ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

রাঙ্গুনিয়ায়ও জিয়াকে কবর দিতে কেউ দেখেনি -তথ্যমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক :: বিএনপিকে অসত্য এবং মিথ্যাচারের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং অসত্যের ওপর বিএনপির রাজনীতিটা দাঁড়িয়ে আছে। মিথ্যা আর অসত্যের ওপর রাজনীতি করে বেশিদিন ঠিকে থাকা যায় না, এটিই হচ্ছে ইতিহাসের শিক্ষা। তাহলে হয়তো বিএনপির আজকের যে অবস্থা সেটা থেকে মুক্তি পেতে পারে।

আজ শুক্রবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে ১৫ ও ২১ আগস্টে নিহতদের স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম উত্তরজেলা ছাত্রলীগ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।

তিনি বলেন, গতকাল প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা একটি সত্য কথা বলেছেন। চন্দ্রিমা উদ্যানে আসলে জিয়াউর রহমানের লাশ নাই। সেটি যখন প্রধানমন্ত্রী বললেন, বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটা বক্তব্য দিয়েছেন, অবশ্য সেটা নাদিলে তার মহাসচিব পদ থাকে কিনা সেটাও একটা ব্যাপার আছে।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমি তো চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার মানুষ। রাঙ্গুনিয়ার পোমরা ইউনিয়নে নাকি জিয়াউর রহমানকে প্রথম কবর দেওয়া হয়েছিল। সেখানেও জিয়াউর রহমানকে কবর দিতে কেউ দেখেনি, একটা বাক্স দেখেছিল। সেদিনকার প্রত্যক্ষদর্শী বর্তমানে সেই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কুতুব উদ্দিন, তিনিও আমাকে জানিয়েছেন আমরা জিয়াকে দেখি নাই। সেসময়ের আরো অনেকেই জীবিত আছেন। তথাকথিত প্রথম কবরেও আসলে জিয়াউর রহমানের লাশটা কেউ দেখে নাই। এমনকি খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া, বিচারপতি সাত্তারও দেখে নাই। জিন কিংবা ভুতে দেখেছে কিনা আমি জানি না।

উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর হোসেন চৌধুরী তপুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন উত্তরজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম, সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. আতাউর রহমান, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা স্বজন কুমার তালুকদার, দেবাশীষ পালিত, জসিম উদ্দিন শাহ, শাহজাহান সিকদার, নজরুল ইসলাম তালুকদার, ইদ্রিছ আজগর, গিয়াস উদ্দিন, ইফতেখার হোসেন বাবুল, আকতার হোসেন খাঁন, শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপির নেতারা ক্রমাগতভাবে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকাকে অস্বিকার করে আসছে। তারা একজন খলনায়ককে নায়ক বানানোর অপচেষ্টা চালান। ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে জিয়াউর রহমানের তথাকথিত কবরে যান তারা, কোন সময় কারো বিয়ে ও কর্ণছেদন অনুষ্ঠান উপলক্ষেও তারা জিয়াউর রহমানের কবরে যান সেটাই এখন চিন্তার বিষয়। সেখানে গিয়ে আবার তারা মারামারি করেন।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে খাটো করার অনেক অপচেষ্টা হয়েছে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাসের পাতা থেকে নির্বাসিত করার অপচেষ্টা হয়েছে। রেডিও টেলিভিশন রাষ্ট্রিয় প্রচার যন্ত্র থেকে বঙ্গবন্ধুকে নির্বাসিত করা হয়েছে। স্বাধীনতার খলনায়ক পাকিস্তানিদের দোসর জিয়াউর রহমানকে নায়ক বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সাথে ওৎপ্রোতভাবে যুক্ত ছিল।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধু বহু আগেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরিকল্পনা করেছিলেন। ১৯৪৮ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তানের প্রথম স্বাধীনতা দিবসের পূর্বে বঙ্গবন্ধু বিবৃতি দিয়েছিলেন। যেটি তখনকার ইত্তেহাদ পত্রিকায় ছাপানো হয়েছিল, লিপলেট আকারেও প্রকাশ করা হয়েছে। সেই বিবৃতিতে তিনি বলেছিলেন, গত এক বছরে প্রমাণ হয়েছে পাকিস্তান কেন্দ্রিয় সরকার জনগণের সত্যিকার মুক্তির জন্য কিছুই করতে পারেনি। তাই ১৪ আগস্ট আনন্দ উল্লাসের দিন নয়, বরং নিগ্রহের হাত থেকে মুক্তি পাবার শপথ নেওয়ার দিন হিসেবে পালন করার আহ্বান জানিয়েছিলেন বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৫১ সালে কমরেড মণিসিংকে চিঠি লিখেছিলেন আমি পূর্ব বাংলার স্বাধীনতার পরিকল্পনা করছি, আপনারা আমার সাথে থাকবেন কিনা। এনিয়ে তিনি কারাগারে বৈঠকও করেছেন। এটি কমরেড মণিসিংয়ের বক্তব্য। যেটি তৎসময়ে দৈনিক ইত্তেফাকসহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ছাপানো হয়েছে।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখতে পায় অনেক বাঙালি নেতা বাঙালির স্বাধীনতার জন্য চেষ্টা করেছেন। ১৮৩০ সালে তিতুমীর বাঁশের কেল্লা তৈরি করে বৃটিশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে বাঙালির জন্য স্বাধীনতার প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। এর এক শ বছর পর ১৯৩০ সালে মাস্টারদা সূর্যসেন চট্টগ্রামে বৃটিশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে অস্ত্রাগার লুণ্ঠন করে চট্টগ্রামকে ১১দিন স্বাধীন রেখেছিলেন। ১৯৪৪ সালে নেতাজি সুবাস বসু মায়ানমারে ইন্ডিয়ান লিবারেশন আর্মির সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছিলেন তোরা রক্ত দে, আমি স্বাধীনতা দিব। বাঙালি রক্তও দেয়নি স্বাধীনতাও আসেনি। বঙ্গবন্ধু ঘুমন্ত বাঙালি জাতিকে ধীরে ধীরে স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে উজ্জিবীত করেছিলেন। ত্রিশ লক্ষ মানুষ রক্ত দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে এনেছে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চ এমনভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন পাকিস্তানিরা তাকে বিদ্রোহী বলে আখ্যায়িত ও অভিযোগ গঠন করতে পারেনি। তখন পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ঢাকা থেকে রাওয়ালপিন্ডি হেডকোয়ার্টারে রিপোর্ট দিয়েছিল চতুর শেখ মুজিব কার্যত পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করে দিয়েছে। কিন্তু আমাদের দেখে দেখে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কোনো কিছুই করার ছিল না।

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের রাজনীতির পাশাপাশি লেখাপড়াটা সঠিকভাবে চালিয়ে যাবার আহ্বান জানিয়ে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা লেখাপড়াকে গুরুত্ব দেন। রাজনীতি হচ্ছে একটি ব্রত, দেশ এবং সমাজ পরিবর্তনের জন্য, সেটি মাথায় রাখতে হবে। যেকোন ত্যাগ স্বীকারে সবসময় প্রস্তুত থাকবে। রাজনীতি করতে গিয়ে যাতে পড়াশোনার ক্ষতি না হয়।

পাঠকের মতামত: