ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজারে একদিনেই ১১ ডেঙ্গু রোগি শনাক্ত

কক্সবাজার প্রতিনিধি ::   কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ৩০ জুলাই ১১ ডেঙ্গু রোগি সনাক্ত করা হয়েছে। আর ১১ জনই ভর্তি রয়েছে হাসপাতালে। এর মধ্যে ৯ জন রোগি কক্সবাজারের বাইরের থেকে তারা এই ডেঙ্গু জীবানু বহন করে নিয়ে আসেন। এই প্রথম কক্সবাজারে বসবাসকারিদের মধ্যে ২ জন ডেঙ্গু রোগি পাওয়া গেছে। এই পর্যন্ত গত ৭ দিনে ২৫ জন রোগি শনাক্ত করা হয়। এর মধ্যে একজন মারা গেছেন, ১২ জন চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছেন আর ১১ জন ভর্তি রয়েছেন। ভর্তিকৃতদের মধ্যে ৯ জন পুরুষ ও ২ জন মহিলা। এদিকে ভুল চিকিৎসা হলে এবং সতর্ক না থাকলে মৃত্যুর ঝুঁকির শংকা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
সিভিল সার্জন ডা: আবদুল মতিন জানান, কক্সবাজারে এক মাস আগে থেকে মশক নিধন অভিযান শুরু করা প্রয়োজন ছিল। এক মাস আগে না হলেও যখন থেকে ঢাকায় ডেঙ্গু বিস্তার শুরু করেছে তখন থেকে কক্সবাজারে মশক নিধন করা হলে কক্সবাজারে ডেঙ্গু বিস্তার না হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। শুধু মশক নিধন অভিযান চালালে ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব নয়। নিয়মিত নালা নর্দমা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা প্রয়োজন। কিন্ত কক্সবাজারে সেটা হয়ে উঠেনি। তাই কে বা কোন প্রতিষ্ঠান নালা নর্দমা পরিস্কার করবে, মশক নিধন স্প্রে করবে তার উপর নির্ভর না করে নিজের রক্ষায় নিজেকে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি সবার ঘর, আঙ্গিনা , আশে পাশের এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখতে আর পানি জমিয়ে না রাখতে সবার দৃষ্টি আকর্ষন করে বলেন, জ¦র হলেই দ্রুত হাসপাতালে এসে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে এটি ডেঙ্গু না অন্য কারনে জ¦র। হাতুড়ি ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নেয়া যাবেনা। আবার নিজে যেন ডাক্তারি না করেন। দিন ও রাতে সব সময় মশারি টাঙ্গাতে হবে। শিশুদের প্রতি বেশি যতœশীল হতে হবে।
সিভিল সার্জন ডা: আবদুল মতিন আরো জানান, কক্সবাজারে যাতে ডেঙ্গু ছড়াতে না পারে সেই জন্য প্রত্যেক ইউনিয়ন, পৌরসভা, উপজেলায় মাইকিং করে সচেতনতা মুলক বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হচ্ছে। ডেঙ্গু নিয়ে আতংক হওয়ার কিছু নেই। তবে সবাইকে সচেতন হবে, থাকতে হবে সতর্ক।
সদর হাসপাতালের ডেঙ্গু টিম এর সদস্য ডা: শামসুদ্দিন জানান, সদর হাসপাতালে গতকাল রাত ১০ টা পর্যন্ত ১১ জন ডেঙ্গু রোগি শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে দুইজন হচ্ছেন কক্সবাজারে বসবাসকারি। একজন উখিয়া থেকে আরেকজন রামু থেকে এসেছেন। এই প্রথম কক্সবাজারে বসবাসকারি দুইজন ডেঙ্গু রোগি পাওয়া গেল। এতে বুঝা যাচ্ছে ডেঙ্গু জীবানু কক্সবাজারেও বিস্তার শুরু করেছে।
জানা যায়, সম্প্রতি রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গু রোগির সংখ্যা বেড়ে গেছে। আতংকগ্রস্থ হয়ে পড়েছে ঢাকায় বসবাসকারিরা। শুধু ঢাকা নয় বিভিন্ন জেলায় এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী প্রতি ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে ১৪শ থেকে ১৬শ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এমন কি হবিগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। মারা যায় আরো দুইজন ডাক্তার, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীও মারা যা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপসচিবের স্ত্রী মারা গেছে । গতকাল পর্যন্ত সারাদেশে ১৪ জন মারা গেছে। সবাই এখন ডেঙ্গু নিয়ে শংকিত। একইভাবে কক্সবাজারবাসী ডেঙ্গু নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠেছে। কক্সবাজারে ডেঙ্গুর কি পরিস্থিতি সবাই জানার চেষ্টা করছেন।
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, জ¦র হলে দ্রুত রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে। হাতুড়ি ডাক্তারের কাছে যাওয়া যাবেনা। প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য ঔষুধ দিলে রোগির ভয়াবহতা বেড়ে যাবে। এমন কি মল ত্যাগের সময় রক্ত যেতে পারে। তাই সতর্ক থাকতে সবাইকে।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার নোবেল কুমার বড়ুয়া জানান, ডেঙ্গু রোগির কারনে সবার মাঝে ডেঙ্গু রোগ ছড়িয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। কারণ ডেঙ্গু রোগিকে কোন মশা কামড়ালে সেই মশা অন্যদের কামড়ালে তাদের অবশ্যই ডেঙ্গু রোগ হবে। সেই জন্য আক্রান্ত রোগিদের অবশ্যই মশারির ভেতর থাকতে হবে। যাতে তাদের কোন মশা কামড় দিতে না পারে। তাদের যে মশা কামড় দেবে সেই মশা তখন ডেঙ্গু জীবানুবাহী মশাই পরিণত হবে। শুধু ডেঙ্গু রোগি মশারির ভিতর থাকলে হবেনা, সব মানুষকে রাতে হোক বা দিনে হোক মশারি টাঙ্গিয়ে ঘুমাতে হবে। তিনি বলেন, টবে, বালতিসহ কোন পাত্রে পানি জমা রাখা যাবেনা। জমে থাকা পানিতে এসব মশার উৎপত্তি হয়। বাড়ির আশে পাশে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। নালা নর্দমায় ময়লা আবর্জনার স্তুপ রাখা যাবেনা। কারো জ¦র হলে আতংকিত না হয়ে দ্রুত চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষুধ সেবন করা যাবেনা। বিশেষ করে ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম জাতীয় ব্যথার ঔষুধ খাওয়া যাবেনা। ভুল চিকিৎসায় এবং সতর্ক না থাকলে ডেঙ্গু রোগির মৃত্যু শংকা রয়েছে।
উল্লেখ্য, শনিবার ২৭ জুলাই বেলা দু’টায় কক্সবাজার সদর হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদে একইদিন বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্রী কক্সবাজারের মেয়ে উখিনো নুশাং শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এর পর ২৮ জুলাই ডেঙ্গু মনিটিরিং টিম গঠন করা হয়।

পাঠকের মতামত: