শহরের বাজারে নিম্নমানের এসব অস্বাস্থ্যকর প্যাকেটজাত খাবার বিক্রি হচ্ছে।
কক্সবাজার বাজারঘাটা সংলগ্ন একটি খালি জায়গায় ১০-১২ জন শিশু’কে খেলতে দেখা যায়। তাদের কয়েকজনের হাতে ছিল ছোট পলিথিনের বস্তাবর্তী এক ধরনের আইসক্রিম। কয়েকজনের হাতে ছিল ‘পরাণ জুস’ নামে পলিথিন ভর্তি হলুদ রং এর এক ধরনের জুস। শিশু’রা যখন’ই এই খাবারগুলো খাচ্ছিল তখন তাদের মুখ আর বুকে খাবারের রং লেগে রঙ্গিন হয়ে যায়। খাবারগুলো দেখে নিম্নমানের আর অস্বাস্থ্যকর মনে হওয়ায় ওই শিশুদের কাছে জানতে চাওয়া হয় এসব খাবার কোথা থেকে কিনেছে।
তাদের সূত্র ধরে জানা যায়, কক্সবাজার শহরের বড়বাজারের পাইকারী বিক্রেতা এসব খাবার বিক্রি করছে। আর তাদের কাছ থেকে যাচ্ছে শহর আর গ্রামের খুচরা বিক্রেতাদের কাছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায, বড়বাজারের বেশিরভাগ পাইকারী দোকানে বিক্রি হচ্ছে এসব খাবার। যেসব খাবারের গায়ে বিএসটিআই’এর সীল নেই। অমনকি অনেকগুলো গায়ে কোন কোম্পানীর তাও লিখা নেই। আইসক্রিম আর জুস ছাড়াও এই ধরনের খাবারের মধ্যে রয়েছে পরান জুস, আলমগীরের টেস্টি জেলী, মজা সলটেস, তপু চকবার, সাগু দানা, তামজিদ আইস বার, ভিটা সান, চার ভাই তৃপ্তি মেংগু, বস্তা আইসক্রিম, এছাড়া পেকেট ভর্তি করে বিক্রি করা হচ্ছে টেং সদৃশ পাউডার। এছাড়া রয়েছে আরো অনেক ধরনের পলিথিন ভর্তি পেকেটজাত খাবার।
আর এই প্যাকেটজাত খাবারগুলো বিক্রি হচ্ছে বাজার ঘাটা’র আল কালাম ষ্টোর, মামুন ব্রাদার্স, শারমিন ষ্টোর, আমানউল্লাহ ষ্টোরসহ বেশিরভাগ পাইকারী মুদির দোকানে।
এ খাবারের ব্যাপারে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের চিকিৎসক জানান, এই অস্বাস্থ্যকর খাবার খেলে পেট খারাপসহ নানা ধরনের রোগ হতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের জন্য এই খাবার খুবই ঝুকিপূর্ন। এই অস্বাস্থ্যকর খাবারে থাকা রং আর ক্যামিকেলগুলো ক্যানসারসহ শরীরে নানা ধরনের স্থায়ী রোগ সৃষ্টি করতে পারে।
এসব খাবারের ব্যাপারে জানতে চাইলে কালাম ষ্টোরের আব্দুল কালাম জানান, চকরিয়া থেকে এক ব্যক্তি এসে এই ‘ চার ভাই তৃপ্তি মেংগু আইসক্রিম দেয়। কিন্তু তাদের সাথে নাকি তার কোন যোগাযোগ নেই। তবে স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে এই কালাম ষ্টোরই হচ্ছে এসব অস্বাস্থ্যকর খাবারের বড় পাইকারী বিক্রেতা। বিএসটিআই এর অনুমোদন ছাড়া এই খাবার স্বাস্থ্য সম্মত কিনা জানতে চাইলে বলেন, তিনি এসব ব্যাপারে জানেননা কিন্তু এই খাবারের চাহিদা ভাল।
মামুন ব্রাদাসের আনোয়ার হোসেন জানান, শুধু তারা নয় বেশিরভাগ পাইকারী মোদির দোকানই এই খাবার বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য কোম্পানীর মালের তুলনায় এই মালগুলোর চাহিদা বেশি। তাই বিক্রিও বেশি হচ্ছে।
আমানউল্লাহ ষ্টোরে গিয়ে এক ভিন্ন চিত্র দেখা যায়, ‘তপু চকবার’ নামে এক ধরনের খাবারের পেকেটের ভিতরে বেশ কিছু দুই টাকা আর ১০ টাকার নোট দেখা যায়। এ বিষয়ে আমান উল্লাহ ষ্টোরের মালিক আমান উল্লাহ জানান, এই পেকেট কিনলে এই টাকাগুলো উপহার হিসেবে পাওয়া যাবে।
এছাড়া আরো নানা ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে এই ধরনের অস্বাস্থ্যকর নিম্নমানের খাবার।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার সেনেটারী ইন্সপেক্টর নুরুল কবির কাদেরী জানান, অসাধু ব্যবসায়ীরা খাবারে যে রং ব্যবহার করে তা স্বাস্থ্য সম্মত নয়। আর এই খাবার বাজারজাত হয়ে জনগনের হাতে যাচ্ছে যা সম্পূর্ণ অস্বাস্থ্যকর এবং বেআইনী। আর এই অপরাধ প্রমানিত হলে খাদ্য আইনে অপরাধের ধরন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে জেল-জরিমানা হবে।
পাঠকের মতামত: