মনির আহমদ, কক্সবাজার ::
চকরিয়ায় বালুদস্যু সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে মাতামুহুরী নদী ও চিরিঙ্গা ব্রীজ। রাষ্ট্রীয় ও জনস্বার্থকে জলাঞ্জলী দিয়ে সংঘবদ্ধ প্রভাবশালী বালুদস্যু সিন্ডিকেট করে নদী ড্রেজিং এর নামে বালু উত্তোলন পুর্বক বিক্রী করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি টাকা। মাতামুহুরী ব্রীজের তলদেশে দখল করে নদীর গতিপথ বালির স্তুপ করে অর্ধবর্গ কিলোমিটারের বালির পয়েন্ট অভিশাপের কারন।দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়া হলে বর্ষা মৌসুমে জলমগ্ন হয়ে বড় ধরনের মাশুল গুনতে হবে চকরিয়া পৌরসভা, লক্ষারচর, কাকারা, মানিকপুর-সুরাজপুর ও ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের এক কোটি বাসিন্দাকে।
বর্ষা মৌসুম আসন্ন। এরি মাঝে চলছে বালুদস্যুতা। কতিপয় লোভী আওয়ামীলীগ নেতা, ঘুষখোর আমলা ও তাদের পোষা চাটুকার সাংবাদিকের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদদে চলছে বালু ব্যবসা। মদদ দিয়ে মোটা অংকের টাকার ভাগ পাচ্ছে প্রশাসনের কয়েকজন কর্তাব্যক্তি। কেউ প্রতিবাদ করলেই সুবিধাভোগীদের সংঘবদ্ধ আক্রমনের শিকার হয়ে পিছু হটতে বাধ্য হতে হয় এমনটি বললেন কয়েকজন সচেতন এলাকাবাসী।
সরেজমিনে দেখা যায়, একদিকে মাতামুহুরী নদী খনন (ড্রেজিং) এর নামে সরকারের কোটি কোটি টাকা লুটপাট, অন্যদিকে নদীর একাধিক পয়েন্টে বালু উত্তোলন করে বিক্রী করে কোটি কোটি টাকা আয় করছে একটি সংঘবদ্ধ মহল। একইভাবে রেল লাইনে বালু বিক্রি করতে গিয়ে ডাম্পার-ট্রাকের (১০ চাকার লরি- ভারি যান) পরিবহনে নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়ক ও বেড়িবাঁধ।
অভিযোগ উঠেছে, মাতামুহুরী নদীর চিরিংগা পয়েন্টে ৬ লেন বিশিষ্ট ব্রীজ নির্মাণ করতে গিয়ে বর্তমান ব্রীজের নীচে পানি চলাচলের অধিকাংশ নদীপথ দখল করে বালুর ষ্টকের পাশাপাশি নির্মান সামগ্রীর স্টক তৈরী করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। নদীর দুই তৃতীয়াংশ গতিপথ বন্ধ করে নির্মান সামগ্রীর ষ্টপিজ করায় আসন্ন বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা বানের পানি চলাচল নিয়ে চরম হুমকিতে পড়েছেন চকরিয়া পৌরশহর সহ উজানের ৪ ইউনিয়নের জানমাল সহ বাসিন্দারা। বিশেষ করে মাতামুহুরী ব্রীজের নীচে পানি প্রতিবন্ধকতার কারণে পৌরসভা, কাকারা, সুরাজপুর মানিকপুর, লক্ষ্যারচর ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন বন্যায় তলিয়ে গিয়ে মহামারি আকার ধারণ করবে।
সচেতন স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ক্ষতির বিষয়টি নজরে আসলেও রহস্যজনক কারণে দেখেও না দেখার ভান ধরেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পানি প্রতিবন্ধকতার কারণে বন্যার কবল থেকে রক্ষায় এসব ইউনিয়নের বিক্ষুদ্ধ লোকজন ফুসে উঠতে শুরু করেছে। বৃষ্টির সাথে সাথেই ঘটে যেতে পারে অনাকাঙ্খিত ঘটনা।
বিষয়টি অবহিতসহ চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরুদ্দিন মুহাম্মদ শিবলী নোমান এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, মাতামুহুরী ব্রীজের নীচে নির্মিত স্টক অফিসের কারণে বিশাল আয়তনের নদী পথ প্রতিবন্ধকতার বিষয়টি জরুরী ভিত্তিতে দেখা হবে। এজন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরাসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীকে বিশেষ নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। আসন্ন বন্যার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কিছু অংশের স্থাপনা অপসারণ করা হতে পারে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার “সয়লাব” জানান, প্রশাসনের সাথে চুক্তি করেই বিক্রী হচ্ছে বালু। মিডিয়া কন্ট্রোলের জন্য দ্বায়ীত্ব দেয়া হয়েছে চকরিয়ার দুই সাংবাদিককে। যে কোন প্রয়োজনে ওই সাংবাদিকদের সাথে যোগাযোগ করুন। কয়েকজন সাংবাদিক ২৬ মার্চ এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির সাথে মুঠোফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
সচেতন মহলের দাবী বিষয়টি দ্রুত উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হউক অন্যথায় বড় ধরনের মাশুল গুনতে হবে চকরিয়া পৌরসভা, লক্ষারচর, কাকারা, মানিকপুর-সুরাজপুর ও ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের এক কোটি বাসিন্দাকে।
পাঠকের মতামত: