অনলাইন ডেস্ক :: কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ঈদের ছুটিতে ভিড় করেছেন পর্যটকরা। দূর-দুরান্ত থেকে স্বজন বা বন্ধুদের নিয়ে কিছুটা সময় আনন্দে কাটাতে আসছেন নানা বয়সী মানুষ। তাদের কেউ কেউ সমুদ্রে ভিজতে ব্যস্ত। কেউ আবার সৈকতে দলবেঁধে হাঁটছেন বা খেলছেন । অনেকেই গা এলিয়ে বিচ চেয়ারে বসে সমুদ্রের ঢেউ আর মনোরম দৃশ্য উপভোগ করছেন।
কিন্তু এসব দৃশ্যের মাঝে এই প্রতিবেদকের চোখ হঠাৎ করেই আটকে যায় কতগুলো প্রাইভেট কার আর জিপের ওপর। একেবারে সৈকত ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে বেশ কয়েকটা গাড়ি। যেন এক্ষুনি তা নেমে যাবে সমুদ্র সৈকতে। অথচ পাশেই টুরিস্ট পুলিশ। এসব গাড়ি সরাতে তাদের মধ্যে কোনো তৎপরতাই নেই।
গত তিনদিনে ঈদে পর্যটকদের ভিড়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে এমন দৃশ্য প্রায়ই দেখা গেছে।
এসব গাড়ির ভিড়ে চোখে পড়ে পতাকাবাহী একটি পাজেরো জিপ। এই জিপের চালক গাড়িটি চট্টগ্রামের এক মন্ত্রীর বলে দাবি করেন। গাড়ির ভেতর থেকে সমুদ্রের ঢেউয়ে পা ভেজাচ্ছিলেন কয়েকজন। তারাও মন্ত্রী পরিবারের সদস্য বলে দাবি করেন ওই চালক। পাজেরো জিপের নম্বর (ঢাকা মেট্রো ঘ ১১-২০০৭)।
বিআরটিএ-তে এই গাড়ি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত মাসে এই গাড়িটির ফিটনেস মেয়াদ শেষ হয়েছে।
এ বিষয়ে টুরিস্ট পুলিশ বক্স থেকে জানানো হয়, পাজেরোটির বিষয়ে তারা কিছু জানেন না। কিন্তু তারা এরমধ্যে কয়েকবার মাইকিং করে সৈকত থেকে গাড়ি সরিয়ে নিতে সবাইকে সতর্ক করেছেন।
যারা এ নির্দেশনা মানছেন না তাদের ব্যাপারে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে চাইলে সে বিষয়ে কোনো উত্তর দেননি দায়িত্বরত টুরিস্ট পুলিশ সদস্যরা।
স্থানীয়রা জানান, ঘটনাস্থল সাইমন হোটেলের সামনে দিয়ে সৈকত লাগোয়া সড়ক দিয়ে অস্থায়ীভাবে যান চলাচলের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কক্সবাজার শহর থেকে মূল মেরিন ড্রাইভে উঠতে যে সড়কটি ব্যবহৃত হয় তার মেরামত কাজ চলায় আপাতত সৈকত লাগোয়া এই পথটি গাড়ি চলাচলের জন্য ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। আর এই সুযোগের অপব্যবহার করে অনেকে গাড়িই সৈকতের পর্যটক সমাগম এর মধ্যে ঢুকে পড়ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।
ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারে ঘুরতে আসা পর্যটকরা জানান, তারা কয়েকটি পাজেরো জিপ ও প্রাইভেটকারকে সমুদ্র সৈকতে নেমে যেতে দেখেছেন। যা তাদের খানিকটা অবাক করেছে।
তাদের অভিযোগ, এসব যানবাহনের চলাচলের কারণে স্বস্তিতে বিচ ধরে হাঁটাচলা করতে পারছেন না তারা।
সিলেট থেকে বন্ধুদের নিয়ে কক্সবাজারে ঘুরতে আসা মাসুম আশরাফ বলেন, হঠাৎ বিচ এর মধ্যে গাড়ি দেখে ভয় লাগছে।
মাসুম আশরাফ জানান, কক্সবাজারে তিনি বহুবার এসেছেন কিন্তু এভাবে প্রাইভেটকার বাজারে নিয়ে সরাসরি সমুদ্র সৈকতে নেমে যাওয়ার দৃশ্য দেখেননি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিচে উৎসুকদের গাড়ি যন্ত্রণা থামাতে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা দেখতে পাননি।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, সমুদ্র সৈকত থেকে একটি প্রাইভেটকার ও একটি মোটরসাইকেল জব্দ করেছেন তারা। সৈকতে যানবাহন চলাচলের বিষয়ে পুলিশের নজরদারি রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য যান্ত্রিক যান নিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ। এ কারণে সরাসরি সমুদ্র সৈকতে যান চলাচলের অনুমতি দেয় না কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। এরপরেও এই ধরনের ঘটনা সৈকতের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে বলে মনে করছেন দর্শনার্থীরা।
পাঠকের মতামত: