ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’তে ১ বছরের জন্য শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের সুপারিশ ও আমার পর্যবেক্ষণ: মাহবুবা

লেখক| মাহবুবা সুলতানা শিউলি…

সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি প্রসঙ্গে প্রকাশিত একটি সংবাদে আমার চোখ পড়েছে। সংবাদে বলা হয়েছে, নানা একাডেমিক, আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়মের কারণে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’তে (সিবিআইইউ) এক বছরের জন্য শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখার সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। তৎপ্রেক্ষিতে আমাদের বক্তব্য সংশ্লিষ্ট সবার উদ্দেশ্যে তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।

কঠোর লকডাউনে গত বছর ২রা জুন ২০২০ইং সিবিআইইউ’র প্রাক্তন চেয়ারম্যান সালাহউদ্দিন আহমদ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জবরদখলের পর গত ডিসেম্বরে একটি ভূয়া ট্রাস্ট গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার নামে প্রহসন করে চলেছে। ইউজিসি কর্তৃক প্রণীত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা নীতিমালা-২০১০ কে অমান্য করে সালাহ উদ্দিন গং অবৈধভাবে ভিসি, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার এবং সহযোগী অধ্যাপকসহ নানান পদে অযোগ্য লোকদের নিয়োগ দিয়েছে। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে দখলদার সিন্ডিকেট অবৈধভাবে নিয়োগকৃত এদেরকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের রেখে আসা সম্পদগুলো ভাগ-বাটোয়ারা করে লুটপাট করছে।

ইউজিসি’র অভিযোগে বলা হয়,“ভাড়া করা ভবনে চলে কার্যক্রম। সেখানে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার অনুকূল কোনো পরিবেশ নেই।” বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা নীতিমালা-২০১০ এর আলোকে সাময়িক অনুমতির মেয়াদান্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী অনুমোদন নিতে হয়। সেক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ রিকোয়ারমেন্ট ফিলাপ করতে হয়। যেমন নিজস্ব ক্যাম্পাস, গবেষণার পরিবেশ, পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ প্রভৃতি। আমরা এসব অনিবার্য বিষয়াদি পূর্ণ করার জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করেছি। ফলে সবকিছু প্রক্রিয়াধীন ছিল কিন্তু সালাহউদ্দিন আহমদ রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ডাকাতি করে নেয়ার ফলে এ যাত্রা থেমে যায়। আর যারা লোভের বশবর্তী হয়ে করোনা মহামারির কস্মিনকালে বন্ধ থাকাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় দখল করেছে তাদের পক্ষে এসব শর্ত পরিপালন করা কখনোই সম্ভব নয়।

যেহেতু ২০১৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার যাবতীয় আয়োজন আমরা করেছিলাম। ট্রাস্ট গঠন, ভবন ভাড়া, আসবাবপত্র ক্রয়, ব্যাংক ডিপোজিট ইত্যাদি আমরা সম্পন্ন করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর নিজস্ব ভূমিতে অবকাঠামো নির্মাণ, ল্যাব ও লাইব্রেরী সমৃদ্ধকরণ, নিয়ম মোতাবেক দক্ষ ও যোগ্য জনবল নিয়োগ দান, প্রচার-প্রকাশনা সবকিছুতে আমাদের বহু ত্যাগ-তিতিক্ষা, অবদান ও অভিজ্ঞতা রয়েছে। অতএব, আমাদের গৃহীত এতসব কর্মকান্ড অস্বীকার কিংবা হাইজ্যাক করে কোন ব্যবসায়িক প্রজেক্ট পরিচালনা করা গেলেও কখনো কোন বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করা সম্ভব নয়- আশা করি, সেটা যে কেউ বুঝবেন।

পত্রিকাটির প্রতিবেদনে ইউজিসির একজন কর্মকর্তার বরাতে বলা হয়, “কক্সবাজারের একমাত্র এ বিশ্ববিদ্যালয়টি নানা অনিয়মে জর্জরিত। উচ্চশিক্ষার কোনো পরিবেশ না থাকা ও আইন অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা না করায় বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী ভর্তি এক বছরের জন্য বন্ধ রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। তবে যে শিক্ষার্থীরা আগে থেকেই ভর্তি আছেন, তাদের পড়ালেখা স্বাভাবিকভাবে চলবে। এ এক বছর সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে রাষ্ট্রপতির নিয়োগকৃত উপাচার্যকে দায়িত্ব দেয়া, সংরক্ষিত তহবিলে নির্ধারিত অর্থ নিশ্চিত করা ও যোগ্য শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন শর্ত পূরণ করতে হবে। এ বিষয়ে তিন মাস পরপর কমিশনকে অবহিত করার কথাও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে”।

কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক উপাচার্য নিয়োগের জন্য ২০১৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার জন্য গঠিত রেজিস্টার্ড ট্রাস্টের বোর্ড মিটিংয়ের রেজুলেশনের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতির কাছে ৩ জনের বিশেষজ্ঞ প্রফেসরদের একটি প্যানেল সুপারিশ আকারে ইউজিসিতে পাঠাতে হবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় জবরদখলকারীগণ আমাদের সেই অধিকার ও ক্ষমতা অন্যায়ভাবে কেড়ে নিয়েছে।

সংরক্ষিত তহবিলে নির্ধারিত অর্থ নিশ্চিতকরণ কিংবা এর সঠিক ব্যাখ্যা কেবল বৈধ ট্রাস্টের ট্রাস্টিগণই দিতে পারবেন। কারণ, তারাই হলেন এ একাউন্টের পরিচালক। আমাদের সিদ্ধান্তে বিধি মোতাবেক যে সব যোগ্য শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগ প্রদান করা হয়েছিল ইতিমধ্যে সালাহউদ্দিন আহমদ তাদেরকে জোরপূর্বক বিদায় করে দিয়ে ইউজিসি’র বিধান ভঙ্গ করে তদস্থলে অযোগ্য, অদক্ষ ও অনভিজ্ঞ লোকদের নিয়োগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ধ্বংস করে দিয়েছে।

এমতাবস্থায় বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের অবহেলিত জনগণের উচ্চশিক্ষার নিমিত্তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত ইচ্ছায় পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারের একমাত্র এ বিশ্ববিদ্যালয় এখন বন্ধের উপক্রম হয়েছে। তাই জেলার সর্বস্তরের সচেতন নাগরিক ঐকবদ্ধভাবে দখলদার গোষ্ঠীর লুটপাটের মহোৎসব এখনই ভেঙ্গে না দিলে জেলা শহরে অবস্থান করে উচ্চশিক্ষার স্বপ্নসাধ চুরমার হয়ে যাবে। তাই একটি প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় রক্ষায় জবরদখলদারদের বিরুদ্ধে সবার সোচ্চার ভুমিকা কামনা করছি।
____________________________
প্রতিষ্ঠাতা সদস্য,
কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ট্রাস্ট।

পাঠকের মতামত: