ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

চকরিয়ার শিক্ষিকা জিশান শামশেদ এটুআই ICT4E জেলা অ্যাম্বাসেডর মনোনীত

এম.মনছুর আলম, চকরিয়া :: কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারাস্থ মালুমঘাট চা-বাগান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা জিশান শামশেদ এবার ICT4E জেলা অ্যাম্বাসেডর হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। তিনি অত্যন্ত সুনামধন্য শিক্ষক হিসেবে সু-পরিচিত।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পরিচালিত শিক্ষা মন্ত্রনালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের বাস্তবায়নে এটুআই শিক্ষক বাতায়ন কর্তৃপক্ষ সোমবার (আজ) দুপুরে তাকে জেলা অ্যাম্বাসেডর হিসেবে মনোনীত করেন এবং তা শিক্ষক বাতায়নে প্রকাশ করা হয়।

জানাগেছে, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে সরকারের শিক্ষা মন্ত্রনালয় এবং তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) শিক্ষা ক্ষেত্রে উদ্ভাবন নিয়ে প্রায় এক যুগ ধরে কাজ করে যাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নে মূলত একুশ শতকের শিক্ষার্থীর জন্য প্রয়োজন একুশ শতকের শিক্ষা ব্যবস্থা। এই একুশ শতকের শিক্ষা ব্যবস্থায় নেতৃত্ব দিতে প্রয়োজন একুশ শতকের চাহিদা উপযোগী শিক্ষক। তাই শিক্ষকদের উপর আস্থা রেখে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিশ্বমানের করে গড়ে তুলতে এবং শিক্ষকদের দক্ষ তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানে সমৃদ্ধ করতে চায় বাংলাদেশ সরকার। তাই শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের তথ্য প্রযুক্তি জ্ঞানে সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে প্রতিনিধিত্ব করণের জন্য একজন শিক্ষককে কয়েকটি মানদন্ডের নিরিখে এটুআই ICT4E জেলা অ্যাম্বাসেডর হিসেবে মনোনীত করা হয়ে থাকে। সারাদেশ থেকে নিরীক্ষার মাধ্যমে দক্ষ শিক্ষককে জেলা অ্যাম্বাসেডর নির্বাচিত করেন এটুআই।

জেলা অ্যাম্বাসেডর হিসেবে মনোনীত শিক্ষিকা জিশান শামশেদ কক্সবাজার জেলার নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলার বাসিন্দা। তার শ্বশুর বাড়ি চকরিয়া উপজেলার পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের সিকদার পাড়া গ্রামে। তিনি কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস এস সি, কক্সবাজার সরকারি কলেজ থেকে এইচ এস সি এবং স্নাতক ডিগ্রিধারী। চাকুরি জীবনের পাশাপাশি বর্তমানে মাস্টার্সে পড়ালেখা চলমান রয়েছে। ২০১০ সালে টেকনাফ উপজেলার কেরুনতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পেশায় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে নব জাতীয়করণকৃত চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারাস্থ মালুমঘাট চা-বাগান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এ বদলী হন। তিনি চা-বাগান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতির সংখ্যা বৃদ্ধিতে নানা পদক্ষেপ হাতে নেয়। যার মধ্যে হোম ভিজিটিং, উঠান বৈঠক ও অভিভাবক সমাবেশও করেন তিনি। তার সুদক্ষ নেতৃত্বে বিদ্যালয়ের মানসম্মত মনোরম পরিবেশ গড়ে তোলার পাশাপাশি শিক্ষার্থীর শতভাগ উপস্থিতিতে অনন্য ভুমিকা রেখে যাচ্ছেন। অল্প সময়ের ভেতর তিনি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। তিনি শিক্ষাকতা পেশার পাশাপাশির সাথে বিভিন্ন বিষয়ের উপর লেখালেখি করেন। তিনি বহুগুণে গুনান্বিত। পড়ালেখায় যেমন মেধাবী ছিলেন তেমনি সংস্কৃতিপ্রেমিও।

তার লেখার মাঝে ছিল কবিতা, ছড়া, ও কৌতুক অন্যতম। চা-বাগান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান পর তিনি বিদ্যালয়ের সকল কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন দিবসে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ প্রতিযোগিতা মুলক ইভেন্টে শারীরিক কসরত, ডিসপ্লে গুলোতে তার নেতৃত্বে গৌরব অর্জন লাভ করে স্কুলটি। তাছাড়া উপজেলা কর্তৃক বিভিন্ন কার্যক্রমে তিনি অংশগ্রহণের মাধ্যমে ভূমিকা পালন করে থাকেন। বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ মাধ্যমে পুরস্কারসহ সনদ অর্জন করেছেন। এর ফলে স্কুলে সহকর্মী, ম্যানেজিং কমিটি, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে একজন জনপ্রিয় শিক্ষক হয়ে উঠেন শিক্ষিকা জিশান শামশেদ। চাকুরি জীবনে তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি নানা সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ এর মাধ্যমে মানবসেবা মুলক কাজ করে থাকেন। বর্তমানে করোনা চলাকালীন শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় মনোনিবেশ করতে ও শিক্ষার্থীদের শিখন কার্যক্রম ধরে রাখতে কক্সবাজার জেলায় প্রথম অনলাইন ক্লাস এবং অন্যান্য অনলাইন কার্যক্রম এ অবদান রেখেছে। পাঠদান আনন্দদায়ক প্রতিদিন মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের জন্য ২০১৯ সালে শ্রেষ্ঠ আইসিটি শিক্ষকও নির্বাচিত হন। এছাড়াও বাংলাদেশ বেতার কক্সবাজার বেতার কেন্দ্রে কথিকা উপস্থাপক “বেতার বিদ্যালয় ” অনুষ্ঠানের উপস্থাপক হিসেবে দায়িত্বপালন করে যাচ্ছেন।

চা-বাগান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা জিশান শামশেদ বলেন, বর্তমানে বৈশ্বিক মহামারির করোনাকালে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন থেকে। যার ফলে শিক্ষার্থীরা প্রাতিষ্ঠানিক পাঠগ্রহণের সুযোগ থেকে দূরে রয়েছে। শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ঘাটতি যতে না ঘটে তার জন্য তিনি এ করোনাকালে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। অনলাইন তথা ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে দেশের সর্বস্তরের শিক্ষার্থীদের আনন্দঘন উপায়ে পাঠগ্রহণের সুযোগ করে দিতে তিনি পাঠ ও শিক্ষামূলক নানা কনটেন্ট সৃষ্টি করেন। এসব কনটেন্ট শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতেও তিনি সমান উদ্যোগী রয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে কক্সবাজার জেলা অনলাইন প্রাইমারি স্কুলসহ ইন্টারনেট ভিত্তিক বিভিন্ন মাধ্যমে পাঠ কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। সরকারের শিক্ষক বাতায়নে তার এ পর্যন্ত বহু কনটেন্ট, অনলাইন ক্লাস প্রকাশ পেয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ভবিষ্যত পরিকল্পনায় যতোদিন চাকুরিতে থাকবেন ততোদিন শিক্ষার্থীর কল্যাণে ও মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা, ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে সহায়তা এবং সুন্দর সমাজ গঠনের কল্যাণে তিনি নিয়োজিত থাকতে চাই বলে জানান।

পাঠকের মতামত: