ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

ঈদের আনন্দ নেই বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে

অনলাইন ডেস্ক :: সারা দেশে আজ উদযাপিত হচ্ছে মুসলমান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। যদিও করোনা মহামারি পরিস্থিতির মধ্যে ঈদ উদযাপনে কিছুটা ভাটা পড়েছে এবার। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে আদায় হবে ঈদের নামাজ। তবে এবারের ঈদ উৎসবে আনন্দ নেই দেশের অন্যতম বড় দল বিএনপি নেতাদের মধ্যে।

দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দীর্ঘদিন নির্বাসিত। কয়েক হাজার নেতাকর্মী কারাগারে। অপরদিকে বৈশ্বিক মহামারি করোনা চলছে। ফলে দেশের সব মানুষের মতো বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যেও ঈদের আনন্দ নেই বললেই চলে। দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত বছরের মার্চে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বাসায় ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে গত ১০ এপ্রিল তিনি করোনা আক্রান্ত হন। ২৭ এপ্রিল তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৩ মে শ্বাসকষ্ট অনুভব হওয়ায় তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। এবারের ঈদ তার হাসপাতালেই কাটছে। অপরদিকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক যুগেরও বেশি সময় ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন। তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান, কন্যা জাইমা রহমান, ছোট ভাই প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিথী ও তার দুই মেয়েও লন্ডনে।

প্রতিবছর দলীয় চেয়ারপারসনের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের মধ্যে দিয়ে ঈদ উদযাপন শুরু হয় দলীয় নেতাকর্মীদের। কিন্তু গত দুই বছর কারাগারে এবং এক বছর বাসায় আইসোলেটেড থাকায় তা হয়নি। এবার হাসপাতালে থাকার কারণে দলীয় নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের সুযোগ থাকছে না। তবে ঈদের নামাজের পরপরই বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে যাবেন দলটির শীর্ষ নেতারা। সন্ধ্যায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে হাসপাতালে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেটিও নির্ভর করছে নেত্রীর শারীরিক অবস্থার ওপরে।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এবারের ঈদ বলতে কোনো কিছু হবে না। তিনি গত ৩১ মার্চ সস্ত্রীক করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ছিলেন। গত ১৩ এপ্রিল করোনামুক্ত হয়ে বাসায় ফিরলেও বেড রেস্টে আছেন। সে কারণে এবার ঈদে নিজ গ্রাম কিংবা অন্য কোথাও যাওয়ার কর্মসূচি নেই। ঈদের দিন চেয়ারপারসনকে দেখতে হাসপাতালে যাবেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা হাসপাতাল সুযোগ দেবে কি-না তার ওপর নির্ভর করে। পুরো বিষয়টি মহাসচিব বলতে পারবেন।

জানা গেছে, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের অনেকে প্রতিবার ঈদের সময় নিজ নিজ এলাকায় চলে যেতেন। এবার করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে অনেকেই ঢাকা ছাড়ছেন না। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকাতেই ঈদ করছেন। উত্তরার একটি মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করার কথা তাঁর। পরে জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত ও হাসপাতালে গিয়ে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করবেন।

সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের আবেদন নাকচ করে দিয়েছে সরকার। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের ভিত্তিতে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের এসংক্রান্ত আবেদন নাকচ করে দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সরকারের এমন সিদ্ধান্তে স্বভাবতই প্রচণ্ড হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয় বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। গত রবিবার দুপুরে অনুমতি না পাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দলটির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে হতাশা নেমে আসে। দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ঈদের আনন্দ না থাকার সবচেয়ে বড় কারণ এটি।

বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, এবছর করোনা পরিস্থিতি ও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কারণে কারও মধ্যে ঈদের আমেজ নেই। ঈদ বলতে যা বুঝায় সেটা এবার হবে না। অধিকাংশ সিনিয়র নেতা ঢাকায় নিজ নিজ বাসার কাছাকাছি মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করবেন।

নামাজের পর মহাসচিবসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে ফাতেহা পাঠ ও দোয়া মোনাজাত করবেন বলেও জানান শায়রুল কবির।

পাঠকের মতামত: