ঢাকা,বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪

অনিয়মেই চলছে ১৯ আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ

এম. বেদারুল আলম :: নির্মাণ কাজের নির্ধারিত সময় শেষ হয়েছে গত বছরের জুনে। গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে ৭০ শতাংশ। অবশিষ্ট কাজ কখন শেষ হবে তাও বলতে পারছেনা সংশ্লিষ্টরা। তড়িঘড়ি করে উদ্বোধন হওয়া কয়েকটি আশ্রয় কেন্দ্র ৫ মাসেও সচল হয়নি। কাজের গুণগতমান, পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা বেহাল, সেফটি ট্যাংক থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে মলমুত্র। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে ব্যবহারের জন্য অনুমতি থাকলেও ব্যবহার অনুপযোগি হওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্র সমুহ কাজে আসছেনা। ফলে সরকারের গুরুত্পূর্ণ প্রকল্প উপকূলীয় এলাকার মানুষের নিরাপত্তার জন্য নির্মিতব্য ১৯টি আশ্রয় কেন্দ্র নির্মান শেষ না হওয়ায় যথা সময়ে সুফল আসছেনা। দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন মন্ত্রণালয়ের দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর গত বছর থেকে এ আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে জেলার ১৯টি আশ্রয় কেন্দ্রের ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে দাবি জেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ কর্মকর্তার মাহবুবুল হাসানের। আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ শেষ হলে জেলার ২০ হাজার উপকূলীয় দূর্যোগপ্রবণ মানুষ এ প্রকল্পের সুফলের আওতায় আসবে।
জেলা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সারা দেশের ৩টি বিভাগের ২৬ জেলার ৮৬টি উপজেলায় ২২০টি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মান করছে সরকার। তৎমধ্যে কক্সবাজারের ৮ উপজেলায় ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মান কাজ শুরু হয় ২ বছর আগে। প্রতিটি আশ্রয় কেন্দ্রের নির্মাণে বরাদ্দ দেওয়া হয় ২ কোটি টাকা। উপকূলীয় ও ঘূর্ণিঝড় প্রবণ এলাকায় বহুমূখী ঘূর্নিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প (২য় পর্যায়) এর আওতায় উক্ত ১৯টি আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়। আশ্রয় কেন্দ্রসমূহ হলো বড় মহেশখালী আইল্যান্ড হাইস্কুল বহুমুখী আশ্রয় কেন্দ্র, ছোট মহেশখালী আহমদিয়া সুন্নিয়া দাখিল মাদ্রাসা আশ্রয় কেন্দ্র, কালারমারছড়া উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্র, কুতুবজোম অপসোর হাইস্কুল বহুমুখী আশ্রয় কেন্দ্র, শিলখালী উচ্চ বিদ্যালয় বহুমুখী আশ্রয় কেন্দ্র, বারবাকিয়া ফাসিয়াখালী ফাজিল মাদ্রাসা বহুমুখী আশ্রয় কেন্দ্র, রাজাখালী বেসারাতুল উলুম ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্র, পূর্ব বড় ভেওলা জয়নাল আবেদীন মহিউচ্চুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসা আশ্রয় কেন্দ্র, বদরখালী আল আজহার উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র, চৌফলদন্ডী সাগরমনি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র, পিএমখালী উত্তরপাতলী আবু বক্কর ছিদ্দিক রা. দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্র, সাবরাং শাহপুরির দ্বীপ হাজি বশির আহমদ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র, টেকনাফ বডারগার্ড পাবলিক স্কুল কেন্দ্র, লেমশীখালী সতর উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র, উত্তর ধুরুং উত্তরণ বিদ্যানিকেতন কেন্দ্র, মাদারবুনিয়া ছেপটখালী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, বালুখালী কাশেমিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র, রামু মনসুর আলী সিকদার আইডিয়াল স্কুল কেন্দ্র, জোয়ারিয়ানালা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্র।
এরমধ্যে সদরের পিএমখালীর পাতলী হযরত আবু বক্কর ছিদ্দিক দাখিল মাদ্রাসা আশ্রয় কেন্দ্রটি গত ৫ মাস আগে উদ্বোধন করে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ১৩ অক্টোবর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আশ্রয় কেন্দ্রটি উদ্বোধন করেন। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আশ্রয় কেন্দ্রের নির্মাণ কাজে নানা অনিয়ম ও কাজে পুকুরচুরি করায় এখনো সচল করা যায়নি আশ্রয় কেন্দ্রটি।
মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মৌলানা আবদুল গফুর বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাইক্লোন সেল্টারটি উদ্বোধন করেছেন ৫ মাস অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু আজো সেফটি ট্যাংকির পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা না করায় শিক্ষার্থীরা প্রাকৃতিক কর্ম সারতে পারছেনা। ফলে ৪ শতাধিক শিক্ষার্থীর চরম দূভোর্গ পোহাতে হচ্ছে। তিনি বলেন, বাথরুমের পানি নিস্কাশন ব্যবস্থার অচলতার কারণে ২ কোটি টাকার ভবন কোন কাজে আসছেনা। সেফটি ট্যাংকি ও নিচে নির্মাণ করার কারণে আগামী বর্ষায় এমনিতেই ভরে যাবে। ফলে দূর্যোগে পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা কাজে আসবেনা। ঠিকাদারের অবহেলার কারণে সর্বত্রে এমন কাজ হয়েছে বলে বিভিন্ন এলাকা থেকে অভিযোগ উঠেছে।
উক্ত আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো- দরিদ্র জনগোষ্ঠির দূর্যোগে আশ্রয়, তাদের গবাদিপশু ও জানমালের নিরাপত্তা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসাবে তথা জনহিতকর কাজে ব্যবহার।
উল্লেখ্য উক্ত আশ্রয় কেন্দ্রসমুহে বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য উঠানামার রেম্প, গর্ভবর্তীদের ও শিশুদের জন্য ২য় তলায় আলাদা আশ্রয় কক্ষ, ২য় ও ৩য় তলায় আশ্রয় কেন্দ্র, ৪৪০ কিলোওয়াটের সৌর প্যানেল, গবাদি পশুর আশ্রয়ের জন্য বিশেষ শেড নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জায়গায় নির্মাণ করায় স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শ্রেণিকার্যক্রমের জন্য ব্যবহার করা নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে নির্মাণ কাজে অনিয়মের কারণে অনেক ক্ষেত্রে তা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক উক্ত ৩৯টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। সরকার উপকূলীয় এলাকার অসহায় দরিদ্র প্রান্তিক জনগোষ্ঠির নিরাপত্তা নিশ্চিতে উক্ত আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করছে। নির্মান কাজে স্বচ্ছতা ও যথাসময়ে নির্মাণ কাজ শেষ হলে এ প্রকল্পের সফলতা হিসাবে জেলার ২০ হাজার মানুষ উপকৃত হবে।

পাঠকের মতামত: