ঢাকা,শনিবার, ২ নভেম্বর ২০২৪

ইলিশে সরগরম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র

আজিম নিহাদ, কক্সবাজার :: সাগরে মাছ ধরার নিষিদ্ধ সময় কাটতে না কাটতে প্রতিকূল আবহাওয়ার কবলে পড়ে জেলেদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছিল। মাছ ধরে কূলে ফিরতে না পারায় মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রেও ছিল সুনশান নিরবতা। তবে গত কয়েকদিনে সেই দুর্বিসহ সময় কাটতে শুরু করেছে। ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ায় ইলিশে সরগরম হয়ে উঠেছে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণকেন্দ্র।
সরেজমিনে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন পর কর্মব্যবস্থা বেড়েছে সেখানে। অবতরণ কেন্দ্রে একের পর এক ইলিশের স্তুপ। সকাল থেকেই ফিশিং ট্রলার ভিড়ছে আর মাছ নামিয়ে আবার রওনা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দীর্ঘদিন পর জেলেদের চোখেমুখে সন্তুষ্টির হাসি দেখা যায়।
মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বন্ধ থাকায় সেখানে বরফ ভাঙা, মাছ আনলোড করা, প্যাকেটজাত করা, দেশের বিভিন্ন বাজারে অভ্যন্তরীণ রপ্তানীর ট্রাক ভর্তি করে দেওয়াসহ নানা কাজে নিয়োজিত বিপুল পরিমাণ শ্রমিক বেকার হয়ে কষ্টে দিনযাপন করছিল। মাছ ধরার ধামাকা শুরু হওয়ায় তারাও ব্যস্ত সময় পার করছে।
ফিশিং ট্রলার থেকে মাছ উঠানোর কাজে নিয়োজিত শ্রমিক আবুল কালাম (৩৫)। তিনি বলেন, অনেক ধার-দেনা করে এতদিন সংসার চালাতে হয়েছে। মাঝেমধ্যে দিনমজুরির কাজ করলেও টানাপোড়েনে ছিল সংসার। কিন্তু মাছ ধরা শুরু হওয়ায় গত তিনদিন বেশ ভালো আয় হয়েছে। দৈনিক ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকাও আয় হচ্ছে তার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি মৌসুমের প্রথম ইলিশ বাজারে উঠেছে এ সপ্তাহে। তাই শুরুর দিকে দাম কিছুটা বাড়তি থাকলেও ধীরে ধীরে নাগালের মধ্যে চলে আসছে বলে জানিয়েছে মাছ ব্যবসায়ীরা।
বর্তমানে ৫০০ গ্রাম (প্রতি পিচ) ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে এবং ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম (প্রতি পিচ) ওজনের ইলিশ ৬০০ টাকা থেকে ৮ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে। তবে অবতরণ কেন্দ্রের বাইরে শহরের বিভিন্ন বাজারে ইলিশের দাম এখনো কিছুটা বাড়তি।
এর কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞার পরপরই ফিশিং ট্রলারগুলো সাগরে স্বাভাবিকভাবে মাছ ধরার সুযোগ পেত তাহলে এতদিনে ইলিশ পানির দরে মিলত। কারণ গেল বছরের এই মৌসুমে নামমাত্র দামে বিক্রি হয়ে ইলিশ। এবার নিষেধাজ্ঞা সময় কেটে উঠনে না উঠতে বৈরী আবহাওয়ার কবলে পড়ায় ইলিশ ধরা শুরু হয়েছে অনেক দেরিতে। একারণে ইলিশের দাম নাগালে আসতে কিছুটা সময় হচ্ছে। তবে আবহাওয়ার বর্তমান পরিস্থিতি বজায় থাকলে আগামী সপ্তাহে দাম অনেক কমে যাবে বলে আশা করেন ব্যবসায়ীরা।
মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, টানা ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা শেষ হতে না হতে প্রতিকূল আবহাওয়ার কবলে পড়ে জেলেরা। এরফলে মাছ আহরণে চরম ব্যাঘাত ঘটে। অনেক ফিশিং ট্রলার খারাপ আবহাওয়ার কবলে পড়ে লোকসানের শিকার হয়। তবে কয়েকদিন ধরে আবহাওয়ার অবস্থা তুলনামূলক ভালো। গত তিনদিন ধরে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ নিয়ে কূলে ফিরেছে জেলেরা। সাগর ইলিশে ভরপুর। আবহাওয়া ঠিক থাকলে চলতি মৌসুমে অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি ইলিশ ধরা পড়বে বলে আশাবাদী মৎস্য বিভাগ।
মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার থেকে ইলিশ বেশি ধরা পড়ছে। পাশাপাশি অন্যান্য মাছও ধরা পড়ছে। তবে সেটি তুলনামূলক কম। শুক্র ও শনিবার দুইদিনে এক’শ টনের বেশি ইলিশ ধরা পড়েছে। রোববারও এ দুইদিনের তুলনায় আর একটু বেড়েছে। এ অবস্থা বজায় থাকলে বাজার ইলিশে ভরপুর হয়ে যাবে।
ছিদ্দিক আহমেদ (৫৫) নামে একটি ফিশিং ট্রলারের মাঝি জানান, নিষেধাজ্ঞার পর আবহাওয়া খারাপ থাকায় সাগরে মাছ ধরা সম্ভব হয়নি। এই বৈরী আবহাওয়া বেশকিছুদিন বিদ্যমান ছিল। কয়েকদিন আগে আবহাওয়ার প্রতিকূল অবস্থা কাটতে শুরু করেছে। ফলে এখন প্রচুর মাছ ধরা পড়ছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে মাছ নিয়ে অবতরণ কেন্দ্রে আসতে শুরু করেছে ফিশিং ট্রলারগুলো। অবতরণ কেন্দ্রে মাছ আনলোড করার সঙ্গে ফের চলে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
‘বর্তমানে বেশির ভাগ ফিশিং ট্রলার মাছ ধরার জন্য সাগরে রয়েছে। আবহাওয়ার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে ইলিশে ভরপুর হবে’। জানান-মাঝি ছিদ্দিক আহমেদ।
ট্রলার মালিকেরা জানান, বৃহস্পতিবার থেকে মাছভর্তি ট্রলার মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে ভিড়তে শুরু করে। সব ট্রলার মাছ নিয়ে কূলে ফিরলে ইলিশের দাম কমে যাবে। কারণ এবার ইলিশ আশানূরূপ বেশি ধরা পড়ছে। ইলিশের সাইজও তুলনামূলক বড়।
মৎস্য ব্যবসায়ী ঈসমাইল হোসেন আবু বলেন, ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন লোকসানে ছিল। সবাই আশা করেছিল নিষিদ্ধ সময়ের পরপরই ব্যবসায় চাঙাভাব শুরু হবে। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে সেটা হয়নি। অনেকদিন অপেক্ষার পর অবশেষে গত কয়েকদিন ধরে ইলিশ নিয়ে কূলে ফিরতে শুরু করেছে ফিশিং ট্রলারগুলো। অনেক দিন পর ব্যবসায়ীদের আবারও ব্যস্ততা বেড়েছে বলে দাবী তার।
তিনি আরও বলেন, গত তিনদিন ধরে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে ইলিশ রপ্তানীর হার অনেক বেড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে ট্রলার মালিক, ব্যবসায়ী, শ্রমিকসহ সবাই আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।
কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক শরিফুল ইসলাম চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘শুক্রবার থেকে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে মাছভর্তি ট্রলারের ভিড় বেড়েছে। এরমধ্যে ইলিশের সংখ্যাই বেশি।’

পাঠকের মতামত: