গেছে তাদের মাঝে কোন সতর্কতা বা অন্যকোন বিষয়ে কোন অনুধাবন আমরা লক্ষ করিনি।

পেকুয়া উপজেলার শীলখালী এলাকার সমাজ সেবক ইমরান আহামদ বলেন, এখানে অনেক প্রবাসী এসেছে যারা সম্প্রতী দেশে এসেছে তবে তাদের শরীরে কোন অসুস্থতার লক্ষণ নাই। আর তারা স্বাভাবিক সব কার্যক্রম করছে। বাজারে যাচ্ছে, স্থানীয় সব সামাজিক অনুষ্টানে যাচ্ছে আত্বীয় স্বজনের বাড়িতে যাচ্ছে এমনকি সাথে পরিবার পরিজন ও থাকছে। প্রথমে করোনা বিষয়ে এত বেশি সচেতনতা না থাকায় কেউ বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি তবে এখন অনেকে সচেতন হচ্ছে।

রামু খুনিয়া পালং ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মাবুদ বলেণ, আমাদের ইউনিয়নে ৪/৫ জন প্রবাসী এসেছে বলে জানা গেছে এর মধ্যে সবাই ঘুরে বেড়াচ্ছে। তবে এখন সবাইকে ইউপির মেম্বার এবং কর্মচারীর মাধ্যমে খবর পাঠানো হচ্ছে নিয়ম মেনে চলার জন্য। তবে আমার মতে তাদের বিমানবন্দর থেকেই সরাসরি হোমকোয়ারেন্টাইনে নিয়ে যাওয়া উচিত ছিল।

এ ব্যপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা বলেন, এখানে অনেক আগে থেকেই স্কেনার দিয়ে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের শরীরে তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে কিন্তু সেখানে সঠিক করোনা পরীক্ষার কোন কিছুই নেই এছাড়া মেডিকেল টিমের শুধু মাত্র পরামর্শ দেওয়া ছাড়া কিছুই করার নেই। এখন বিমানবন্দরের গেইটেই তাদের স্বজনরা অপেক্ষা করে সুতরাং গেইটে গিয়েই নিয়ম ভাঙ্গছে প্রবাসীরা এতে আমাদের কিছুই করার নেই। আমার মতে সরকার বিষয়টিকে আরো সিরিয়াস ভাবে নিলে ভাল হতো অনেক আগেই সেনাবাহিনীর মাধ্যমে প্রত্যেক বিদেশী ফেরত যাত্রীদের কোয়ারেন্টাইনে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা দেওয়া উচিত ছিল তাহলে এটা বাংলাদেশে মহামারী হতো না।

এ ব্যাপারে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডাঃ মাহাবুবুর রহমান বলেন, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে ১৭ জন করোনা রোগি সনাক্ত করা হয়েছে যার মধ্যে সবাই বিদেশ ফেরত আর তার পরিবারের সদস্য। তাই প্রবাসীদের মাধ্যমে এই মহামারী রোগ ছড়াচ্ছে এটাতো নিশ্চিত। তাই প্রবাসীদের কোন ভাবেই ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন ছাড়া পরিবারের সাথে মিশতে দেওয়া উচিত ঠিক হবে না। আর কক্সবাজার বিমানবন্দরে যে স্কেন মেশিন বসানো হয়েছে সেখানে সত্যিকার অর্থে তাৎক্ষনিক করোনা রোগি সনাক্তের কোন ব্যবস্থা নেই। এটা দেশের কোথাও নেই। এখন সবাইকে প্রবাসীদের নিয়ন্ত্রনে বেশি করে কাজ করতে হবে। আর কক্সবাজারে এ পর্যন্ত ৬৬ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে তার মধ্যে কক্সবাজার কারাগারে ৪৭ জন। যারা মায়ানমারের বৌদ্ধ নাগরিক।

রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রণয় চাকমা বলেণ, জেলা প্রশাসনের নির্দেশে ২০ মার্চ একদিনে ১০ জন প্রবাসীকে সনাক্ত করা হয়েছে ইতি মধ্যে তাদের হোম কোয়ারেন্টানে পাঠানে হয়েছে। এবং উপজেলার সব জায়গায় প্রবাসীদের সনাক্ত করার জন্য কাজ চলছে। প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হলেও আমরা নেব।
এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতি মধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় ৮ প্রবাসীকে অর্থ দন্ড করা হয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন,কক্সবাজারে আসা প্রবাসীতে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে এবং তাদের বিষয়ে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। দেশের স্বার্থে যা কিছু করার দরকার সরকারের পক্ষ থেকে সেটা আমরা করবো।

 

 

পাঠকের মতামত: