আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র ফেরত আসবে এবং আওয়ামী লীগও গণতন্ত্রের মূল চেতনায় ফিরবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্মমহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। সেইসাথে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বিএনপি যোগ দেবে বলে জানান তিনি।
আজ শুক্রবার সকালে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, আমরা খুশি হয়েছি আমাদেরকে দাওয়াত দিয়েছেন, আমরা আনন্দিত। আমাদের সম্মেলনে কিন্তু আপনারা আসেন নাই এবং সৌজন্যবোধের কারণে টেলিফোন করে দুঃখ প্রকাশও করে নাই যে আমরা আসতে পারি নাই। কিন্তু আমরা আপনাদের মতো হীনমন্য নই। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে আপনারা আমন্ত্রণ জানিয়েছেন আপনাদের সম্মেলনে যাওয়ার জন্য বলেছেন। বিএনপি যে একটা উদার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল সেই প্রমাণ আপনারা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দিন পাবেন ইনশাল্লাহ। আমরা যাব।
উল্লেখ্য, ২০তম জাতীয় সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। গত বৃহস্পতিবার দলের উপ দফতর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাসের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মির্জা ফখরুলের সাথে দেখা করে এই আমন্ত্রণপত্র পৌঁছিয়ে দেন।
আজ জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে জাতীয়তাবাদী বন্ধু দলের উদ্যোগে বিএনপি নেতা মরহুম আ স ম হান্নান শাহের স্মরণে এই আলোচনা সভা হয়।
সংগঠনের সভাপতি শরীফ মোস্তফা জামান লিটুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদসহ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আপনারা যদি শপথ করেন, আপনারা যদি কোনো নাটক না করেন, ২১ আগস্টেও গ্রেনেড হামলা করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, যখন তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার বাসার উদ্দেশে রওনা করেছিলেন, ছাত্রলীগ-যুব লীগের ছেলেরা পুরো রাজপথে তাণ্ডব করে এমন একটা অবস্থা তৈরি করেছিলো যে, সিকিউরিটির কারণে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ফেরত আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। এমন অবস্থা যদি না করেন, ইনশা আল্লাহ আপনাদের সম্মেলনে অংশগ্রহণ করার জন্য, আপনাদের আশীর্বাদ করার জন্য, আপনাদের ভুলগুলো ধরিয়ে দিয়ে আপনাদের সংশোধিত পথে ফেরত আসার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে আশীর্বাদ-দোয়া-সহযোগিতা-অংশগ্রহণ সবই থাকবে।
আওয়ামী লীগের কাউন্সিল উপলক্ষে সারা ঢাকায় ব্যাপক নিরাপত্তার সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমাদের কাছে প্রশ্ন জাগে যে, এই সম্মেলনটা কী র্যাবের সম্মেলন, পুলিশ বাহিনীর সম্মেলন, বিজিবির সম্মেলন? না-কি ডগ স্কোয়াডের সম্মেলন? আমরা দেখছি, একমাস ধরে এমন একটা অবস্থা তৈরি করা হয়েছে, এমন একটা আবহাওয়া তৈরি করা হয়েছে, বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট মঞ্চ তৈরি হচ্ছে। আজকে থেকে রাস্তা-ঘাটে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। তার মানেটা কি? মনে হচ্ছে যেন সরকারের একটা সম্মেলন হচ্ছে। র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ তার সভাপতি হবেন আর ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া হয়ত সাধারণ সম্পাদক হবেন-এমন একটা ভাব।
আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ‘কোটি কোটি’ খরচের সমালোচনা করে বিএনপির এই যুগ্মমহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগকে আহবান জানাব এই সম্মেলন থেকে আপনারা গণতন্ত্রের মূল চেতনায় ফেরত আসার ঘোষণা দিন। আপনাদের সেই ঐতিহ্য ১৯৬৬, ১৯৬৯, ১৯৭০-এর নির্বাচনের সেই ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে দিয়ে নতুন প্রজন্মের যারা বাংলাদেশে রয়েছেন, এদেরকে জানিয়ে দিন যে আওয়ামী লীগ সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক দল। স্বৈরাচার হিসেবে তাদেরকে যে ডাকা হয়, এই কথাটি ভুল। তাহলে বাংলাদেশের মানুষ অনেক বেশি খুশি হবে এই রঙিন বাতির চেয়ে, এই ডগ স্কোয়াডের চেয়ে, এই র্যাব-পুলিশের পাহারার চেয়ে, এই রাস্তা-ঘাট আটকানোর চেয়ে।
হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আলোকসজ্জা দেখে মনে হচ্ছে, ঢাকা শহরের বিয়ে। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের দল বলে নিজেকে দাবি করে। মুক্তিযুদ্ধের দল বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দল যদি হয়ে থাকেন আমি ঘোষণা শুনতে চাই, আগামী ৭ নভেম্বরে বিএনপি যেখানে সমাবেশ করতে চাইবে, সোহরাওয়ার্দি উদ্যান যদি চায়, বিএনপির অফিসের সামনে যদি চায়, সেখানে সমাবেশ করতে পারবে।
আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, আওয়ামী লীগের সম্মেলনের কর্মকাণ্ডে মনে হচ্ছে তাদের বিদায় ঘণ্টা বেজেছে। তারা আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না। এবরাই শেষ সম্মেলন। তা না হলে এত জাঁকজমকভাবে, রাস্তাঘাট বন্ধ করে, মানুষের কষ্ট দিয়ে তারা সম্মেলন করত না। তিনি সম্মেলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে গণতন্ত্রের পথে ফিরে আসার আহ্বান জানান।
পাঠকের মতামত: